মানরক্ষার ব্রিগেডে বিজেপি-র মঞ্চে এ দিন চমক হিসাবেই আবির্ভূত হয়েছিলেন সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী এবং জাদুকর পি সি সরকার (জুনিয়র)! প্রথম জন কয়েক দিন আগেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। দ্বিতীয় জন শীঘ্রই যোগ দেবেন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। বাপ্পির অবশ্য ব্রিগেডে আসার কথা ছিল না। মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত বদল এবং এ দিন মোদীর হয়ে দু’কলি গান জনতার জন্য পরিবেশন!
অটলবিহারী বাজপেয়ীকে সামনে রেখে বিজেপি আগেও ব্রিগেড সমাবেশ করেছে। কিন্তু সে এক যুগেরও বেশি আগেকার কথা! শাসক তৃণমূলের ভরা ব্রিগেড এবং ক’দিন পরেই বামফ্রন্টের সমাবেশের প্রস্তুতির মধ্যে এ বার মোদীর ব্রিগেড কেমন হয়, কৌতূহলী নজর রেখেছিল গোটা রাজনৈতিক শিবির। রাহুলবাবুরা চেষ্টায় খামতি রাখেননি। মঙ্গলবার রাত দু’টো পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন সম্মানের লড়াইয়ে ধরাশায়ী না হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে। দিনের শুরুতে ময়দানের ছবি অবশ্য বিজেপি নেতাদের হৃৎকম্প ধরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল! একেই মঞ্চের প্রান্ত বদল করে এবং স্টল দিয়ে মাঠ ছোট করে আনা হয়েছিল। তার পরেও মাঠ ফাঁকা থাকলে বিজেপি-র গোটা প্রয়াস মাঠে মারা যেতে পারত। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং মোদী আসার আগেই ছোট সীমানার আধারে ময়দান ভরে উঠেছিল অনেকটাই। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য, ময়দানের উল্টো দিকে টাটা সেন্টারের আশেপাশে কয়েকটি বহুতলের ছাদে ও বারান্দায় চোখে পড়েছে কৌতূহলী জনতাকে। যা সচরাচর অন্যান্য ব্রিগেড সমাবেশে দেখা যায় না।
দিনের শেষে আশ্বস্ত রাহুলবাবু বলছিলেন, “রাজ্য বিজেপি ব্রিগেড করতে চেয়েছে শুনে অনেকে পাগল ভেবেছিল! সমাবেশের পরে আমরা বলতে পারছি, আমরাও নতুন লড়াইয়ের সূচনা করলাম!” হাওড়া, গোঘাট, আরামবাগের মতো কিছু এলাকায় বিজেপি সমর্থকদের ব্রিগেডমুখী বেশ কিছু বাস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে রাহুলবাবুর অভিযোগ। তাঁরাই আক্রান্ত হয়েছেন, উল্টে তাঁদেরই তিন কর্মকর্তাকে হুগলিতে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন রাহুলবাবু।
এ সব অভিযোগ সত্ত্বেও ব্রিগেডে হাজির জনতা মোদী-নামেই মত্ত ছিল! গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার মাঝে মাঝেই তারা ‘মোদী, মোদী’ চিৎকারে ভাসিয়ে দিয়েছে খেলার মাঠের কায়দায়! অনলাইনে টিকিট বুকিং করে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের জন্য ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ব্যবস্থায় বসার চেয়ার ছিল। কিন্তু মূল মঞ্চের বাঁ দিকে সেই গ্যালারিতে অবশ্য সারা ক্ষণ গণ্ডগোল, বচসা, চেয়ার ছোড়াছুড়ি চলল! পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হল, বিজেপি-র স্বেচ্ছাসেবকেরা গলদঘর্ম হলেন। খোদ মোদীকে অনুরোধ করতে হল শান্তি বজায় রাখার। বিশৃঙ্খলার এই চিত্র অতি-উৎসাহের পরিণতি বলেই ধরে নিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এবং সে সব ঘটনার ঊর্ধ্বে লাখ খানেক মানুষের জমায়েত তাঁদের জন্য নতুন প্রাণসঞ্চার করছে বলে দাবি করছেন। শাসক তৃণমূলের সঙ্গে লড়তে এই ব্রিগেড-বার্তা তাঁদের সহায়ক হবে, আশাবাদী রাহুলবাবুরা।
মোদীর কপ্টার ময়দানের আকাশে দেখা দেওয়ার আগে জনতাকে উত্তেজনার খোরাক জুগিয়েছিলেন বাপ্পি। গা-ভর্তি সোনার গয়না, চোখে পরিচিত কালো চশমা। বহু হিট ছবির সুরকার বলছিলেন, “বাপ্পি লাহিড়ি মুম্বইয়ে থাকলেও মন পড়ে থাকে কলকাতায়! মোদীর নেতৃত্বে নতুন সরকার হবে। তাঁর দলে যোগ দিয়েছি শুনে দেশ-বিদেশে বহু মানুষ আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।” তার পরেই গেয়ে শুনিয়েছেন ‘চির দিনই তুমি যে আমার...’, তার সঙ্গে বিজেপি-র গুণগান জুড়ে মূল গানের কথায় প্রয়োজনীয় রদবদল। পি সি সরকার (জুনিয়র) অবশ্য কিছু বলেননি। তবে মোদীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। মোদী-ম্যাজিক তাঁর মতো ‘জাদু-সম্রাট’কেও টেনে আনল কি না, সকৌতূকে এই প্রশ্নই তাঁকে ঘিরে উড়ে বেড়িয়েছে!
মাঠে ছিলেন আমন্ত্রিত চা-বিক্রেতারা। তার পাশাপাশি বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা অভিনবত্ব সংযোজন করতে ছাড়েননি। যেমন, ঘাড়ে পেল্লায় কেটলি ঘাড়ে ব্রিগেডে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তরুণ সরকার। বীরভূম জেলা যুব বিজেপি-র সভাপতি। তারাপীঠ থেকে ট্রেনের ভেন্ডরে চাপিয়ে বয়ে নিয়ে এসেছিলেন মোদীর নামাঙ্কিত ঢাউস কেটলি! “ভাবলাম, মোদীজি’র জন্য কিছু একটা করি।” ঘাড় থেকে কেটলি মাটিতে রেখে মোদীর প্রথম জীবনের পেশার দিকে ইঙ্গিত করতে চাইলেন তারাপীঠের তরুণ। |