এগারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সিতারার। ২০ বছরের সংসার জীবনে কোনও দিনই শান্তি পাননি। এক দিন মাদকাসক্ত বর এসে বলল, গা থেকে গয়নাগাঁটি সব খুলে দিয়ে দিতে, হেরোইন কিনবে। সিতারা কথা না শোনায় বড় পাথরের চাঁই মাথায় ঠুকে দেয় বর। জ্ঞান ফিরতেই কোপাতে শুরু করে ছুরি দিয়ে। সব শেষে কেটে দেয় নাক ও উপরের ঠোঁট। টিভি চ্যানেল, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দৌলতে খবরটা দেশের সীমানা পেরিয়েছিল সে বার। এগিয়ে আসে বিভিন্ন বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন। তাদের উদ্যোগে বেঁচেও যান সিতারা। মামলা অবশ্য চলছেই।
আফগানিস্তানে এমন সিতারার সংখ্যা নেহাত কম নয়। বরং ঘরে ঘরে। আর চার দেওয়ালের মধ্যে সেই পারিবারিক হিংসায় এ বার নতুন সংযোজন। প্রতিবাদের ভাষাটাকেও গলা টিপে মারতে আইনের মারপ্যাঁচ।
নয়া নিয়মে মেয়েদের উপর হিংসার ঘটনায় মেয়েটির আত্মীয়রা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারবে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-দাদা-ভাই বা বাড়ির অন্য কোনও পুরুষ সদস্যের হাতে নির্যাতিত হতে হয় মেয়েদের। এ বার বিচার শুরু হলেও সাক্ষী-প্রমাণ জুটবে না। এটা আসলে আফগানিস্তানের পরিবার আইন লঘু করতে ছোট্ট একটা বদল। পাশ হয়ে গিয়েছে পার্লামেন্টের উচ্চ ও নিম্ন দুই কক্ষেই। এখন শুধু প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের একটা সইয়ের অপেক্ষা। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। একটি নারী সুরক্ষা সংগঠনের ডিরেক্টর মানিজা নাদেরি বলেন, “এ বার মেয়েদের উপর হিংসার ঘটনায় ন্যূনতম বিচারটুকু চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।... নৃশংস অপরাধীদের শাস্তিও হবে না।” মানবাধিকার সংগঠনগুলির বক্তব্য, নয়া আইনে যে কোনও আফগান পুরুষ স্ত্রী, সন্তান, বোনের গায়ে হাত তুলতে পারবে নির্ভয়ে। লাগামহীন ভাবে চলবে সম্মান রক্ষার্থে খুন, জোর করে বাল্যবিবাহ, মেয়ে বেচাকেনা থেকে দেহব্যবসা।
তালিবান জমানা শেষ হওয়ার পর দেশটা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। আফগান সরকার তাতেও রাশ টানতে চলেছে। আর তাতে সিতারার মতো কেউ আর আদালতের দোর পর্যন্তও যেতে পারবে না। শাস্তি পাবে না সাহার গুলের অপরাধীরা। শৈশব কাটতে না কাটতেই বিয়ে হয়ে যায় সাহার গুলের। শ্বশুর বাড়িতে তাকে একটা খুপরি কামরায় আটকে রাখা হত। খাবার নয়, জুটত গরম ছেঁকা, চাবুকের ঘা। অপরাধ, সংসারে টাকা দিতে যৌনবৃত্তিতে যেতে চায়নি সে।
নারী ও শিশু সুরক্ষা সংগঠনের অধিকর্তা সেলে গফ্ফরের কথায়, “তালিবান জমানার শেষে সবাই প্রথম প্রথম সংবাদমাধ্যম, সরকারকে ভয় পেয়ে চলত। এখন মার্কিন সেনাও ফিরে যাচ্ছে। তালিবানি শাসন ফিরে আসবে না তো, আশঙ্কায় মেয়েরা।”
এ পরিস্থিতিতে মেয়েদের বাঁচাতে পারেন একমাত্র প্রেসিডেন্ট কারজাই। পার্লামেন্টে আইন পাশ হয়ে গেলেও প্রেসিডেন্ট সই না করলে তা কার্যকর হবে না। যদিও কারজাইয়ের উপর ভরসা নেই নারী সুরক্ষা সংগঠনগুলোর। গত পাঁচ বছরে মেয়েদের থেকে একের পর এক অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মৌন থেকেছেন। প্রাদেশিক কাউন্সিলে নারী সংরক্ষণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছরই নারী হিংসা প্রতিরোধ বিল পাশ হতে দেয়নি পার্লামেন্ট। কারজাই চুপ থেকেছেন। আইন মন্ত্রক ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের শাস্তি পাথর ছুড়ে মারা। তাতেও নীরব কারজাই। এ বারেও তিনি ছাড়পত্র দিয়ে দেবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত। বলছেন সেলে-র মতো আরও অনেকে। |