|
|
|
|
মমতার আশায় ব্রিগেডে সুর নরম মোদীদের
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি
৫ ফেব্রুয়ারি |
ব্রিগেডে সমাবেশের তিন-চার দিন আগে নরেন্দ্র মোদীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কলকাতায় গিয়ে এ বারও কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে নরম মনোভাব নেবেন? নাকি এ বার যুদ্ধং দেহি?
জবাবে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হাসতে হাসতেই বলেন, বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের কোনও প্রাক্ নির্বাচনী সমঝোতা নেই। বিজেপি-কে সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে তুলোধোনাও করছে তৃণমূল। তা হলে বিজেপি-ই বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলবে না কেন?
মোদী যেটা বোঝাতে চেয়েছিলেন, সেটা হল এনডিএ-র সম্প্রসারণের আশায় বুক বেঁধে যদি সম্ভাব্য শরিক নেতা-নেত্রীদের মন রেখে চলতে হয়, তা হলে দক্ষিণ থেকে পূর্ব ভারত এক বিরাট এলাকায় তাঁকে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হবে। লোকসভার যুদ্ধে নেমে সেটা কী ভাবে সম্ভব! আসলে ভোটের আগে একলা চলাই সঙ্ঘ পরিবারের রণনীতি। শরিক সন্ধান যা হবে, ভোটের পরে আসন সংখ্যা দেখে। এবং সে ক্ষেত্রে বিজেপি-র আসন সংখ্যা যতটা বাড়ানো যাবে, শরিক পাওয়াও তত সহজ হবে। সহজ হবে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখাও। আর যে হেতু এনডিএ সামলাতে গিয়ে বিজেপি-র ভোট কমেছে, তাই এখন স্থানীয় রাজনীতির স্বার্থে রাজ্য নেতৃত্বকে উৎসাহিত করাই উচিত কাজ।
কিন্তু এর পরেও আজ ব্রিগেডে মোদী বা রাজনাথ সিংহ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ততটা সরব হননি, যতটা রাহুল সিংহরা আশা করেছিলেন। তাঁদের বক্তৃতা শুনে অনেকেরই মনে হয়েছে, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও মমতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। বস্তুত, বিজেপি সূত্রও বলছে, মোদী, রাজনাথ, অরুণ জেটলির মতো নেতারা মনে করেন, মমতা এনডিএ-তে আসুন বা না-আসুন, তাঁকে দুর্বল করার চেষ্টা ভুল রণকৌশল। সেই নিরিখে এত দিন জেলায় জেলায় মমতার বিরুদ্ধে সরব বরুণ গাঁধীর আজ বক্তৃতা না-দেওয়াটা তাৎপর্যপূর্ণ।
মোদী কোনও কাজই না ভেবে করেন না। পশ্চিমবঙ্গে আসার আগেও এই রাজ্যের বিষয়গুলি নিয়ে তিনি যথেষ্ট গবেষণা করেছেন। তাঁর বক্তৃতায় মূল আক্রমণের লক্ষ্য রেখেছেন কংগ্রেসকে। জাতীয় স্তরে যার বিরুদ্ধে তাঁর প্রধান লড়াই। পটভূমি কলকাতা হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য দিল্লি। তাই আজ তাঁর বক্তৃতার মূল সুর ছিল, তাঁর সম্ভাব্য দিল্লি বিজয়ের জন্য বাংলার সাহায্য প্রার্থনা। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, “মনে রাখবেন মোদী পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি করার জন্য ব্রিগেডে যাননি। তিনি দিল্লির রাজনীতির ঘুঁটি সাজাতে গিয়েছেন।”
রাজনাথ-সহ অন্য বিজেপি নেতারা এটাও বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আসন পেলে ভাল। কিন্তু বিজেপি ভোট কাটায় যদি সিপিএমের জয় নিশ্চিত হয়, তা হলে সেটা বিজেপি-রই লোকসান। কেননা, সিপিএমের জয় সব সময় ইউপিএ-র ঝুলিতে যাবে, এনডিএ-র ঝুলিতে আসবে না। মমতাকে বাদ দিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার চেষ্টা করছে, এমন সম্ভাবনাও খারজি করে দিচ্ছেন না জেটলিরা। তাঁদের ধারণা, সে ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেও সিপিএম-কে আটকাতে মমতা এনডিএ-কে বাইরে থেকে ইস্যুভিত্তিক সমর্থন দিতে পারেন।
তবে তেমন সম্ভাবনা খারিজ করে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, মমতা কিছুতেই মোদীর সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হবেন না। তাঁর লক্ষ্য, লোকসভায় যত বেশি সম্ভব আসন দখল করা এবং সেই জোরে কেন্দ্রে একটি জোট সরকার গড়া, যেখানে মোদীও থাকবেন না, রাহুল গাঁধীও থাকবেন না। সিপিএম তো নয়ই।
আর সেই কারণে কলকাতায় এসে মোদী তাঁর সম্পর্কে নরম মনোভাব নিলেন কি নিলেন না, তা নিয়ে হেলদোল দেখাচ্ছেন না তৃণমূল নেত্রী। |
|
|
|
|
|