বেসরকারি ভাবে উদ্যোগটা আগেই ছিল। এ বার বয়স্কদের চিকিৎসায় প্রতি পঞ্চায়েত এলাকায় মাসে অন্তত একটি করে স্বাস্থ্য শিবির করতে তৎপর হল স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যে রাজ্য থেকে এই নির্দেশ এসে পৌঁছেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। বুধবার কেশপুরের মোহবনি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বয়স্কদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির শুরু হয়েছে। এ দিন স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান, কেশপুর কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি চিত্ত গড়াই প্রমুখ। আশপাশের এলাকার বয়স্করা শিবিরে আসেন। ক্রমে বিভিন্ন ব্লকে এই শিবির হবে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জাতীয় সামাজিক সহায়তা প্রকল্পের অধীনে এই কর্মসূচি। প্রবীণেরা যাতে সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারেন, সেটাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হবে। এর ফলে প্রচুর বয়স্ক মানুষ উপকৃত হবেন।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, শিবির হবে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে। আশপাশের কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বয়স্ক মানুষদের নিয়েই এক-একটি শিবিরের আয়োজন করা হবে। শিবিরে উপস্থিত চিকিৎসকেরা যদি মনে করেন, চিকিৎসার জন্য কাউকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা প্রয়োজন, তা-ও করতে পারেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জনসংখ্যা ৬০ লক্ষের কাছাকাছি। এর মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ বয়স্ক। বয়স ৬০-এর বেশি। অর্থাৎ, জেলায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৮০ হাজারের কাছাকাছি। ওই কর্মসূচির মাধ্যমে এঁদের সকলের চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, শিবিরের কথা স্থানীয় মানুষ জানবেন কী করে? মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশবাবু বলেন, “এ জন্য পঞ্চায়েতস্তরে প্রচার করা হচ্ছে।” এই কর্মসূচির নোডাল অফিসার তথা জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানও বলেন, “স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ হচ্ছে। নানা ভাবে প্রচার চলছে। কোথায় কবে শিবির হবে, তা আগে থেকেই স্থানীয়দের জানানো হচ্ছে। ব্যানারও রাখা হবে।” |
শুরু হল কেশপুর দিয়ে |
• পশ্চিম মেদিনীপুরে জনসংখ্যা ৬০ লক্ষের কাছাকাছি। এর প্রায় ৮ শতাংশ ষাটোর্ধ্ব। অর্থাৎ শিবির হলে উপকৃত হবেন প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার বয়স্ক মানুষ।
• গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রতি মাসে অন্তত একটি স্বাস্থ্য শিবির হবে।
• শিবিরে সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে রক্তচাপ নির্ণয়, সুগার নির্ণয় হবে। থাকবে ইসিজি, এক্সরে এবং চক্ষু পরীক্ষার ব্যবস্থাও।
• চিকিৎসকেরা মনে করলে কাউকে হাসপাতালেও পাঠাতে পারেন।
• শিবিরে নিখরচায় ওষুধও মিলবে। |
|
‘পিছিয়ে পড়া’ জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৯টি ব্লকের মধ্যে ১১টি ব্লক রয়েছে জঙ্গলমহলে। জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মাঝেমধ্যে নানা অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ‘দুর্বল’। ফলে, রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকজনদের নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের। চিকিৎসার জন্য অনেকেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মেদিনীপুরে আসেন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন। এ বার গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে প্রতি মাসে শুধুমাত্র বয়স্কদের জন্য অন্তত একটি করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির হলে অনেকে উপকৃত হবেন বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের এক জেলা আধিকারিক বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে আমরা এলাকার প্রবীণ মানুষদের নামের তালিকা পাচ্ছি। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাঁদের কাছে যাবেন। শিবিরের কথা জানাবেন।”
বয়স ৬০ পেরোলেই শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারও রক্তচাপ কমে যায়, কারও সুগার বাড়ে। শিবিরে ঠিক কী কী পরীক্ষানিরীক্ষা হবে? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে যা যা পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়, তার সবই হবে। পাশাপাশি, রক্তচাপ মাপা হবে। সুগার নির্ণয় করা হবে। যদি প্রয়োজন মনে হয়, তাহলে ইসিজি, এক্স-রে করা হবে। সঙ্গে চক্ষু পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। বয়স হলে চোখের বিভিন্ন সমস্যা হয়। এমনিতেই জেলার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভীড় থাকে। সেখানে বয়স্কদের জন্য এই শিবির হলে অনান্য রোগীদের সমস্যা হবে না? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “সামান্য কিছু সমস্যা হতে পারে। তা যাতে না- হয়, সেই জন্য জেলা থেকে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, অনান্য কাজ স্বাভাবিক রেখে শিবির করতে হবে। বয়স্কদের জন্য এই কর্মসূচি দুপুরে হবে। তাহলে আর অনান্য রোগীরা সমস্যায় পড়বেন না।” কী ভাবে শিবিরের আয়োজন করতে হবে, সেই সম্পর্কিত এক নির্দেশিকা সোমবারই জেলার সব বিএমওএইচদের কাছে পাঠিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। চার পাতার ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ঠিক কী ভাবে এই কর্মসূচি এগোবে। কর্মসূচির উদ্দেশ্যই বা কী। কেশপুরে আজ, বুধবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই
শিবির শুরু হবে। অন্য ব্লকেও ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কর্মসূচি শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিক কত বয়স্ক মানুষ এই কর্মসূচির আওতায় আসেন, সেটাই দেখার।
|