বাংলার মন পেতে তাঁর অস্ত্র প্রণবও
৫ ফেব্রুয়ারি
ঙ্গসন্তানের ‘বঞ্চনা’র কথা বলে বাঙালির মন জেতার চেষ্টা করলেন নরেন্দ্র মোদী। যে সে বঙ্গসন্তান নন, খোদ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। আর সেই চেষ্টার জেরেই মাথাচাড়া দিল নতুন বিতর্ক।
রাজ্যে তৃণমূল আর কেন্দ্রে বিজেপি গোড়ায় যে জোড়া লাড্ডুর টোপ দিয়েছিলেন মোদী, তা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে হজম করা কঠিন। আর ব্রিগেড বক্তৃতার শেষ পর্বে প্রণববাবুর নাম টেনে যে তৃতীয় লাড্ডুর টোপ দিলেন, তা মেনে নিতে পারেনি কংগ্রেস।
মোদী আজ বলেন, “মমতাজিকে আপনারা পরিবর্তনের জন্য বসিয়েছেন। তিনি উন্নয়নের কাজ করবেন। দিল্লিতে আপনারা আমাকে বসাবেন। আমি উন্নয়নের কাজ করব। আর আমার উপরে প্রণবদাদা থাকবেন। উনি তো আপনাদেরই। আপনাদের তাই তিন-তিন ফায়দা।”
বাংলা থেকে প্রথম রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে এটুকু বলেই মোদী ক্ষান্ত হতে পারতেন। কিন্তু হলেন না। প্রণব-অস্ত্র ব্যবহার করেই বিঁধলেন কংগ্রেসকে। বললেন, “কংগ্রেসের কূটনীতি সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। ইন্দিরা গাঁধী নিহত হওয়ার সময় সরকারে বর্ষীয়ান মন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ভাল হতো, যদি সেই সময় তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হত। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ওই পরিবারের মনে হল, কিছু (তাদের বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্র) চলছে। পরে রাজীব গাঁধীর সরকারে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকেও ছেঁটে দেওয়া হয়েছিল।” বাঙালির অভিমান উস্কে দেওয়ার চেষ্টায় মোদী বলেন, “এই ইতিহাস ভুলবেন না। ২০০৪ সালেও সব থেকে বর্ষীয়ান নেতা ছিলেন প্রণবদা। সনিয়া গাঁধী যখন প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলেন না, তখন মনমোহন সিংহকে বসানো হল। কিন্তু প্রণবদাকে সুযোগ দেওয়া হল না।”
মোদীর এই মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে পাল্টা আক্রমণে নেমেছে কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি এ দিন বলেন, “গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর এই ঝোঁকটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি দেশের সাংবিধানিক শীর্ষ পদটিকেও দলীয় রাজনীতির মধ্যে টেনে এনে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চান। রাষ্ট্রপতিকে রাজনীতির প্রসঙ্গে জড়িয়ে শীর্ষ পদটির মর্যাদা ধূলিসাৎ করেছেন তিনি।”
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালাও বলেন, “অন্যকে জ্ঞান না দিয়ে মোদী আগে নিজেকে শোধরান। দলের বর্ষীয়ানদের প্রতি মোদীর আচরণের কথা সকলের জানা আছে। কেশুভাই পটেলকে অপমান করে দল থেকে তাড়িয়েছেন তিনি। হারিন পাণ্ড্য-কে সরিয়ে দিয়েছেন। দল থেকে বহিষ্কার করিয়েছেন সঞ্জয় জোশীকে। এমনকী, নিজের রাজনৈতিক গুরু লালকৃষ্ণ আডবাণীকেও বেইজ্জত করে ছেড়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার পর আডবাণী দলের সব পদে ইস্তফা পর্যন্ত দিতে বাধ্য হয়েছেন।”
কিন্তু এই প্রকাশ্য আক্রমণ সত্ত্বেও কংগ্রেসের অনেক নেতাই আজ ঘরোয়া আলোচনায় কবুল করে নেন, ২০০৪-এ সনিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রণববাবুই ওই পদের যোগ্য দাবিদার ছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে প্রণববাবুই যে বকলমে ইউপিএ সরকার চালিয়েছিলেন, অসংখ্য বিষয়ে তিনিই যে ছিলেন সরকারের মুশকিল আসান, এ ব্যাপারেও কারও দ্বিমত নেই।
