সকাল সকাল রান্না সেরে কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাজ্য সড়কের উপরে ছোট সেতুটির উপরে কাঠের বেঞ্চি পেতে বসেছিলেন কুলগাছির মাঠপাড়ার কাঞ্চনী মন্ডল। বছর খানেক আগে পড়তে যাওয়ার সময় এই সেতুর উপরেই গাড়ি চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল তাঁর কিশোর পুত্র। তারপর এই সেতুর উপরেই একটার পর একটা দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন তিনি। দুর্ঘটনায় রক্তাক্ত মৃতদেহগুলি দেখে আজও চমকে ওঠেন। ছেলেটার কথা মনে পড়ে যায় তখন। আজ তাই গ্রামের আর পাঁচ জন মহিলার সঙ্গে তিনিও সামিল হয়েছেন রাস্তা অবরোধে। দুপুর গড়ালে আবরোধকারী আর আটকে থাকা গাড়ির চালকদের জন্য এনেছিলেন এক ধামা মুড়িও। |
কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া সড়কে কুলগাছির মাঠপাড়ায় অবরোধ। —নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু সেতুর উপরে বাঁশের বাধা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করতেই কাঞ্চনীদেবী পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছেন, “না, কোনও ভাবেই অবরোধ তোলা যাবে না। আপনাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্যই আজ আমরা রাস্তায় নেমেছি।” তাঁদের দাবি, এই সেতু চওড়া করতে হবে, না হলে আর কোনও গাড়ি চালানো যাবে না। তিনি বলেন, “নিত্যদিন চোখের সামনের আর কত দুর্ঘটনায় মৃত্যু দেখব বলতে পারেন?” এই জিঞ্জাসা যেন গোটা কুলগাছি-মাঠপাড়ার। বুধবার সকাল দশটা থেকে তাই এই এলাকার নারী-পুরুষ সকলে ওই সেতু চওড়া করার দাবিতে রাস্তা অবরোধে সামিল হয়েছেন। অবরোধ চলে বিকেল প্রায় চারটে পর্যন্ত। এলাকার মানুষের অভিযোগ, এই সেতুটি এতটাই সংকীর্ণ যে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা হয়। প্রশাসনকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনও কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়েই তাঁরা রাস্তা অবরোধের পথ বেছে নিয়েছেন।
এর আগে ২৭ জানুয়ারি এলাকার মানুষ এই একই দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। সেদিন প্রশাসনের তরফে এক সপ্তাহের মধ্যে এই সেতু চওড়া করার কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বিক্ষোভকারী অর্পিতা মণ্ডল বলেন, “একে তো সেতুটি খুবই সংকীর্ণ। আবার তার দু’দিকের রাস্তা ঢাল। তাই দু’দিক থেকে আসা গাড়ি পরস্পরকে দেখতে পায় না। ব্রিজের মুখে এসে আর সংঘর্ষ এড়ানো যায় না, কেননা পাশ কাটানোর মতো জায়গাই তো নেই সেতুতে।” অনেক সাইকেল আর মোটরসাইকেল আরোহী সেতুর পাশ দিয়ে পড়ে দিয়েছেন গর্তের ভিতরে।
বিক্ষোভের মধ্যে সকাল থেকে আটকে থাকা একটি বালি বোঝাই লরির চালক অসীম মন্ডল বলেন, “মাঝে মধ্যেই কাটোয়া থেকে আমাকে বালি নিয়ে মাজদিয়ায় আসতে হয়। তখন বুঝতে পারি এই সেতুটা কতটা বিপজ্জনক। এর আগের বার একেবারেই সামনে একটা বাস চলে এসেছিল। কোনও রকমে আমি গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিলাম বলে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচেছিলাম।” স্থানীয় পোড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের উত্তম রায় বলেন, “ব্রিজটা চওড়া করার খুবই প্রয়োজন। প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি যাতে দ্রুত ব্রিজটা চওড়া করা হয়।” কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব, যাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়।” পূর্ত দফতরের নদিয়া ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “সেতুটি ভাল করে পরীক্ষা করে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |