মালদহে গিয়ে ২৬ নভেম্বর রিমোট কন্ট্রোলে সামসি গ্রামীণ হাসপাতালের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হয় সে দিন। অথচ স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল সেই তিমিরেই বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার পর হাসপাতালে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন মিলছে না, সেই প্রশ্নে রোগীদের ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। গ্রামীণ হাসপাতালে যে পরিষেবা মেলে তার ব্যবস্থা না করে কেন তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে হাসপাতাল উদ্বোধন করানো হল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল বলেন, “ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তাই তা উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে গ্রামীণ হাসপাতালের জন্য আরও বেশি চিকিৎসক, নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। দ্রুত যাতে তা মেলে সেই চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে যা যা থাকা দরকার, সেই সবের জন্যও স্বাস্থ্যভবনে আবেদন জানানো হয়েছে।” |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, বাম আমলে সামসি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ৩০ শয্যার গ্রামীন হাসপাতালে উন্নীত হয়। তার পর ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের শিলান্যাসও হয়। গত বছর হাসপাতালের নতুন ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়। দ্রুত গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে কয়েক বছরে একাধিকবার নাগরিক মঞ্চ পথে নেমে আন্দোলনও করে। তার পর গত বছর ২৬ নভেম্বর মালদহে গিয়ে সামসি হাসপাতালের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামীন হাসপাতালে অন্তত ৬ জন চিকিৎসক ও ৫ জন নার্স থাকার কথা। দু’জন ফার্মাসিস্ট ও অন্তত ছ’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর প্রয়োজন। পাশাপাশি গ্রামীন হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগ, এক্স রে মেশিনও থাকার কথা। থাকবে সামসি হাসপাতালে বর্তমানে দু’জন করে চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন। ফার্মাসিস্টি একজন ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সংখ্যা দু’জন। নেই সাফাইকর্মীও। প্যাথলজি বিভাগ চালু হয়নি, এক্স রে মেশিন না থাকায় রোগীদের এক্স রে করার জন্য বাইরে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের ৩০টির মধ্যে চালু করা হয়েছে মাত্র ১১টি শয্যা। যদিও অন্তর্বিভাগে যারা ভর্তি হন চিকিৎসকের অভাবে তাদেরও ঠিক চিকিৎসা মেলে না। কারণ, দু’জন চিকিৎসক ও নার্সের পক্ষে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। অথচ গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার কথা জেনে প্রতিদিন বহু রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাজির হচ্ছেন। চাঁচলের সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাসও বলেন, “অন্য হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক নিয়ে কোনওরকমে ‘ধার-দেনা’ করে হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে।”
সামসি হাসপাতালের চিকিৎসক সুদর্শন রায় বলেন, “চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়লে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যেত। তবু আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সামসি নাগরিক উন্নয়ন মঞ্চের তরফে মহম্মদ আফাজুদ্দিন বলেন, “দীর্ঘ আন্দোলনের পর সামসিতে গ্রামীণ হাসপাতাল হয়েছে। কিন্তু পরিষেবা পেতে আরও কতদিন অপেক্ষা করতে হবে কে জানে?” |