লক্ষ লক্ষ টাকার জেটিঘাট সন্ধে নামলেই বন্ধ
স্কুল ছুটির পরে স্কুলেরই সরস্বতী পুজো নিয়ে মিটিং থাকায় আটকে গিয়েছিলেন তরুণ মান্না। মিটিং যখন শেষ হল ঘড়িতে তখন সাড়ে পাঁচটা বেজে গিয়েছে। পড়িমরি করে কোনওরকমে অটো ধরে কাকদ্বীপের ৪ নম্বর জেটিঘাটে যখন পৌঁছলেন ঘড়ির কাঁটা তখন ৬টা পেরিয়ে গিয়েছে। পারাপার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেদিন আর সাগরের রুদ্রনগরে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। কাকদ্বীপেই এক বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটান কাকদ্বীপের একটি স্কুলের শিক্ষক তরুণবাবু। শুধু তরুণবাবু নন, এই অভিজ্ঞতার শরিক অনেকেই। একই সমস্যা ওপারে কচুবেড়িয়া জেটিঘাটেও। নিত্য সমস্যায় জেরবার বাসিন্দারা তাঁদের এই ভোগান্তির জন্য জেলা প্রশাসকে দায়ী করেছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সাগরের মুড়িগঙ্গা নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় অমাবস্যা ও পূর্ণিমার কোটালে ভাটার সময় সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে কাকদ্বীপের লট-৮এ ১ নম্বর জেটিঘাটে ভেসেল ঢুকতে পারত না। ঘাটে ঢোকার মুখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে দাঁড়িয়ে থাকত ভেসেল। সমস্যার সমাধানে ১ নম্বর জেটিঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নদীর আরও ভিতরে যেখানে গভীরতা বেশি সেখানে আর একটি জেটিঘাট নির্মাণ করা হয়। গত ৫ জানুয়ারি গঙ্গাসাগর মেলার আগে তার উদ্বোধনও হয়ে যায়। ঠিক হয় ভাটার সময় ১ নম্বর জেটিঘাটে পারাপার বন্ধ থাকলে নতুন ৪ নম্বর জেটিঘাটে পারাপার চলবে। সেইমতো পারাপারও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু দিন কয়েক পরেই নতুন জেটিঘাট নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। স্বাভাবিক ভাবে ১ নম্বর জেটিঘাট দিয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত পারাপার চলত। কিন্তু চরা পড়ার কারণে তাতে সমস্যা হওয়ায় তা সরে আসে ৪ নম্বর জেটিঘাটে। কিন্তু নতুন জেটিঘাটে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধকারে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সন্ধ্যা ৬টার পরেই পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। গঙ্গাসাগর মেলার সময় জেনারেটর দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হলেও মেলার পরে ফের আগের অবস্থা ফিরে এসেছে।
শুধু আলো নয়, শৌচাগার, পানীয় জল, যাত্রী শেড কোনও কিছুরই ব্যবস্থা নেই। জেটিঘাটে নেই ঘাটে যাত্রী আসা যাওয়ার জন্য কোনও ডিভাইডার। ফলে ভিড়ের সময় ধাক্কাধাক্কি করে ওঠানামা করতে হয়। আরও বড় সমস্যা কখন লট-৮ ঘাট থেকে ভেসেল যাতায়াত করছে আর কখন ৪ নম্বর জেটিঘাট দিয়ে যাতায়াত করছে তা যাত্রীদের জানানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে তাঁরা নাকাল হচ্ছেন। বিশেষ করে মহিলা-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। লট-৮ ঘাটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, লক্ষ লক্ষ সরকারি টাকা খরচ করে নতুন জেটিঘাট তৈরি না করে পুরনো লট-৮ ঘাটটি নদীর দিকে আরও বাড়ালে ভাটার সময়েও ভেসেলে ওঠানামা করা যেত। এতে বাস থেকে নেমে যেমন ঘাট কাছাকাছি হত, অন্য দিকে ঘাট লাগোয়া প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর জীবিকাও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে না। তা ছাড়া যেখানে নতুন ৪ নম্বর জেটিঘাট হয়েছে সেখানে পরিষেবার প্রচুর সমস্যা থাকায় প্রতিনিয়ত যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এমনকী সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে লট-৮ ঘাটে ভেসেল পৌঁছতে যে সময় লাগত তার থেকে ২০-৩০ মিনিট সময় বেশি লাগছে নতুন ওই ৪ নম্বর জেটি ঘাটে আসতে।
যাত্রীদের অভিযোগ, শুধু নতুন জেটিঘাটেই নয়, বাস থেকে নেমে ওই ঘাটে যাতায়াতের রাস্তাতেও আলোর ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া ও পারে যাওয়ার যাত্রীরা অনেকেই জানতে পারছেন না কখন কোন ঘাট থেকে পারাপার করা যাবে। রাস্তায় লাগানো হয়নি জেটিঘাটে যাওয়ার কোনও সাইন বোর্ডও। ফলে প্রতিদিন হয়রান হতে হচ্ছে। যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষোভ দেখা দিয়ছে ভেসেন চালকদের মধ্যেও। কচুবেড়িয়া থেকে লট-৮ জেটিঘাট পর্যন্ত প্রতিদিন যাত্রী পারাপার করেন সইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “৪ নম্বর জেটিঘাটে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধে নামার মুখে ঘাটে ভেসেল লাগাতে খুবই অসুবিধা হয়। তা ছাড়া দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।”
নতুন ৪ নম্বর জেটিঘাটের সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাও। তিনি বলেন, “ওই ঘাটে সোলার আলো লাগানোর জন্য শীঘ্রই দফতরের সঙ্গে কথা বলব। অন্যান্য সমস্যাও দ্রুত মেটানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেলার কারণেই এতদিন সমস্যাগুলির দিকে সেভাবে নজর দেওয়া যায়নি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.