আবহাওয়ার পরিবর্তনের জেরেই এ বার উত্তরবঙ্গ ফুলমেলা হবে ‘গ্রিন হাউসে।’ রাজ্যে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রথমবার ফুলমেলা হচ্ছে বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। ৭ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার থেকে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে ফুলমেলা। শিলিগুড়ি হর্টিকালচারাল সোসাইটির উদ্যোগে এই মেলা চলবে ১১ ফেব্রুয়ারি অবধি।
প্রতিবারই শীতের সময় এই মেলা হয়। কিন্তু এ বার আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনের জেরে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই ফুলমেলার উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়েন। দিনের গরম রাতের ঠান্ডার জন্য বাহারি ফুল ও অর্কিডের রঙে প্রভাব পড়ার কথা বিভিন্ন এলাকার প্রতিযোগীরা জানিয়ে দেন। শেষে উদ্যোক্তারা বৈঠক করে ওই গ্রিন হাউসে এবারের মেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বুধবার থেকে সবুজ নেটের কাপড় গিয়ে স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে গ্রিন হাউস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে জোরকদমে। মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত সেন বলেন, “পাঁচ দিন বিভিন্ন ফুল, গাছ, অর্কিড মেলায় থাকবে। কিন্তু আবহাওয়ার জন্য সেগুলির রং কালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই গ্রিনহাউস করা হচ্ছে। এর জন্য অতিরিক্ত খরচও হচ্ছে। রাজ্যে এ ভাবে কোথাও ফুলমেলা হয়নি। আগামীবার প্রাঙ্গণে আমরা খোলা কোনও অংশ রাখব না বলে এখনই ঠিক করেছি।” তিনি জানান, প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা বাজেটের মেলার একটি অংশ গ্রিন হাউস তৈরি করতে খরচ হচ্ছে।
বর্তমানে উত্তরবঙ্গে দিনের বেলায় তাপমাত্রা বেশি। রাত বাড়তেই পড়ছে কনকনে ঠান্ডা। আবহাওয়াবিদদের মতে, সম্প্রতি জম্মু কাশ্মীর থেকে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা’র জেরে উত্তরের আবহাওয়ার এই পরিবর্তন হয়। বর্তমানে অসমের দিকে ওই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বইয়ে গেলেও উত্তরবঙ্গে রয়ে গিয়েছে, নিম্নচাপ ও ঘন কুয়াশা। বাতাসে রয়েছে প্রচুর জলীয় বাষ্প। তার জেরেই খোলা আকাশের নীচে বেশি সময় থাকলে ফুল বা অর্কিড কালো হয়ে যেতে পারে।
১৯৮৪ থেকে শিলিগুড়ি হর্টিকালচার সোসাইটির উদ্যোগে উত্তরবঙ্গ ফুলমেলা হচ্ছে। প্রথমবার মাত্র ১৫ জন প্রতিযোগী ৩৩০টি ফুলের টব নিয়ে মেলায় আসেন। এ বার ফুলমেলার ২৯-তম বছর। এ বার কলকাতা, সোদপুর, আরামবাগ, বালুরঘাট, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, ডুয়ার্স, সিকিম, দার্জিলিঙের তিন মহকুমা মিলিয়ে ৬০০ প্রতিযোগী আসছেন। ৯০টি বিভাগে ৩০০০ হাজার ফুলের টব থাকছে। মরশুমি ফুল, গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কাকটাস, অর্কিড, বনসাই, ফলের গাছ ছাড়াও ফ্লোরাল ডেকোরেশন, হোম গার্ডেনিং, রুফ গার্ডেনিং, মিনিয়েটর গার্ডেনের মত নানা প্রদর্শনী থাকছে। নানা প্রান্তের ৫১টি নার্সারি সংস্থা মেলায় যোগ দেবে। মেলার উদ্বোধন করবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব।
এ বারের মেলার মূল আকর্ষণ একটি গাছে ২২০০টি চন্দ্রমল্লিকা ফুল এবং আরেকটিতে ২০০টি নারকেল কুল। জলপাইগুড়ির এক বাসিন্দার তৈরি ওই দুটি গাছকে এবার মেলার মূল আকর্ষণ হিসাবে রাখা হয়েছে। মেলার কার্যকরী সভাপতি নান্টু পাল জানান, ফুল ছাড়াও ক্রেতা-বিক্রেতাদের বৈঠক, সুবজায়ন ও দূষণ নিয়ে সেমিনার ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অন্তাক্ষরী, আবৃত্তি, আন্ড স্কুল কুইজ, শিশুদের ফ্যাশন শো, বসে আঁকা প্রতিযোগিতায় ১ হাজার উপরে শিল্পী ও প্রতিযোগী অংশ নেবেন। এবার ফুলমেলার বিভিন্ন বিভাগের বিজয়ীদের ২৮০টি ট্রফি দেওয়া হবে। তারমধ্যে প্রথমটি ‘গোন্ড ট্রফি’, দ্বিতীয়টি ‘সিলভার ট্রফি’। |