বাংলার দ্বিতীয় দার্জিলিং অযোধ্যা পাহাড়, প্রচারে এ-কথা উল্লেখ করেই অযোধ্যা পাহাড় উৎসব করতে যাচ্ছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। পাহাড়ের মাথায় অযোধ্যা হিলটপ ময়দানে শুক্রবার উৎসবের সূচনা হচ্ছে। এ বার তিন বছরে পড়ছে এই উৎসব।
মাওবাদীদের কার্যকলাপে এই পাহাড়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন পর্যটকেরা। তাদের ফিরিয়ে আনতে তিন বছর আগে তিন বছর আগে তৎকালীন জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ সবাইকে নিয়ে শুরু করেছিলেন এই উৎসবের। সেই উৎসবের মঞ্চ থেকেই চালু হয়েছিল হিলটপ থেকে পুরুলিয়া শহর পর্যন্ত একটি ‘বুরুবাহা’ নামে একটি সরকারি বাস পরিষেবা। বুটের শব্দ ও গুলি-বন্দুকের আবহ থেকে বেরিয়ে পাহাড় মেতে উঠেছিল ছৌ, নাটুয়া, করম, জাওয়া-সহ নানা রঙের লোক সংস্কৃতি নাচের ছন্দে। |
ঝাড়খণ্ড রাজ্য লাগোয়া জঙ্গলে ঘেরা এই পাহাড়কে কার্যত নিজেদের মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলেছিল মাওবাদীরা। এমনকী রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরেও এই পাহাড়ে মাওবাদী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীকে সক্রিয় থাকতে হয়েছে। একাধিক খুনের ঘটনাও ঘটেছে পাহাড়তলির গ্রামে। পরে ধীরে ধীরে পাহাড়তলির গ্রামগুলিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করে শাসকদল। ক্রমশ পাল্টাতে থাকে পরিস্থিতি। কিছু মাওবাদী নেতা ধরা পড়েন, অনেকে আত্মসর্মপণ করেন। প্রায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পাহাড়কে মূলস্রোতের সঙ্গে যুক্ত করতে শুরু হয় অযোধ্যা পাহাড় উৎসব।
এ বার এই উৎসবে পযর্টনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রচারপত্রের শিরোনামে লেখা হয়েছে ‘পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় বাংলার দ্বিতীয় দার্জিলিং। এখানে নৈনিতালের সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে আপনাকে।’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “এই উৎসব পযর্টকদের সঙ্গে বা উৎসব দেখতে আসা মানুষের সঙ্গে পাহাড়ের মেলবন্ধনের উৎসব। ছোটনাগপুর মালভূমির নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে পাহাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, পাহাড়ের দর্শনীয় স্থানগুলি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পৃথক প্যাভেলিয়ন তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ছৌ-সহ বিভিন্ন লোক সংস্কৃতির অনুষ্ঠান তো রয়েইছে।” তিনি জানান, এ বার উৎসবের বাজেটও অন্য বারের তুলনায় বেশি ধরা হয়েছে। |
কিন্তু পাহাড়ে উৎসবের প্রচার এখনও শুরু না হওয়ায় অভিমান পাহাড়বাসীর। তাঁদের কথায়, “শুনলাম পুরুলিয়া শহরে এই উৎসব নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ে এখনও উৎসবের কোনও প্রচারই নেই। উৎসবের কথা এলাকার অনেকে জানেন না।” স্থানীয় বাসিন্দা বেণু সেন দীর্ঘদিন ধরে অযোধ্যা পাহাড়ে পযর্টকদের গাইডের কাজ করে আসছেন। তাঁর কথায়, “এই উৎসব নিয়ে এখনও প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। গতবারও কিছু জানায়নি। এবারেও এখনও কিছুই জানায়নি। পাহাড়ের এই উৎসব তো এলাকার মানুষকে নিয়েই হওয়া উচিত।”
পাহাড়ের আর এক গাইড নকুল পরামাণিক বলেন, “এ বার উৎসব হবে বলে শুনেছি। কিন্তু তার বেশি তো কিছুই জানি না আমরা।” এলাকার বাসিন্দা হীরালাল লায়ার অভিযোগ করেন, পাহাড়ের উৎসবে স্থানীয় মানুষই ব্রাত্য থেকে যাচ্ছেন। এই কারণেই গত বছরও উৎসব তেমন জমেনি। সভাধিপতি অবশ্য দাবি করেছেন, “সবাইকে নিয়েই আমরা উৎসব করব। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড ও রেলওয়ে স্টেশন থেকে অযোধ্যা পাহাড় পর্যন্ত উৎসবের কয়েক দিন অতিরিক্ত বাস চালানোরও ব্যবস্থা করা হবে। যে ভাবে জঙ্গলমহলের বলরামপুরে বইমেলা সফল হয়েছে, সে ভাবেই পাহাড়ের উৎসবও সফল হবে।”
|