ছড়াচ্ছে ধসা, বিমা না করে মাথায় হাত আলু চাষিদের
লুর ধসা রোগের প্রকোশ ক্রমেই ছড়াচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে।
প্রাথমিক ভাবে জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ধসা রোগ ছড়ানোর পরে উদ্বিগ্ন কৃষি দফতর জেলা জুড়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছিল। দফতরের বিশেষজ্ঞরা গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে এই সময় কী করণীয় তা বুঝিয়েছিলেন চাষিদের। শিবিরও হয়েছে। কিন্তু প্রতিরোধে নানা ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও আবহাওয়ার কারণে ধসার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। জেলায় এখন ৩৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধসা রোগ দেখা দিয়েছে। যা অবস্থা তাতে এ বার আলুর ফলন কম হবে বলেই আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর। যে আলুচাষিরা বিমা করাননি, লোকসানের মুখে পড়তে পারেন। ২০০৭ সালে এই ভাবেই ধসা রোগের প্রকোপে ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিলেন চাষিরা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী জানান, এ বছর জেলায় ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বৃষ্টি এবং নানা কারণে জেলায় এ বার জলদি জাতের আলু চাষও হয়নি। তারই মধ্যে জেলায় ১৪টি ব্লকে এখনও পর্যন্ত ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধসা রোগ দেখা দিয়েছে। দিন দিন জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে নতুন করে খবর আসছে। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নিমাইচন্দ্র রায় বলেন, “জেলায় ধসা রোগ ক্রমশ বাড়ছে। আমরা প্রচার থেকে শিবির সবই করছি। কিন্তু আবহাওয়া চাষের পক্ষে অনুকূল না হওয়ায় এই দশা। বিষয়টি দফতরের মন্ত্রী থেকে অধিকর্তা সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই জানানো হয়েছে।”

মেদিনীপুরের মঙ্গুরচকে চলছে আলু তোলার কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
আলুচাষে মার খেলেও চাষিরা যাতে তীব্র সঙ্কটে না পড়েন সে জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৪টি ব্লকে (ঘাটাল মহকুমার ৫টি, মেদিনীপুর সদর মহকুমার ৬টি, খড়্গপুর মহকুমার ১টি ও ঝাড়গ্রামের ২টি) বিমার বন্দোবস্ত করেছে প্রশাসন। অর্থাৎ এই ১৪টি ব্লক এলাকার আলু চাষিরা নিয়ম মেনে আবেদন করে বিমার আওতায় আসতে পারেন। এখনও পর্যন্ত এই ১৪টি ব্লকেই ধসার খবর এসেছে বলে কৃষি দফতরের দাবি। অথচ বিমা নিয়ে চাষিদের মধ্যে তেমন সাড়া মিলছে না। আলুর ফলন কম হলে দাম বাড়ার একটা আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিমা নেই যাঁদের, সেই চাষিরা সমস্যায় পড়বেন। রোগের প্রকোপ, খরা কিংবা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে চাষবাসে ক্ষতি হলে অন্তত খরচের টাকা যাতে উঠে আসে তার জন্য বিমা করানোর উপরে গত কয়েকবছর ধরেই জোর দিচ্ছে সরকার। কিন্তু এই নিয়ে গাঁ-গঞ্জে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। প্রত্যন্ত এলাকায় চাষিরা সেই মহাজনের উপর নির্ভরশীল।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। প্রায় লক্ষাধিক চাষি এবার আলু চাষ করেছেন। কিন্তু জেলা কৃষি বিমা দফতর সূত্রের খবর, ৪৫ হাজারের কিছু বেশি চাষি আলু চাষের জন্য ঋণ নিয়েছেন। ঋণ না নিলেও কৃষি দফতরে গিয়ে ফর্ম তুলে প্রতি একরের জন্য ১৫৩৩ টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিলেই সংশ্লিষ্ট চাষি বিমার আওতায় চলে আসতেন। ঋণ না নিলে ওই টাকায় প্রতি একরের জন্য বিমা সংস্থা সংশ্লিষ্ট চাষিকে পরিদর্শনের পর ৩১,৬০০ টাকা দেবে। আর যে সব চাষি কার্ডের মাধ্যমে ঋণ নেবেন, তাঁদের ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বিমার জন্য একর পিছু ২৪২৫ টাকা কেটে একরের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেবে। এত সুবিধা থাকলেও এখনও অনেকেই বিমা করেননি। জেলা কৃষি বিমা সহায়ক নবকৃষ্ণ দাস বলেন, “জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধসা রোগ হলেও মাত্র ১০ হাজার কৃষক বিমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।”
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে বিমার খুঁটিনাটি নিয়ে বেশিরভাগেরই অজ্ঞানতা রয়েছে। গড়বেতা শহরের চাষি নিমাই ঘোষ এবার দু’বিঘা জমিতে আলু চাষ করছেন। তিনি বিমা করেননি। তাঁর দেড় বিঘা জমিতে ধসা লেগেছে। দাসপুর-১ ব্লকের নন্দনপুর পঞ্চায়েতের চাষি অনুপ সরকারেরও দেড় বিঘা চাষ জমির মধ্যে আট কাঠায় ধসা লেগেছে। কেন বিমা করাননি? নিমাইবাবুর বক্তব্য, “ঋণ নিলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও ভাল ব্যবহার করেন না। আর বিমা করালেই টাকা পাওয়া যাবে, এমনটা জানা নেই। জানলে অবশ্যই করতাম।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.