|
|
|
|
জোড়া অস্বস্তি সামাল দিতে উপেক্ষাই হাতিয়ার তৃণমূলের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড সভার পরে দ্বিবিধ অস্বস্তি তৃণমূল শিবিরে। এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সম্পর্কে মোদীর নরম সুরে বিজেপি-র সঙ্গে জোট জল্পনা উস্কে সংখ্যালঘু ভোটে ভাটা পড়ার আশঙ্কা। দুই, রাজ্যের সব আসনে বিজেপি প্রার্থী দিলে ভোট কাটাকাটিতে দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি হওয়ার ভয়। পরিস্থিতি সামলাতে মোদীদের নরম মনোভাব এবং তাঁদের ব্রিগেড সমাবেশকে গুরুত্ব না-দেওয়ার কৌশলই নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
এ দিন ব্রিগেডে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মমতা সম্পর্কে বিশেষ কড়া কথা না-বলায় বিজেপি-তৃণমূল জোটের সম্ভাবনা নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী নেতারা। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “ভোটের পরে মোদী তৃণমূলের জন্য রাস্তা খোলা রাখতে চাইছেন। তাই তিনি তৃণমূলের কোনও সমালোচনা করেননি। নারী নির্যাতন নিয়ে একটা কথাও বলেননি।” প্রায় একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল সম্পর্কে ওরা (বিজেপি) নরম। ভোটের
পরে যাতে তৃণমূলের সমর্থন পেতে অসুবিধা না হয়।”
দুই বিরোধীর এই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল সূত্রের মন্তব্য, “এ সব পাগলের প্রলাপ! এ নিয়ে আমরা মাথা ঘামাতে যাব কেন?” কিন্তু মোদী যে ভাবে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যের উন্নয়নের কথা বলেছেন, আর্থিক সমস্যা নিয়ে রাজ্যের দাবিকে যে ভাবে সমর্থন জানিয়েছেন রাজনাথ সে সম্পর্কে তৃণমূলের কী বক্তব্য? তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য,“আমাদের কারও সার্টিফিকেট দরকার নেই। বাংলা নিজের দাবিতে লড়াই করবে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার আত্মসম্মান ফিরিয়ে আনা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছেন।”
বস্তুত মোদীর সমালোচনায় নেমে তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী তকমা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ফিরহাদ। তাঁর মন্তব্য, “যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে, তাদের আবার প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কী!” বিজেপি-র গাঁধী মূর্তির পাদদেশে সভা করে লোক আনার ক্ষমতা নেই বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
বিরোধী দলের অনেক নেতার ব্যাখ্যা, ভোটের মুখে মোদীর নরম মনোভাব এবং বিজেপি-র সঙ্গে জোটের জল্পনা তাদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে পারে বুঝেই সরব হয়েছে তৃণমূল। এ রাজ্যের ভোটদাতাদের ২৬ শতাংশ সংখ্যালঘু। গত বিধানসভা ভোটে তার বড় অংশই তৃণমূলকে ভোট দিয়েছিলেন। লোকসভা ভোটে তাঁদের হারানোর ঝুঁকি স্বাভাবিক ভাবেই নিতে চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষের পাশাপাশি এ দিন ব্রিগেডে রাজ্যের উন্নয়ন প্রসঙ্গে যে সব প্রশ্ন তুলেছেন মোদী, দলগত ভাবেও তার জবাব দিয়েছে তৃণমূল। দলীয় ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘গুজরাতের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে বেশ কিছু তথ্যগত ভ্রান্তি রয়েছে।’ কী সেই ভ্রান্তি? মোদী যেমন বলেছেন, এ রাজ্যে মাত্র ৬০ শতাংশ মেয়েদের স্কুলে শৌচালয় রয়েছে। তৃণমূলের জবাব: ‘আজই পর্যালোচনা কমিটির যে বৈঠক হয়েছে, তাতে পেশ করা রিপোর্ট বলছে, শৌচালয় আছে রাজ্যের ৯৮ শতাংশ স্কুলেই।’ মোদী আরও বলেছেন, রাজ্যের ৩৫ শতাংশ স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তৃণমূলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘অধিকাংশ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলেই বিদ্যুৎ আছে।... তা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গই দেশের একমাত্র রাজ্য যার বিদ্যুৎ ব্যাঙ্ক রয়েছে।’
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মোদীকে যাঁরা তথ্য সরবরাহ করেছেন, তাঁদের রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। এ ব্যাপারে সতর্ক না-হলে ভবিষ্যতে আরও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হবে মোদীকে।
বিজেপি-র সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নিয়ে বিরোধীদের প্রচার যদি তৃণমূলের চিন্তার একটা কারণ হয়, অন্য কারণ তা হলে রাজ্যের সব আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে বলে মোদী-রাজনাথ-রাহুল সিংহের ঘোষণা। দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “ব্রিগেডে সভা করে বিজেপি বুঝিয়েছে যে, তার শক্তি আছে। ভোটে তারা জিতবে কিনা জানি না। তবে কয়েকটি আসনে তাদের প্রার্থীরা আমাদের ভোট কেটে সমস্যায় ফেলতে পারে।”
এই অবস্থায় বিজেপি-র ব্রিগেড সমাবেশকে খাটো করে দেখানো এবং মোদী-রাজনাথের কথাকে গুরুত্ব না দেওয়াই আপাতত তৃণমূলের কৌশল। |
|
|
|
|
|