সাম্প্রদায়িক দল জামাতে ইসলামি ও তার সব সংগঠনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ না-করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিলেন গণজাগরণ মঞ্চের হাজার হাজার কর্মী। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, যুদ্ধাপরাধীদের কার্টুন ও তাঁদের ফাঁসির দাবি জানানো নানা পোস্টার নিয়ে এ দিন ‘জাগরণ যাত্রা’ নামে শোভাযাত্রা করেন ‘নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়া গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। তার পর তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধের এই শপথবাক্য সমবেত কণ্ঠে পাঠ করেন। |
কুখ্যাত জামাত নেতা কাদের মোল্লা ওরফে ‘কসাই কাদের’কে যুদ্ধাপরাধ আদালত ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে ঠিক এক বছর আগে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে অবস্থান শুরু করে কিছু তরুণ ব্লগার। ৫ ফেব্রুয়ারি এই সাজা ঘোষণার পরে উদ্ধত কাদের মোল্লা যেমন ক্যামেরার সামনে বিজয় উল্লাস করেছিলেন, জামাত-শিবিরের কর্মীরা হরতালের নামে মেতে উঠেছিল বেপরোয়া বোমাবাজিতে। তার মধ্যেই প্রাণ বাজি রেখে কিছু তরুণের সেই সাহসী আন্দোলন গোটা দেশের অসাম্প্রদায়িক মানুষের নজর কেড়ে নেয়। স্লোগান ওঠে ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’, ‘জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করো’, ‘সব রাজাকারের বিচার চাই’। জনা তিরিশ তরুণের রাতভর অবস্থান দিন তিন-চার গড়াতে না-গড়াতেই পরিণত হয় লাখো মানুষের সুবিশাল জন-সাগরে। একাত্তরে গণহত্যা, লুঠ ও ধর্ষণের পাণ্ডা জামাত নেতাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে অবস্থান চলে মাসের পর মাস। বাংলাদেশের শহরে শহরে তৈরি হয় গণজাগরণ মঞ্চ। বিদেশেও বাংলাদেশিরা এমন মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলন শুরু করেন।
চাপে পড়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি চেয়ে আপিল করতে বাধ্য হয় সরকার। আদালত সেই আপিল গ্রহণ করে রায় পুনর্বিবেচনাও করে। ফাঁসির আদেশ হয় আরও কয়েক জন শীর্ষ জামাত নেতারও। কিন্তু জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা না-করা নিয়ে সরকারের দোলাচল চলতেই থাকে। চলতে থাকে শাহবাগের আন্দোলনও। শাহবাগ চত্বরের নাম দেওয়া হয় ‘প্রজন্ম চত্বর’। এর পর ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ কার্যকরও করা হয়। বিজয় পালন করে অবস্থান প্রত্যাহার করেন শাহবাগের তরুণেরা। কিন্তু জানিয়ে দেন, জামাত-শিবির নিষিদ্ধ না-হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এর পরে জামাত যখনই মাথা তুলেছে, গর্জে উঠেছে শাহবাগ। নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গায় সমাজের কিছু দুর্বল শ্রেণির মানুষের ওপরে ভয়ঙ্কর আক্রমণ শানায় জামাত। ঢাকা থেকে দূরবর্তী সেই সব জায়গায় মিছিল করে গিয়ে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ান গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। বিভিন্ন জায়গায় পর পর বোমা হামলা চালিয়েও সেই মিছিল থামাতে ব্যর্থ হয় জামাতের জঙ্গিরা।
তার মধ্যেই আজ এক বছর পার হল বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এই আন্দোলন। দেশের সর্বত্র এ দিন পালিত হয়েছে ‘গণজাগরণ দিবস’। সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান ইমরান এইচ সরকার, লাকি আখতার, বাপ্পাদিত্য বসুর মতো মঞ্চের নেতারা। বিকেল তিনটেয় জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় দেশের সব গণজাগরণ মঞ্চে। তার পরে জাগরণ যাত্রা। তার আগে হাজারো তরুণ মুষ্ঠিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুড়ে শপথ নেন জামাতকে নিষিদ্ধ না-করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। নতুন বাংলাদেশ গড়ার। |