|
|
|
|
জনার্দনের কথায় ঝড়, অবস্থা সামাল দিতে আসরে সনিয়া
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৫ ফেব্রুয়ারি |
জাতপাতের বদলে আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে কাল বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জনার্দন দ্বিবেদী। সেই বিবৃতির জেরে দলের ভিতরে-বাইরে-সংসদে চরম অস্বস্তিতে পড়ল কংগ্রেস। দাবি উঠল, সংরক্ষণ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করুক কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। অবস্থা সামাল দিতে আসরে নামতে হল দলের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে। দু’পাতার বিবৃতি দিয়ে সনিয়া বললেন, “তফসিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান সম্পর্কে কারও সংশয় থাকা উচিত নয়। কংগ্রেসই ওই নীতি প্রণয়ন করেছে, কংগ্রেসই তাকে শক্তিশালী করেছে। ভবিষ্যতেও কংগ্রেস এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা কায়েম রাখার পক্ষেই সওয়াল করবে।”
জনার্দন কাল এ-ও বলেছিলেন, রাহুল গাঁধী দলের ভবিষ্যৎ নেতা। কিন্তু কেউ প্রকৃতপক্ষে ভবিষ্যতের নেতা হয়ে উঠতে চাইলে তাঁকে জাত ও সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে সমান অধিকারের কথা বলতে হবে। জনার্দনের এই মন্তব্যের পর কেউ কেউ সন্দেহ করেছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে হয়তো নয়া চমক দিতে চাইছেন রাহুল। তাই জনার্দনকে দিয়ে এই কথা বলিয়ে জল মাপা হচ্ছে। ঘনিষ্ঠ মহলে জনার্দন নিজেও বলে থাকেন, তাঁর বিবৃতি মানে সনিয়া গাঁধীরই বিবৃতি। কিন্তু সংরক্ষণ নিয়ে জনার্দনের বিবৃতির নেপথ্যে যিনিই থাকুন না কেন, রাত পোহাতেই কংগ্রেস নেতৃত্ব দেখেন, পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে।
বিরোধীরা তো বটেই, সপা-বসপা-র মতো সরকারের সমর্থক দলগুলিও এর বিরুদ্ধে সরব ছিল আজ। মায়াবতী বলেন, “জনার্দন বলছেন মানে এটা সনিয়ারও মত। আসলে কংগ্রেস হল দলিত-বিরোধী।” কংগ্রেস সামাজিক সুবিচারকে শেষ করে ফেলতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব। কংগ্রেসের নেতা তথা জাতীয় তফসিলি জাতি-উপজাতি কমিশনের চেয়ারম্যান পি এল পুনিয়াও বলেন, “জনার্দনের মন্তব্যের ঘোর নিন্দা করছি। সরংক্ষণ ব্যবস্থার কার্য-কারণ, সংবিধান, সভার বিতর্ক ইত্যাদি কিছুই বোঝেন না তিনি।”
শোরগোল হয় সংসদেও। শেষে রাজ্যসভায় সংসদীয় মন্ত্রী রাজীব শুক্ল বলেন, “আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণের কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।” দলীয় ভাবেও কংগ্রেসের তরফে আজ বিকেলে বলা হয়, জনার্দনের মতামত তাঁর ব্যক্তিগত। কিন্তু এর পরেও দলের নেতারা বুঝতে পারেন, সনিয়ার বিবৃতি ছাড়া হয়তো এই বিতর্ক ধুয়ে ফেলা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত বিবৃতি দেন সনিয়া। তাতে সনিয়া বলেন, “তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ক্ষমতায়ন কংগ্রেসের একটি বিশ্বাসের বিষয়। ১৯৫০-এ কংগ্রেসই সরকারি চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে তফসিলি জাতি-উপজাতির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। একই ভাবে নব্বইয়ের দশকে ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার নেপথ্যেও ছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের দৃঢ় বিশ্বাস, এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকা উচিত।”
জাতিভিত্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থায় ইউপিএ সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তাঁর ওই বিবৃতিতে মনে করিয়ে দিয়েছেন সনিয়া। বলেছেন চাকরি, পদ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আনা দু’টি বিলের কথা। তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি-দের জন্য বৃত্তির কথা বলেছেন। এমনকী, বেসরকারি ক্ষেত্রেও জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেস সচেষ্ট। সনিয়ার কথায়, “শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চাপিয়ে দেওয়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এই ব্যবস্থা জরুরি।”
সনিয়া অবশ্য জানিয়েছেন যে, ২০০৯-এর লোকসভা ভোটের ইস্তাহারে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য পৃথক সরংক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেছিল কংগ্রেস। কিন্তু তা করা হবে তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং ওবিসি-দের সংরক্ষণের বর্তমান ব্যবস্থাকে অটুট রেখেই। বিষয়টি নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। |
|
|
|
|
|