কালিয়াচক কলেজ ছাত্র সংসদ ভোটের দিন প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের আরও একজনকে ঘটনার আট দিনের মাথায় গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার রাতে কালিয়াচক থানার সুলতানগঞ্জ এলাকা থেকে ওই অভিযুক্ত, জাকির শেখকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিতে গুলি চালাতে দেখা গিয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃত জাকির কালিয়াচক ১ নম্বর পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি তাবজুল শেখের গাড়ির চালক এবং সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত। মঙ্গলবার ধৃতকে আদালতে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন। ধৃতকে দু’দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।
সোমবার রাতেই আবার কালিয়াচক কলেজের সামনের পেট্রোল পাম্পের পাশ থেকে পুলিশ ৩০ টি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে। তৃণমূলের দাবি, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যাতে ছাত্র সংসদ গঠন করতে না পারে, সে জন্য সিপিএম ও কংগ্রেস বোমা মজুত করে রেখেছে। তাদের অভিযোগ, সংসদ গঠনের দিন কংগ্রেস ও সিপিএম গোলমাল করতে পারে। |
যদিও সিপিএম ও কংগ্রেস তৃণমূল কংগ্রেসের তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে গিয়েছে। আজ, বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে কালিয়াচক ছাত্র সংসদ গঠন করবে।
কলেজের ভোটে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়া, বোমাবাজি করার অভিযোগে পুলিশ আগেই একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে। ইতিমধ্যেই দলের অঞ্চল সভাপতি-সহ চার তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “পুলিশ সুপারকে বলেছি নিরপরাধ কাউকে যেন পুলিশ না ধরে। আমরা পুলিশের কাজে বাধা দিইনি। পুলিশকে বলেছি, কালিয়াচক কলেজ ভোটে যারা যারা গুলি বোমা ছুড়েছে তাদের গ্রেফতার করুন। কালিয়াচক কলেজ ভোটের দিন কংগ্রেস ও সিপিএমের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা যৌথভাবে আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের উপর বোমা গুলি ছুড়েছে। অথচ পুলিশ তাদের কেন ধরতে পারছে না।”
জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার বলেন, “কালিয়াচক কলেজ ভোটে প্রকাশ্যে গুলি বোমা চালানোর অভিযোগে ভিডিও ফুটেজ দেখে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা সকলেই কালিয়াচক কলেজ ভোটে প্রকাশ্যে গুলি ও বোমা ছোড়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল। তাদের সকলকে ধরা হবে।কোনও নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়নি।” কালিয়াচক কলেজের ছাত্র সংসদ ভোটে টিএমসিপি ছাত্র সংসদ দখল করে। ওই দিন ছাত্র সংসদ ভোটকে ঘিরে তৃণমূল ও সিপিএম ও কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। উভয়পক্ষ একে অপর লক্ষ করে প্রকাশ্যে যথেচ্ছ বোমা, গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলা এই ‘লড়াই’ প্রায় দুই মাফিয়া গোষ্ঠীর লড়াইয়ের চেহারা নিয়েছিল বলেও বাসিন্দারা অভিযোগ তোলেন। পুলিশের সামনেই তৃণমূল ও সিপিএম কংগ্রেসের সমর্থকরা ২০০ রাউন্ডের বেশি গুলি ও শতাধিক বোমা ছুড়লেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
|