এ বার বাইক দৌরাত্ম্যে রাশ নবদ্বীপে
গেই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে শব্দ দানব। এ বার টান পড়ল বেপরোয়া গতিতে। শহর জুড়ে উদ্ধত উদ্দাম গতির মোটরবাইক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেছে নিয়েছিল মোক্ষম দিনটিকে। সরস্বতী পুজোর দিন সকাল থেকে রাত নবদ্বীপের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, মোড় এবং মেয়েদের স্কুলের সামনে ছিল কড়া টহলদারি। দিনভর অভিযান চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু মোটরবাইক আটক করে। নবদ্বীপের আইসি তপন কুমার মিশ্র বলেন, “সারা দিনে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় সত্তরটি মোটরবাইক ধরা হয়। তার মধ্যে তিরিশটি বাইকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বাকিদের সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এই অভিযান চলবে।”
পরনে হাফ প্যান্ট অথবা জিনস-গেঞ্জি, পায়ে হাল ফ্যাশানের মোটা হাওয়াই চপ্পল কিম্বা জুতো। কানে মোবাইল। মুখ ভর্তি পানমশলা, কখনও ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট। মোটরবাইকের আরোহী তিন জন। পুরানো শহরের ভিড়ে ঠাসা ঘিঞ্জি রাস্তা দিয়ে ফিল্মি কায়দায় ঝড় তুলে এই যুবকদের প্রবল গতিতে বাইক চালানো নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নবদ্বীপের মানুষ শঙ্কিত। মেয়েদের স্কুল, কলেজের সামনে অথবা গৃহশিক্ষকের বাড়ির মুখে বাইক-রোমিওদের সকাল বিকাল ছোটাছুটিতে জেরবার ছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ। বাইকের দাপাদাপিতে শহরের বেশ কিছু রাস্তায় হাঁটাচলা এড়িয়ে চলছেন অনেক প্রবীণ এবং মহিলারা। এখন বাইক-রোমিওদের গ্রেফতার করতে পুলিশি তৎপরতায় খুশি নবদ্বীপের মানুষ। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী দেবারতি হালদার বলেন, “বাইক আমার বাবা ও কাকারও রয়েছে। মফস্সলে বাইক প্রয়োজনও। কিন্তু কিছু যুবক বাইক ব্যবহার করে তাদের কেরামতি দেখানোর জন্য। বিশেষ করে সরু রাস্তায় গায়ের উপর দিয়ে যে ভাবে বাইক চালানো হয়, তাতে খুবই অস্বস্তি হয়। তা ছাড়া, ওই ভাবে চালালে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সম্পাদক এবং আইনজীবী দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরে বাইক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ।”
দিলীপবাবু জানান, শহরের মধ্যে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বাইক চালানো নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয় বাইকচালকের পোশাক, জুতো, বাইকের সাইলেন্সারের শব্দ, আলো সব কিছুর জন্য আইন আছে। কিন্তু সেই আইনের তোয়াক্কা না করেই এত দিন শহরে বাইকের তাণ্ডব সহ্য করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। পুজোর দু’দিন আগে থেকেই ভিড় জমেছিল বিভিন্ন মোটর গ্যারাজে। বাইকের হনর্, ব্রেক, হাওয়া পরীক্ষা করানোর জন্য। এক গ্যারাজ কর্মীর কথায়, “এখনকার ডিস্ক ব্রেক একটু টাইট হলে খুব জোরে চালাতে চালাতেও বাইক চট করে থামানো যায়। আর তাতে পিছনের চাকাটা একটু পিছলে ঘুরে গিয়ে থামে। এই ক’দিন অনেকে চাকার ব্রেক পরীক্ষা করানোর জন্যই বেশি এসেছেন।” এই বাইক আরোহীদের বেশিরভাগেরই পোশাক জিন্স আর হাল্কা রঙের গেঞ্জির উপরে গাঢ় রঙের ব্লেজার বা জ্যাকেট। চুলে ‘স্পাইক’।
কিন্তু দশটা বাজতেই পথে নেমে পড়ল নবদ্বীপের আইসি-র নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী। মেয়েদের স্কুল এবং বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়া পুলিশের হাতে একে একে হিরোদের বাইক ধরা পড়তেই রাস্তা ফাঁকা হতে শুরু করে দেয়। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত পথে পুলিশি টহলদারি ছিল। নবদ্বীপের উপ পুরপ্রধান তুষার ভট্টাচার্য বলেন, “নবদ্বীপে যে ভাবে শব্দ নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে তা এখন দৃষ্টান্ত। এ বার পুলিশ বেপরোয়া বাইক নিয়ন্ত্রণে নেমে ঠিক কাজ করেছে।” এ কাজে পুলিশের সঙ্গে নবদ্বীপের পুর প্রশাসনও ছিল। নবদ্বীপের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা সারা দিন শহর চষে বেড়িয়েছেন কোথাও কোনও উচ্ছৃঙ্খলতা হচ্ছে কি না দেখার জন্য। ছিলেন পুরপ্রধানও। পুণ্ডরীকাক্ষবাবু বলেন, “আর তিন সপ্তাহ পরে মাধ্যমিক শুরু হচ্ছে। এই সময়ে শহরের কোন ঢিলে দেওয়া যাবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.