রাস্তা পেরোতে গিয়ে এক পা এগিয়ে দু’পা পিছিয়ে আসছিলেন এক বৃদ্ধ। দু’দিক থেকেই দ্রুতগতিতে একের পর এক গাড়ি ছুটে আসছে। সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা একমাত্র ট্রাফিক কর্মী। গাড়ির ঝাঁক না কমায় শেষ পর্যন্ত নিজেই গাড়িকে হাত দেখিয়ে কোনওক্রমে রাস্তা পেরোলেন ওই বৃদ্ধ। এই চিত্র অবশ্য কোনও ব্যতিক্রম নয়। ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের ত্রিলোকচন্দ্রপুর মোড়-সহ বিভিন্ন মোড়ে প্রায়ই এই ছবি দেখা যায়।
প্রায় ১৭০ কিমি দীর্ঘ পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়ক হল উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। শান্তিনিকেতন, তারাপীঠ, বক্রেশ্বরে যেতে হলে এই রাস্তা হল অন্যতম মাধ্যম। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্য সড়কের মধ্যে প্রায় ২৩ কিলোমিটার রাস্তা হল বর্ধমান জেলার অন্তর্গত। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনই প্রচুর লরি ও অন্যান্য গাড়ি চলাচল করে। এই জাতীয় সড়কটির মাঝে রয়েছে অনেকগুলি মোড়। সেগুলিতে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থার দাবি অনেক দিনের। এই মোড়গুলির মধ্যে অন্যতম হল ত্রিলোকচন্দ্রপুর মোড়। এই মোড় থেকে একটি রাস্তা গুসকরার দিকে চলে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম সাহা, তারক সাহারা জানান, ওই মোড়ে ট্রাফিকের দাবিতে পুলিশের কাছে বারবার আবেদন জানানোর পরে কিছু দিন আগে পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রামেরই এক যুবককে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তাতে অবশ্য সমস্যার খুব একটা উন্নতি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক জনের পক্ষে গাড়ির চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। এলাকায় গিয়েও সেই ছবিই দেখা গিয়েছে। |
ত্রিলোকচন্দ্রপুর মোড়ে তবুও এক জন ট্রাফিক কর্মী মোটামুটি নিয়মিত থাকেন। কিন্তু এই রাজ্য সড়কেরই এগারো মাইল মোড়ে গিয়ে কোনও ট্রাফিক কর্মীই চোখে পড়েনি। অথচ, এই মোড় থেকেই ইছাই ঘোষের দেউল যাওয়া যায়। অযোধ্যা, বনকাটি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ বাস ধরতে এই এগারো মাইল মোড়ে আসেন। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই মোড়েও পুলিশের তরফে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য এক যুবককে নিয়োগ করা হলেও তিনি মাঝেমধ্যেই আসেন না। ফলে অসুবিধায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দারা পূর্ণ সময়ের জন্য একটি ট্রাফিকের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। ওই মোড়ে গিয়ে দেখা গিয়েছে, তখন কেউ ট্রাফিকের দায়িত্বে ছিলেন না।
এগারো মাইল মোড় থেকে দুশো মিটার দূরেই রয়েছে আর একটি মোড়। এই মোড় থেকে অনেকেই গুসকরা, ভেদিয়া ও বর্ধমান যাওয়ার বাস ধরেন। সিউড়ি যাওয়ার বেশ কয়েকটি বাস এই মোড় দিয়ে এসেই রাজ্য সড়কে ওঠে। কিন্তু এই মোড়েও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য কাউকে চোখে পড়েনি। এলাকাবাসীর দাবি, এই মোড়ে বেশির ভাগ সময়েই যানজট লেগে থাকে।
পুলিশ জানিয়েছে, পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়কের কাঁকসা থানার অন্তর্গত মোড়গুলি দুর্ঘটনাপ্রবণ। সেই কারণে ত্রিলোকচন্দ্রপুর মোড়ে এলাকার কারখানা কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে পুলিশের উদ্যোগে এলাকারই এক যুবককে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রাখা হয়েছে। স্থানীয় কারখানা কর্তৃপক্ষই তাঁর পারিশ্রমিক দেয় বলেই জানিয়েছে পুলিশ। এগারো মাইল মোড়ে একজন গ্রামীণ পুলিশ কর্মীকে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি অন্য কাজে যুক্ত থাকায় সব সময় ওই মোড়ে উপস্থিত থাকতে পারেন না। পুলিশের এক কর্তা বলেন, এই রাজ্য সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এলাকার বিধায়ক সুনীল মণ্ডল বলেন, “এই রাস্তার ট্রাফিক ব্যবস্থা কী করে আরও উন্নত করা যায়, সে ব্যাপারে আমি পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করব।” |