ব্রিগেডে তৃণমূলের সভায় যোগ দিয়ে ফেরার ৮ দিনের মাথায় ফের রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের কণ্ঠে। বুধবার দার্জিলিঙের জামুনিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভার পরে গুরুঙ্গ পাহাড়ে নানা সম্প্রদায়ের জন্য বোর্ড গঠনের সমালোচনা করেন। জিটিএ প্রধান বলেন, “প্রথমে লেপচা উন্নয়ন বোর্ড হয়েছে। পরে তামাঙ্গদের দাবি মেনে বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আরও বোর্ডের দাবি উঠেছে।” গুরুঙ্গের অভিযোগ, পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতি করছে সরকার।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গুরুঙ্গের সুসম্পর্কই দেখা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের সময় বিভিন্ন সম্প্রদায় আলাদা করে উন্নয়ন বোর্ড গঠনের দাবি জানান মমতার কাছে। এমনকী গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ের তরফেও পাহাড়ে উন্নয়ন বোর্ড গঠনের দাবি তোলা হয়েছিল। মোর্চা প্রধান তখন কোনও আপত্তি করেননি। তার পরে তিনি কলকাতায় ব্রিগেডে তৃণমূলের সভাতেও হাজির ছিলেন।
কিন্তু কয়েক দিন পরেই গুরুঙ্গ এ দিন বললেন, “জিটিএ গড়া হয়েছে। তার পরে নানা বোর্ড গড়া হলে জিটিএ-এর কাজটা কী থাকবে? চুক্তি বাতিল করে দিলেই তো হয়। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। তা হলে তো সব বোর্ডই বাতিল হয়ে যেতে পারে।”
কেন গুরুঙ্গ হঠাৎ সুর বদলালেন? মোর্চার অন্দরের খবর, লোকসভা ভোটে দার্জিলিং কেন্দ্রে কে প্রার্থী হবেন, সে ব্যাপারে তৃণমূলই শেষ কথা বলতে চাইছে। এ দিন মোর্চার বৈঠকে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানেই কয়েক জন কট্টরপন্থী নেতা দাবি করেন, নানা বোর্ড গঠনের কথা ওঠায় পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায় তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছে। সে ক্ষেত্রে তৃণমূল দলীয় প্রতীকে দার্জিলিং লোকসভা আসনের প্রার্থী ঘোষণা করে দিলে মোর্চাকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। তখনই ঠিক হয়, তাঁরা বোর্ড গঠনের বিরোধিতা করবেন। মোর্চা নেতাদের ধারণা, তাতে পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে যেমন মোর্চার প্রতি আনুগত্য বাড়ানোর বার্তা দেওয়া যাবে, তেমনই প্রার্থী ঘোষণার আগে তৃণমূল যাতে মোর্চার মতামতকে গুরুত্ব দেয়, সেই চাপও তৈরি হবে। এ দিন গুরুঙ্গ বলেন, “পাহাড়ের মানুষ যে আবেগ নিয়ে মোর্চায় সামিল হয়েছেন, তা ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে নানা ঘোষণা হচ্ছে। সকলে সতর্ক থাকুন।” গুরুঙ্গ বলেন, “লোকসভার প্রার্থী নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হলে তা পরে ঘোষণা করা হবে। এখনও সেই সময় আসেনি। তবে কেন্দ্র বা রাজ্যে যাঁরা ক্ষমতায়, এই নিয়ে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই।”
এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে সভায় এক জন নেতা অনেক কিছুই বলতে পারেন। খোঁজ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনার পরে মন্তব্য করব।”
এ দিন ফের জিটিএ চিফ পদে বসার যুক্তিও দিয়েছেন গুরুঙ্গ। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি এবং মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করায় ফের এই পদে বসেছি। তা হলে ফের চুক্তি মেনে কাজের জন্য আমাকে কেন লড়াই করতে হবে?” |