মন্ত্রী সমর্থন করছেন না, দলেরই সাংসদ নির্মাণকারী সংস্থার হয়ে হাইকোর্টে মামলা লড়ছেন। কিন্তু তৃণমূলেরই একাংশের ইন্ধনে নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য টানা ১০০দিন ধরে বর্ধমানে উপনগরী গড়ার কাজ আটকে রেখেছেন কিছু জমিমালিক। যাঁরা ওই উপনগরীতে ফ্ল্যাট বা বাংলো নিয়েছেন, তাঁরা পড়েছেন বিপাকে।
বাম আমলেই বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে গোদা মৌজায় ওই প্রকল্পের জন্য ৭৭৯ বিঘা জমি অধিগ্রহণের তোড়জোড় হয়েছিল। জমিমালিকদের সংগঠন, পশ্চিম বর্ধমান কৃষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল ওয়ারা হিফজুল আজিজের দাবি, “প্রায় ১২০০ চাষির জমি নেওয়া হয়েছে। ২০০৫ সালে অধিগ্রহণ শুরুর সময়ে জমির দাম ঠিক হয়েছিল বিঘায় ৩ লক্ষ টাকা।” বর্ধিত দাম চেয়ে ২০০৬ সালে জেলা জজ আদালতে মামলা করেন কয়েক জন চাষি। তাঁদের দাবি, ২০১০-এর নভেম্বরেই বিঘা প্রতি ৩৪ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে রায় দেয় আদালত।
কিন্তু বিষয়টি আর এগোয়নি। নির্মাণকারী সংস্থার এক পদস্থ অফিসার বলেন, “একটা দামে আমরা জমি নিয়েছিলাম। তার অনেক গুণ বেশি কী করে দেব? আন্দোলনকারীরা গায়ের জোরে আমাদের সমস্ত কাজ বন্ধ করিয়ে দিয়েছে। আমরা বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের (বিডিএ) দিকে চেয়ে রয়েছি।” রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক তথা বিডিএ-র নতুন চেয়ারম্যান রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় জমিমালিক ও নির্মাণকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু সমাধানসূত্র মেলেনি। অগত্যা জেলা জজ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে চলে যায় সংস্থাটি।
তৃণমূল নেতা খোন্দোকার ফজলুল রহমান ওরফে সবুজ মাস্টার নিজেই কৃষি কল্যাণ সমিতির কার্যকরী সভাপতি। তাঁর বক্তব্য, “আইনি পথে দাবি না মেটায় গত ২৯ অক্টোবর থেকে উপনগরীর সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। তার জেরে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রবিরঞ্জনবাবু দাবি সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আমাদেরই এক আইনজীবী সাংসদ হাইকোর্টে ওই সংস্থার হয়ে মামলা লড়ছেন। তিনি জানুয়ারিতে জেলা জজ আদালতের মাধ্যমে পরপর তিন দিন ১৪৪ ধারা জারি করিয়ে আন্দোলনকারীদের উচ্ছেদের চেষ্টা করেন। তবে আদালত তাঁর আবেদনে সাড়া দেয়নি।”
নির্মাণকারী সংস্থার এক পদস্থ অফিসারের বক্তব্য, “আমরা জমির দাম সামান্য বাড়াতে রাজি আছি। তা বিডিএ-কে জানানো হয়েছে। আশা করি, তারা সমস্যার সমাধান করবে।” রবিরঞ্জনবাবুর আশ্বাস, “নির্মাণকারী সংস্থার প্রস্তাব নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে আলোচনায় বসব। চাষিদের স্বার্থের দিকে নজর রাখা হবে। মনে হয়, আলোচনা মাধ্যমেই গোলমাল মেটানো যাবে।” |