নরেন্দ্র মোদী নেমে পড়েছেন বিমানবন্দরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢুকবেন সভায়। টিভির পর্দায় সেই খবরটা শুনেই চনমনে হয়ে উঠেছিল ভিড়টা। ছাতনার গোপীনাথডিহি গ্রামের বাউরিপাড়ায় তখন বিজেপি নেতাদের বসিয়ে যাওয়া টিভির সামনে ছেলেবুড়োর জমায়েত। হঠাৎই
সমস্বরে “যাঃ!”
টিভির পর্দা থেকে ছবি উধাও। রঙিন বিন্দু ঝিলমিল করছে টিভি জুড়ে। হলটা কী? কিছুক্ষণ ধরে ফোনটোন করে এক বিজেপি কর্মী জানালেন, কেবল লাইন নেই। কেবল অপারেটরও ফোন ধরছে না! “হেই বাবু উ লাইনটা কখন আসবেক?” অধৈর্য প্রশ্ন এক বৃদ্ধের। বিজেপি কর্মীর আশ্বাস, “আর একটু ধৈর্য ধর। আমরাও তো মোদীজীর বক্তৃতা শুনব বলে বসে আছি।”
বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ধবন গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামের বাউরিপাড়ায় অধিকাংশের বাড়িতেই টিভি নেই। বাঁকুড়া জেলার বেশ কিছু গ্রামে বুধবার ব্রিগেড থেকে সরাসরি মোদীর বক্তৃতা শোনাতে টিভি বসিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। এ দিন সকালে সকালেই বিজেপি-র ধবন অঞ্চল সভাপতি শ্যামল মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ২১ ইঞ্চির রঙিন টিভি নিয়ে আসা হয় বাউরিপাড়ায়। কিছুটা দূর থেকে টেনে আনা হয় কেবল সংযোগ। রোদ এড়াতে টাঙানো হয় ত্রিপল।
সব চলছিল ঠিকঠাক। তাল কাটল মোদী কলকাতায় নামার পরেই। তিনি মঞ্চে উঠলেন, বক্তৃতা শেষ করলেন, কলকাতা ছেড়ে চলেও গেলেন। কিন্তু কেব্ল সংযোগ আর এল না। টিভি-র সামনে থাকা জনা চল্লিশেকের ভিড়ে শুধুই হাপিত্যেশ। গেনিদেবী বললেন, “ক’দিন ধরে শুধুই এই নামটা শুনছিলাম। কত নেতা, অভিনেতার নাম শুনেছি। এ নামটা আগে শুনিনি বলে চোখে দেখব ভেবেছিলাম। কিন্তু পোড়া কপাল!” এলাকার যুবক লাল্টু বাউরি, জীতেন বাউরিরাও আধবেলা দিনমজুরির কাজ করে ছুটি নিয়ে টিভি দেখতে জড়ো হয়েছিলেন। হতাশ তাঁরাও। স্কুলপড়ুয়া রেখা বাউরি, মৌ মুখোপাধ্যায়রা বলে, “আজকাল স্কুলে মাস্টারমশাইরা অনেকেই মমতা জিতবেন না মোদী জিতবেন, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। মমতাকে তো চিনি। মোদীকে চিনি না।” খেলা ছেড়ে তাই টিভির সামনে বসেছিল ওরাও। মাঝ বয়েসী সুভাষ বাউরি বাঁকুড়া শহরে বিজেপি-র পোস্টারে তিনি মোদীর ছবি দেখেছেন। তাঁর কাছেই মোদী সর্ম্পকে জানতে চাইছিলেন পড়শিরা। তিনি বলছিলেন, “চাপ দাড়ি। তাও পাকা।”
হতাশা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামের অন্য পাড়াতেও। তাপসী মুখোপাধ্যায়, মঙ্গলা মুখোপাধ্যায়ের বাউরিপাড়ায় চলে এসেছিলেন। বললেন, “ঘরকন্না সামলানোর পাশাপাশি রাজনীতির চর্চাও করি আমরা। বাড়ির টিভিতে ছবি আসছে না দেখা এখানে দেখতে এলাম। এখানেও একই অবস্থা।”
বিজেপি-র অঞ্চল সভাপতি শ্যামল মুখোপাধ্যায় বললেন, “এলাকার লোককে মোদীজীর কথা শোনাব বলে কত সাধ করে সব ব্যবস্থা করলাম। সব ফালতু হয়ে গেল। তৃণমূলই কারসাজি করে কেবল লাইন বিগড়ে দিয়েছে!” তৃণমূলের ছাতনা ব্লক সভাপতি পরমেশ্বর কুণ্ডুর পাল্টা দাবি, “যান্ত্রিক গোলযোগে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে থাকতে পারে।” কেবল অপারেটরের অফিসের এক কর্মী জানান, লাইনের কোথাও বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
মোদী সেই ধোঁয়াশা হয়েই রয়ে গেলেন এলাকায়! |