|
|
|
|
নতুন ১৫ রুট খুলছে রাজ্য, কিন্তু বাস চালাবে কে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকার ভাড়া না-বাড়ানোয় শহরের বহু পুরনো রুট থেকে বাস তুলে নিয়েছেন বেসরকারি মালিকেরা। পরিবহণমন্ত্রীকে তাঁরা বারবার জানিয়েছেন, বর্তমান ভাড়া-কাঠামোয় বসে থাকা বাস চালিয়ে আরও লোকসান পোহানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। বস্তুত জ্বালানি-যন্ত্রাংশের দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে যাত্রীভাড়া না-বাড়লে অর্থনীতির বুনিয়াদি নিয়মেই বেসরকারি পরিবহণ সঙ্কটে পড়তে বাধ্য বলে মনে করছেন সরকারি কর্তাদেরও একাংশ। এবং এ হেন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার নতুন ১৫টি রুটে বেসরকারি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরিকল্পনাটির বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই।
বুধবার রাজ্যের পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জানিয়েছেন, কলকাতার উপকণ্ঠে নতুন ১৫টি বাস-রুট চালু হচ্ছে, যাতে দু’শো বাস চালানো সম্ভব। তা শুনে বাস-মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে, আয়ে টান পড়ায় যেখানে পুরনো রুটের বাসই চালানো যাচ্ছে না, সেখানে নতুন বাস তাঁরা নেবেন কী করে? “বরং সরকার ভাড়া না-বাড়ালে বিভিন্ন রুটে আরও অনেক বাস বসে যাবে। নতুন বাস কেনার ঝুঁকি কেউ নেবে না।” মন্তব্য করেছেন একটি মালিক সংগঠনের এক নেতা। সরকারের কী ব্যাখ্যা?
পরিবহণ-সচিব অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, বাস চালানোর লোকের অভাব হবে না। তাঁর কথায়, “বাস চালাতে চেয়ে প্রচুর আবেদন আমাদের কাছে জমা পড়ছে। আমরা ওঁদের সুযোগ ও পরিসর দিতে চাই।” যদিও মালিকদের তরফে সচিবের দাবির বাস্তবতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নতুন বাস চালানোর সামর্থ কোনও মালিকের নেই। নতুন বাস নেওয়া দূরে থাক, ভাড়া না-বাড়লে চালু রুটেই বাস চালাতে পারব না।” আর এক সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের পক্ষে দীপক সরকারের আক্ষেপ, “বাস্তব অবস্থা স্বীকার না-করেই সরকার রুট বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে।” তাঁর মতে, ‘অবাস্তব’ পরিকল্পনাটি জবরদস্তি কার্যকর করলে পরিবহণ-শিল্প আরও রুগ্ণ হয়ে পড়বে। |
বাস ধরতে হুড়োহুড়ি। নিউ টাউনে শৌভিক দে-র তোলা ছবি। |
মালিকেরাই যেখানে নতুন বাস নিতে অনিচ্ছুক, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত সরকার নিল কেন?
সচিবের ব্যাখ্যা, শহরতলির সঙ্গে খাস কলকাতার যোগাযোগ বাড়াতে নতুন কিছু রুট তৈরি প্রয়োজন বলেই এই পদক্ষেপ। “মহানগরে বর্তমান রুটেরও অনেকগুলোয় চাহিদা রয়েছে। অথচ সেখানে বহু দিন বাসের সংখ্যা বাড়েনি। এমন কিছু রুটে বাস বাড়ানো হবে।” বলেন আলাপনবাবু। তাঁর দাবি, বিভিন্ন চালু রুটেও নতুন শ’খানেক বাস চালানোর সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি মালিকদের আগ্রহ বাড়াতে সচিবের ঘোষণা, “বাসের পারমিট মিলবে সাত দিনের মধ্যে।”
মালিকদের তরফে কিন্তু ইতিবাচক সাড়া নেই। উল্টে তাঁদের সিংহভাগই পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কোনও সহযোগিতার রাস্তায় যেতে নারাজ। “সরকার বাসভাড়া বাড়িয়ে দিলে বসে থাকা বাস ফের রাস্তায় নামত। এতে বাসের অভাব খানিকটা হলেও মিটত। নতুন বাস রাস্তায় নামাতে উৎসাহ পেতেন মালিকেরা। কিন্তু এখন কেউই নতুন বাসের পারমিট নিতে আসবেন না।” মন্তব্য তপনবাবুর। ক’দিন আগে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ঘোষণা করেন, বসে যাওয়া বাস সরকার হুকুমদখল করে চালাবে। হাতে গোনা কয়েকটা বাস বাজেয়াপ্তও হয়। তার পরেও নতুন রুটে বাস বসে যাচ্ছে। ভোগান্তির চরম হচ্ছে আমজনতার।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনের পরে বাসভাড়া বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা। পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা থেকেই রাজ্য সরকার ভাড়া বাড়াবে বলে তাঁর আশা। মালিকদের কাছেও সেই বার্তা পৌঁছেছে। তবে মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, আগে ভাড়া বাড়ুক, তার পরে নতুন বাস কেনার কথা তাঁরা ভাববেন। পরিবহণ-সচিব জানিয়েছেন, বাসের অভাব দূর করতে মিনি ট্যাক্সি ও ছোট বাস চালানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। আলাপনবাবু বলেন, “এখন বাজারে তুলনায় ছোট মাপের বাস এসেছে। এগুলোকে কী ভাবে পারমিট দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনা চলছে।”
সরকারের এই পরিকল্পনারও বাস্তবায়নের বিশেষ সম্ভাবনা দেখছেন না বেসরকারি বাস-মালিকেরা। |
|
|
|
|
|