আবেদন করেছিলেন প্রায় আড়াই হাজার জন। তার মধ্যে ঋণের জন্য অনুমোদন পেয়েছে মাত্র ১৫৯টি। বর্ধমান জেলায় ক্ষুদ্রশিল্প গড়তে আগ্রহীদের অধিকাংশই ঋণ না পাওয়ার পিছনে অবশ্য অজ্ঞানতাকেই দায়ী করছেন আধিকারিকেরা। তবে ঋণ পেতে কী কী নিয়ম মানতে হবে, তা শিল্পোদ্যোগীদের জানাতে প্রশাসনের তরফে যে এখনও কোনও উদ্যোগ হয়নি, মেনে নিয়েছেন কর্তারা।
জেলা ক্ষুদ্র শিল্প বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে বর্ধমান, কালনা ও কাটায়া মহকুমার ২২টি ব্লক ও ৬ টি পুরসভা এলাকায় প্রধানমন্ত্রী কর্ম সংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পে (পিএমইজিপি) ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ঋণের আবেদন করেছিলেন ২৫২৬ জন। তাঁদের মধ্যে ২১৩১ জনের আবেদনই বাতিল হয়। বাকি ৩৯৫টি পাঠানো হয়েছিল জেলা টাস্ক ফোর্স কমিটিতে। সেখানে ঋণ দেওয়ার জন্য অনুমোদিত হয়েছিল মাত্র ১৫৯টি আবেদনপত্র। ১৪৯ জনকে ঋণ দিয়েছে ব্যাঙ্ক।
বর্ধমানের উৎসব ময়দানে হস্তশিল্প মেলা প্রাঙ্গণে ক্ষুদ্রশিল্প দফতর যে ফ্লেক্স টাঙিয়েছে, জেলায় ঋণ চেয়ে প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি জানানো হয়েছে সেখানেও। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের নিজের জেলায় এমন পরিস্থিতির জন্য আবেদনকারীদের ভুলভ্রান্তিকেই দায়ী করেছেন কর্তারা। জেলা শিল্প কেন্দ্রের ম্যানেজার বিশ্বজিৎ মণ্ডলের কথায়, “ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের সচতনতার অভাবেই এমন ঘটছে। কারণ, যে জমিতে তিনি শিল্প গড়তে চান তার মিউটেশন সার্টিফিকেট দিতে হয় ওই আবেদনপত্রের সঙ্গে। পঞ্চায়েত বা পুরসভার নো-অবজেকশন সার্টিফিকেটও দিতে হয়। দমকল বা পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্রও লাগে। সেগুলি না দিয়েই আবেদন করছেন বেশির ভাগ শিল্পোদ্যোগী। এ ছাড়া বেশ কিছু আবেদন পত্র বাতিল হয়েছে সই না থাকা বা ঠিকানা লিখতে ভুল করার জন্যও।”
এই প্রকল্পের আওতায় পুর এলাকায় সর্বাধিক ২৫ লক্ষ ও পঞ্চায়েত এলাকায় সর্বাধিক ৩৫ লক্ষ টাকা ঋণ পেতে পারেন কোনও শিল্পোদ্যোগী। জেলা ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের জেনারেল ম্যানেজার দীপঙ্কর চক্রবর্তী জানান, পিএমইজিপি-র অধীনে নলকূপের বাকেট, প্রতিলিপির যন্ত্র, ছাপার যন্ত্র, মিষ্টি তৈরি, ব্রান অয়েল কারখানা, বিস্কুট তৈরি ইত্যাদি শিেল্পের জন্য ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। দীপঙ্করবাবুও বলেন, “কিন্তু এই শিল্প গড়তে যাঁরা আবেদন করছেন, তাঁদের নথিপত্র ঠিক নেই। অনেকে সমস্ত তথ্য দিতে পারছেন না। অনেকের নামে আগে ব্যাঙ্ক ঋণ রয়েছে। তা শোধ না করে তাঁরা ফের ঋণের জন্য আবেদন করছেন। এ সব কারণেই এত আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যাচ্ছে।”
এই সমস্যা দূর করতে তাঁদের তরফে কোনও উদ্যোগ বা ক্ষুদ্রশিল্প স্থাপনে আগ্রহীদের কী ভাবে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে, তা জানানোর কোনও ব্যবস্থা হয়েছে কি না, সে প্রশ্নে বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “এখনও এই ধরনের কোনও উদ্যোগ হয়নি। তবে ভবিষ্যতে কর্মশালা করে এই শিল্পোদ্যোগীদের আবেদনপত্র ঠিক ভাবে তৈরি করতে শেখানোর কথা ভাবছি আমরা।” কবে থেকে এই ধরনের কর্মশালা হবে, তা অবশ্য তিনি জানাতে পারেননি।
ক্ষুদ্রশিল্প দফতরের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ আবেদনকারীদের মধ্যে অল্প জনের ঋণ পাওয়ার সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর আবার দাবি, “অনেক সময়ে ব্যাঙ্কগুলি সমস্ত কাগজপত্র ঠিক থাকলেও আবেদনকারীকে ঋণ দিচ্ছে না বলে জেনেছি। কোনও এক জন কেন ঋণ পাচ্ছেন না, তা খতিয়ে দেখতে ব্যাঙ্ক, আবেদনকারী ও ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের লোকজনকে এক সঙ্গে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।” আবেদনকারীরা যাতে নতুন করে কাগজপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পান, তা দেখা হবে বলে আশ্বাস মন্ত্রীর। |
আবেদনের খতিয়ান |
• বর্ধমান, কালনা, কাটোয়ার ২৫২৬ জন ক্ষুদ্র শিল্প গড়তে ঋণ চেয়ে আবেদন করেন ২০১৩ সালে।
• প্রথমেই বাতিল হয় ২১৩১টি আবেদনপত্র।
• শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছেন মাত্র ১৪৯ জন।
• আবেদনপত্রে ভুলভ্রান্তি ও ঠিক মতো নথিপত্র না দেওয়ায় বাতিল অধিকাংশ আবেদন।
• কর্মশালা করে ঠিক ভাবে আবেদন করতে শেখানোর আশ্বাস। |
|