দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলায় ৯টি হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি করার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। এই তালিকায় রয়েছে হুগলির তারকেশ্বর গ্রামীণ এবং আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল। হাসপাতালের পরিষেবার উন্নতি হলে হুগলি তো বটেই, সংলগ্ন বর্ধমান, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশের মানুষও উপকৃত হবেন।
দিন কয়েক আগে সরকারের তরফে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথির স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশিকা জেলায় পাঠানো হয়েছে। ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, হাসপাতালগুলি ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট করার কথা ভাবা হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরের জমি এবং তার নকশা সম্পর্কে বিশদে জানতে চাওয়া হয়েছে। হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডল বলেন, “ওই দু’টি হাসপাতালের জমি সম্পর্কে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানতে চেয়েছে। সুপার স্পেশ্যালিটি হলে যে বহু মানুষ উপকৃত হবেন, তা বলাইবাহুল্য। এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। তবে আমরা জেনেছি, দু’জায়গাতেই পর্যাপ্ত জমি আছে।”
তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতাল রেল স্টেশনের কাছেই পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যপুরে অবস্থিত। হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রর খবর, বর্তমানে হাসপাতালটি ৬০ শয্যাবিশিষ্ট। তারকেশ্বর ব্লক এবং পার্শ্ববর্তী নানা জায়গা থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। সাধারণ বিভাগ ছাড়াও দাঁত, স্ত্রী-রোগ, চোখ-সহ কয়েকটি বিভাগ এখানে রয়েছে। কিন্তু অত রোগীর ভিড় সামাল দেওয়ার মতো পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, গড়ে চারশো মানুষ প্রতিদিন আউটডোরে আসেন। তার উপরে আবার অন্তর্বিভাগের চাপ। কিন্তু চিকিৎসক মাত্র পাঁচ জন। অন্যান্য কর্মীও প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সমস্যা একটু জটিল হলেই পত্রপাঠ অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করাই এখানে দস্তুর। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে ছুটে যেতে হয় শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া বা আরামবাগে। যাতায়াতের হ্যাপা এড়াতে অনেকে নার্সিংহোমে চলে যান। কিন্তু গরিবগুর্বো মানুষ বিপদে পড়েন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, উন্নীতকরণ হলে অর্থোপেডিক, নিউরো, ইএনটি-সহ বিভিন্ন বিভাগ খোলা হবে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মী নিয়োগ করা হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের জন্য এই সমস্ত হাসপাতালগুলির এক থেকে দেড় একর জমি থাকা আবশ্যক। তারকেশ্বরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌরভ শীল জানান, ওই হাসপাতালে ৫ একর জমি রয়েছে। রেল এবং সড়কপথে দু’ভাবেই যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে এখানে। তারকেশ্বরের তৃণমূল পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত বলেন, “এই হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বহু দিনের দাবি ছিল। আগের সরকারের আমলে সেই দাবি পূরণ হয়নি। এ বার মানুষের সেই খেদ মিটতে চলেছে।”
আরামবাগ হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা আড়াইশো। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতিদিন গড়ে অন্তত চারশো রোগী ভর্তি থাকেন। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় হুগলি ছাড়াও বর্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হাওড়ার একাংশের লোক এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। বছর কয়েক আগে এখানে অসুস্থ সদ্যোজাতদের চিকিৎসার ইউনিট (এসএনসিইউ) হয়েছে। ন্যায্য মূল্যে ওষুধের দোকান চালু হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ রোগীর চাপ সামাল দেওয়ার মতো চিকিৎসক নেই। প্রয়োজনের তুলনায় স্বাস্থ্যকর্মী বা প্যাথোলজি বিভাগের টেকনিশিয়ান সবই অপ্রতুল। চিকিৎসকদের আশা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হলে হলে সেই সমস্যা মিটবে।
হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর একটি চিঠি পাঠিয়েছে। তাতে জানতে চাওয়া হয়, দেড় একর জমি আছে কিনা। ওই পরিমাণ জমি থাকলে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে। আমি ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি যে ১০ একরেরও বেশি জমি আছে।” এলাকার বাসিন্দা শম্ভু ঘোষ বলেন, “পরিকাঠামোর উন্নতি হলে সেটা খুবই ভাল। কিন্তু আগে দরকার চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো। না হলে তো যন্ত্রপাতি পড়ে নষ্ট হবে।” |
সমস্যা যেখানে |
• চিকিৎসক কম।
• রোগীর ভিড় প্রচুর।
• শয্যা সংখ্যা অপ্রতুল।
• সমস্যা একটু জটিল হলেই অন্যত্র রেফার করার প্রবণতা। |
সমাধান সূত্র |
• চিকিৎসক-নার্সের সংখ্যা অনেকটাই বাড়বে।
• থাকবেন বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
• হাসপাতালগুলি হবে ৩০০ শয্যার।
• কমবে রেফার-সংখ্যা। |
|