সরকারি নির্দেশ অমান্য করে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের বেশির ভাগ চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে নানা ওষুধের কোম্পানির নাম লিখে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনেরা ওই প্রেসক্রিপশন নিয়ে হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে গিয়ে সরকারি ছাড়ে ওষুধ কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না। নিয়ম মতো, চিকিৎসকদের ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার কথা। আর তা মেলার কথা নায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে। এ পরিস্থিতিতে রোগীর আত্মীয়দের বাইরের ওষুধের দোকান থেকে বেশি দামে ওষুধ কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের সুপার তথা প্রোগ্রেসিভ ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বিধায়ক অমল আচার্য বলেন, “রোগীর স্বার্থে সরকার ৫৩.৩ শতাংশ ছাড়ে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু করে। সেখানে জেনেরিক নামের ওষুধ বিক্রি হয়। সরকারি প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকদেরও তাই লেখার কথা। তাই কেনও তা হচ্ছে না খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের কর্ণধার পীযূষ সরকার জানান, হাসপাতালের প্রায় ৯০ শতাংশ চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে নানা ওষুধের ‘ব্রান্ডেড’ নাম লিখছেন। ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা না থাকায় বিকল্প ওষুধ থাকলেও তা সরকারি ছাড়ে রোগীদের কাছে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে জীবনদায়ী ১৪২টি ওষুধ বাইরে থেকে ৫৩.৩০ শতাংশ কম দামে বিক্রি হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বাপি ভৌমিক ও জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ এক সুরে অভিযোগ করেন, “বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে চিকিৎসকদের গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। সেকারণে, অনেক চিকিৎসকই প্রেসক্রিপশনে ব্রান্ডেড ওষুধের নাম লিখছেন। এতে রোগীদের বেশি দামে ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর উদাসীন কেন বোঝা যায় না।”
মঙ্গলবার হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ওষুধ কিনতে যান রায়গঞ্জের দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা শিবানী মজুমদার নামে এক প্রসূতি। তিনি জানান, বহির্বিভাগের এক জন চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে দুটি ওষুধের ব্রান্ডেড নাম লিখে দেওয়ায় সরকারি ছাড়ে ওষুধ পাইনি।” ইটাহার বালিজোল এলাকার বাসিন্দা আবাদুর সালামের অভিযোগ, বহির্বিভাগের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাশির সিরাপের ব্রান্ডেড নাম লিখে দেওয়ায় বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন জেলা সম্পাদক দেবব্রত রায় এ বিষয় বলেন, “সরকারি প্রেসক্রিপশনে ওষুধের ব্রান্ডেড নাম লেখাটা সঠিক কাজ নয়। কেউ তা করলে থাকলে সঠিক কাজ করছেন না। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধ ‘মাল্টি কম্পোজিশন’-এ তৈরি হওয়ায় চিকিৎসকেরা তা লিখতে বাধ্য হন।” |