কিন্তু মোদী কেন আজ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম টেনে আনলেন বারবার? বিজেপি নেতারা বলছেন, অনেকগুলি কারণে এই প্রণব-প্রশস্তি।
এক, মোদীর আজকের সভা ছিল বাংলার বুকে। যে বাংলাকে জাতীয় স্তরে কংগ্রেস বারবার বঞ্চনা করে এসেছে। সুভাষচন্দ্র বসু থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায় তার ব্যতিক্রম হয়নি। এখন যখন ব্যর্থতার বহুবিধ অভিযোগে মনমোহন সিংহ জর্জরিত, তখন অনেকেই মনে করছেন, তাঁর জায়গায় প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের নকশা বদলে যেত। বাঙালির প্রতি কংগ্রেসের সেই বঞ্চনার বোধটাই বাংলায় এসে এ ভাবে উস্কে দিতে চেয়েছেন মোদী।
দুই, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের যোগ্যতা নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে যেমন দ্বিমত নেই, তেমনই তাঁর বিরোধীদের মনেও এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর মুখে অরুণ জেটলিরা এমন প্রস্তাবও দিয়েছিলেন যে, কংগ্রেস প্রণববাবুর নাম বিবেচনা করলে বিজেপি-ও তাঁকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। দু’টি বড় দলের মধ্যে ঐকমত্য হলে অন্য কোনও দলের সমর্থনেরও প্রয়োজন পড়বে না। প্রণববাবু বরাবরই বিরোধীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এসেছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও সেই ধারা অব্যাহত।
এই অবস্থায় তাঁকে যোগ্য
হিসেবে তুলে ধরে কংগ্রেসের বাকি নেতাদের অযোগ্য প্রমাণেরই চেষ্টা চালালেন মোদী।
তিন, কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লাগাতার সরব মোদী। প্রণব-প্রসঙ্গ তুলে মোদী বোঝাতে চাইলেন, রাজীব থেকে সনিয়া সকলেই দলে গাঁধী পরিবারের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের অপ্রাসঙ্গিক করে রেখেছেন। সাম্প্রতিক অতীতে বল্লভভাই পটেলকে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী না করার কথা বলেও ঠিক এ ভাবেই জওহরলাল নেহরুকে বিঁধেছিলেন মোদী।
চার, নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সরকার গড়ার সময়, এমনকী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন, মোদী তা ভালই জানেন। বাংলায় এসে তার ভিতও আজ তৈরি করে রাখলেন তিনি। অনেক দিন ধরেই প্রণববাবুকে গুজরাতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছেন মোদী। প্রণববাবু অবশ্য রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত সেখানে যাননি। কিন্তু মোদীর তরফে সম্পর্ক মধুর করার জন্য লাগাতার চেষ্টা লক্ষ করা গিয়েছে। প্রণববাবু মাঝে সামান্য অসুস্থ হওয়ার পর ফুল পাঠান মোদী। হাসপাতাল থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে ফেরার পরে তাঁর সঙ্গে দেখাও করে আসেন।
তবে মোদীর লক্ষ্য যা-ই হোক না কেন, কংগ্রেস তাঁর হাতে তামাক খেতে নারাজ। বিশেষ করে রাজনীতিক প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন মোদীর রাজনীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। আর বাঙালিকে বঞ্চনার যে অভিযোগ মোদী এ দিন উস্কে দিতে চেয়েছেন, তার জবাবে কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, কংগ্রেসের কারণেই এই প্রথম এক জন বাঙালি দেশের সাংবিধানিক প্রধান হয়েছেন।
প্রণব-প্রশ্নে মোদীকে আক্রমণ করেছে সিপিএম-ও। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর মতে, “এটা এক ধরনের দ্বিচারিতা। প্রণববাবুকে নিয়ে যদি মোদীর এত আবেগ, তা হলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল কেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.