|
|
|
|
সোনা পাচারে জড়িয়ে সীমান্ত-কর্মীরাই
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য • কলকাতা
সীমান্ত মৈত্র • বনগাঁ |
বাইরে তো বটেই, ভূত রয়েছে সর্ষের মধ্যেও।
আগেই সতর্কতা জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (আই বি) সূত্রেও বলা হয়েছিল, সোনা পাচার চক্রের মধ্যে রয়েছে সীমান্তের কর্মীরাও। বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে গোপাল হালদার নামে এক ‘ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট’ ধরা পড়ার পরে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। গোপালের জুতোর সোল খুলে ১৩টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার করেছে বিএসএফ। প্রায় দেড় কিলোগ্রাম ওজনের ওই বিস্কুটের মূল্য ৪৬ লক্ষ টাকা।
আগে ২৫ জানুয়ারি আলি কাদের সাহাজি নামে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ভারতীয় এক মালবাহককেও বিএসএফ ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ থেকে ২০টি সোনার বিস্কুট-সহ ধরে ফেলে। যার মূল্য ৬৭ লক্ষ টাকা। সাহাজিকে জেরা করে জানা যায়, বেনাপোল সীমান্তে এক ব্যক্তি তাকে সোনার বিস্কুট ভর্তি ব্যাগ ও একটি ফোন নম্বর দেয়। জানায়, স্রেফ গেট পেরিয়ে পেট্রাপোলে গিয়ে ওই নম্বরে ফোন করলে আরেক ব্যক্তি ব্যাগটি নিয়ে যাবে। এই কাজের জন্য সাহাজিকে ৮০০ টাকা দেওয়া হয়।
পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার শুভেন দাশগুপ্ত বলেন, “কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে তদন্ত ও তথ্য আদান প্রদান শুরু হয়েছে। বৈধ যাত্রী বা পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও এক্সরে, স্ক্যানিং করে নজরদারি কড়া করা হয়েছে। কর্মীদের ক্ষেত্রেও বিশেষ সতকর্তা নিচ্ছি।’’
কেমন ধরনের সতকর্তা?
বিএসএফ ও শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই দফতর ও অভিবাসনের কর্মী ছাড়াও পেট্রোপোল সীমান্তে প্রায় শ-দুয়েক ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট ও মালবাহক রয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতকারী সেই এজেন্ট ও নো ম্যানস ল্যান্ডে কর্মরত মালবাহকরা যাতে কোনও সামগ্রী সঙ্গে না রাখতে পারেন, সে ব্যাপারে নজরদারি আরও কড়া হবে।
বাংলাদেশ সীমান্তে হেরোইন, ফেন্সিডিল, গরু, ইলিশ মাছের মতো পণ্যের চোরাচালান চলছিলই। তবে নব্বইয়ের দশকের পর কমে এসেছিল সোনা পাচার। প্রায় দু’দশক পরে ফের উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে এ দেশে ঢুকছে সোনা। পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সোনা আমদানির শুল্ক কর (ইমপোর্ট ডিউটি) বেড়ে যাওয়াই সোনা পাচার বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। গত এক মাসে আটটি ঘটনায় ওই এলাকা থেকে ৯ জন পাচারকারীকে ধরা হয়েছে।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সীমান্তে যারা গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মূলত তারাই সোনা পাচারের কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে। মহিলা ও অল্প বয়সীদেরও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। মহিলাদের তল্লাশি করার জন্য মহিলা কর্মী রাখার ব্যাপারেও পরিকল্পনা নিচ্ছে বিএসএফ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকেই বনগাঁর পেট্রাপোল, কালিয়ানি, জয়ন্তীপুর, হরিদাসপুর এবং ও বসিরহাট সীমান্তের স্বরূপনগর এলাকা দিয়ে দেদার সোনার বিস্কুট পাচার শুরু হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, দুবাই থেকে বাংলাদেশ হয়েই সোনা চোরাপথে এ দেশে ঢুকছে। বাংলাদেশের ঢাকার বড়বাজার এলাকা থেকে বেনাপোল, পেট্রাপোল হয়ে বনগাঁ থেকে আসছে কলকাতায়। সেখান থেকেই তা বিক্রি হয়ে যায়। ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত এক-একটি সোনার বিস্কুট আনতে ক্যারিয়ার পিছু খরচ হয় ২ হাজার টাকা।
নজরদারি এড়াতে নতুন নতুন উপায়ে পাচার চলছে। কখনও শরীরের মধ্যে ঢুকিয়ে, কখনও বা পায়ে কাপড় দিয়ে বেঁধে, ছোট ছোট সোনার বিস্কুট পাচার হচ্ছে। কয়েকদিন আগে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কালিয়ানি গ্রাম থেকে একটি ছেলেকে ধরে বিএসএফ। তার শরীর তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে, তাকে কলা খাইয়ে পেটের ভিতর থেকে সোনা উদ্ধার করা যায়নি। শেষে তার সাইকেলের চাকার ভিতরেই মেলে ২২টি সোনার বিস্কুট। |
|
|
|
|
|