কারও কোঁচড়ে চিড়ে-মুড়ি। কেউ বা বেঁধে এনেছেন সরস্বতী পুজোর খিচুড়ি। ‘মোদী স্পেশাল’ ট্রেনে চেপে কলকাতায় চলেছেন আট থেকে আশি।
ব্রিগেডে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা আজ, বুধবার। সেই সমাবেশেই যোগ দিতে উত্তর দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে ২২ লাখ টাকায় একটি আস্ত ট্রেন ভাড়া করে মঙ্গলবার রাতে কলকাতা রওনা হয়েছেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা। সেই ট্রেনেরই মুখে মুখে নাম হয়ে গিয়েছে ‘মোদী স্পেশ্যাল’। যার পোশাকী নাম ‘ডেলিগেট স্পেশ্যাল’।
ট্রেনে চড়া অনেকেরই প্রথম বার। তার উপরে সে ট্রেনে সওয়ার হলেই নরেন্দ্র মোদীকে দেখা, কলকাতা ঘোরার সুযোগ। তাই ট্রেন ছাড়ার অনেক আগে থেকেই যেন মেলার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল বালুরঘাট স্টেশনে। এ দিন বিকেল থেকেই স্টেশনে ভিড় জমাচ্ছিলেন জেলার নানা এলাকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। তপন, কুমারগঞ্জ, হিলির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অনেকে এসেছেন দলের ভাড়া করা বাসে, অনেকে ভ্যানে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগও বাড়ছিল তাঁদের। বারবার নেতাদের জিজ্ঞাসা করছিলেন, “দাদা, ‘মোদী স্পেশ্যাল’ কখন আসবে?” |
কুমারগঞ্জের সোমদিয়া গ্রাম থেকে আসা সত্তরোর্ধ্ব বৃ্দ্ধা যশোদা রায় বললেন, “শুনলাম মোদী প্রধানমন্ত্রী হবেন! তাই তাকে দেখতে চলে এলাম। আর কলকাতাটাও দেখা হয়ে যাবে। আমাদের জন্য কি আর কেউ ট্রেন দেবে?” বিকেল পাঁচটা নাগাদ চলে গেল শেষ ট্রেন কলকাতাগামী গৌড়-লিঙ্ক এক্সপ্রেস। তারপরে স্টেশন চলে যায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদেরই দখলে। বারবার উঠছে মোদীর নামে স্লোগান। জেলা নেতারা সিমেন্টের বেঞ্চে উঠে চেষ্টা করছেন ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার। কিন্তু তাতে কী আর বাধ মানে হাজার দশেক মানুষ! অগত্যা তাঁরা শরণাপন্ন হলেন স্টেশন ম্যানেজারের। রেলের লাউডস্পিকার থেকেই ঘোষণা করতে থাকলেন, “আপনারা শান্ত হয়ে অপেক্ষা করুন। ট্রেন এখনই আসবে। কেউ লাইনের ধারে যাবেন না.....।”
রাত পৌনে ৮টা। দূর থেকে ডিজেল ইঞ্জিনের আলো দেখতে পেতেই স্টেশনে হুড়োহুড়ি। ট্রেন ঢুকতেই দলে দলে লোকেরা উঠে পড়লেন ট্রেনে। ২০টি কামরাই ভরে গেল নিমেষে। কেউ জানলার ধারে বসে পড়লেন। কাউকে আবার উঠতে হল বাঙ্কে। ট্রেনের মেঝেতেই বসতে হল অনেককে। তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে সটান বাঙ্কে উঠে পড়েন তপনের গোফানগর অঞ্চলের বাসুদেবপুর গ্রামের শরদিন্দু বর্মন। তিনি বললেন, “এই ভিড় থেকে বাঁচতে উপরে এলাম। ফেরার সময় ছেলেকে নিয়ে জানলার ধারে বসার চেষ্টা করব।”
রাত ৮টা ১০ নাগাদ যখন ‘মোদী স্পেশ্যাল’ ছাড়ল, তখন তাতে প্রায় হাজার পাঁচেক লোক। কামরায় জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন মণ্ডল বিভিন্ন ব্লকের লোকজনকে একসঙ্গে বসতে সাহায্য করছিলেন। তখনই তাঁর কাছে জেলা সভাপতি গৌতম চক্রবর্তীর ফোন এল। গৌতমবাবু জানালেন, মল্লিকপুর স্টেশনে প্রায় হাজার তিনেক লোক অপেক্ষা করছেন ‘মোদী স্পেশ্যাল’ ধরতে। রঞ্জনবাবু বলেন, “একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করতে জেলা থেকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহকে অনুরোধ করা হয়েছিল। রাজ্য কমিটি তাতে সাড়া দেওয়ায় আমরা অভিভূত। কর্মী-সমর্থকেরাও নরেন্দ্র মোদীকে দেখতে পাবেন বলে উচ্ছ্বসিত।” তিনি জানান, ওই ট্রেন বাবদ বিজেপির বালুরঘাট জেলা কমিটির খরচ হয়েছে ২২ লক্ষ টাকা। ওই পরিমাণ টাকা রেলের কাটিহার ডিভিশনের মালিগাঁও বিভাগে জমা করা হয়েছে।
হিলির মোস্তাফাপুর থেকে ১৮ জনের একটি দলে বসেছিলেন সোনামনি পাহান, রুকনি পাহানেরা। তাঁরা বললেন, “আগে কোনওদিন ট্রেনে চড়িনি! কলকাতাও দেখিনি। অনেকে যাচ্ছে দেখে সাহস করে চলে এলাম।” সাহস করে সদ্যবিবাহিত জা পিঙ্কি রায়কে নিয়ে চলে এসেছেন বালুরঘাটের জলঘরের কৃষ্ণনগর এলাকার কবিতা বর্মনও। তিনি বললেন, “সবই তো নিজেদের এলাকার লোক! তাই ঘুরতে চলে এলাম। ভাবী প্রধানমন্ত্রীকেও দেখতে পাব।” ট্রেন ছাড়তেই অনেকে খুললেন চিড়ে-মুড়ির পুঁটুলি। বালুরঘাটের ঠাকুরপুড়ার অনিল বর্মন আবার তিন সঙ্গীকে নিয়ে বসলেন তাস নিয়ে। তিনি বললেন, “রাতে আর ঘুমোব না। জেগেই কাটিয়ে দেব। ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পাব! সেই উত্তেজনায় ঘুমই আসবে না।” |