অনিদ্রা মোকাবিলায় শহরে ‘স্লিপ ল্যাব’ গড়বে সরকার
রাতের পর রাত বিছানায় স্রেফ এ পাশ ও পাশ করে কেটে যাচ্ছে। ঘুমের দেখা নেই। এ দিকে, সকাল থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মও থেমে থাকে না। ফলে শরীর বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সঙ্গে খিটখিটে মেজাজ, অবসাদ, বদহজম। কেউ কেউ আবার ঘুমোচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু এমন বিকট নাক ডাকছে যে, বারবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। নাক ডাকার জেরে শ্বাসকষ্টও শুরু হচ্ছে।
ঘুম নিয়ে এমন বিপত্তি এখন ঘরে ঘরে। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র ঘুম না হওয়ার জন্যই দেশের ২৫ শতাংশ মহিলা কোনও না কোনও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। পুরুষদের মধ্যে এই হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ। ঘুমের ওষুধ খেয়েও অনিদ্রা এড়াতে পারেন না এঁরা। শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্ব জুড়েই অনিদ্রা রোগটা এমন হইচই বাধিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। এ বার দেশের পূর্বাঞ্চলে সরকারি পরিকাঠামোয় ‘স্লিপ ল্যাবরেটরি’ চালু হচ্ছে শহরে। ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’র নতুন ভবনে এই কেন্দ্রটি তৈরি হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্বের সেরা স্লিপ ল্যাবরেটরিটি রয়েছে আমেরিকার ক্লিভল্যান্ডে। ওই কেন্দ্রটি যাঁরা গড়েছিলেন, তাঁদের সহায়তা নিয়েই কলকাতার কেন্দ্রটি গড়ার কাজ শুরু হবে। উৎকর্ষের বিচারে কেন্দ্রটি আন্তর্জাতিক মানের হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি। ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির মনোরোগ চিকিৎসক তথা ওই কেন্দ্রের প্রধান প্রদীপ সাহা বলেন, “আমরা চাই, সব দিক থেকেই এই গবেষণাগারটি উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হোক। আধুনিক সমাজে ঘুমের সমস্যা যে ভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলছে, তাতে এমন একটি কেন্দ্রের প্রয়োজন ক্রমশ বাড়ছে। শুধু ঘুম না হওয়া নয়, তার সঙ্গে যে সব অসুস্থতা জড়িত, সেগুলিরও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে এই কেন্দ্রে।”
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অনিদ্রার সমস্যায় ভোগা রোগীদের একটা বড় অংশই মেদবাহুল্য ও স্থূলতার সমস্যায় ভোগেন। অতিরিক্ত স্থূলতার জন্য হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, বাত, কিডনির অসুখ হয়। পাশাপাশি, এক নতুন সমস্যাও ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে সর্বত্র যার পোশাকি নাম ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া।’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মেদ অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে শ্বাসনালী এবং গলার ভিতরের অংশ সঙ্কুচিত হয়ে যায়। শুয়ে থাকলে ঘুমের মধ্যে এই সঙ্কোচন বাড়ে। ফলে অক্সিজেন ঢুকতে পারে না। নাক ডাকা শুরু হয় এবং তার জেরে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। এ ভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী সময়ে শ্বাসনালীতে অক্সিজেন চলাচল পুরো বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর হার কলকাতা-সহ গোটা দেশেই ক্রমশ বাড়ছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনিদ্রাজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা কম থাকার কারণেই মৃত্যুর হার এত বেশি বলে মত চিকিৎসকেদের। কলকাতার সরকারি স্লিপ ক্লিনিকটিতে এই বিষয়ের উপরেও পৃথক গুরুত্ব আরোপ করা হবে।
এখনও পর্যন্ত ঘুমের সমস্যার সমাধানে কলকাতায় কয়েকটি বেসরকারি ‘স্লিপ ক্লিনিক’ গড়ে উঠেছে। রোগীরা ক্লিনিকে আসছেন। যাঁদের ঘুম হয় না, তাঁদের ঘুম আনানোর নানা রকম প্রক্রিয়া চলছে। যাঁরা অস্বাভাবিক বেশি নাক ডাকেন, তাঁরা সারা রাত ক্লিনিকেই ঘুমোচ্ছেন এবং সেই অবস্থায় তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করে কী জটিলতা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন ঘুম-বিশেষজ্ঞেরা। এই প্রক্রিয়াকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হচ্ছে ‘পলিসমনোগ্রাফি।’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি কলকাতায় একটি ‘র্যান্ডম স্যাম্পল সার্ভে’র ব্যবস্থা করেছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। গোটা কলকাতাকে ১২টি এলাকায় ভাগ করে প্রত্যেক এলাকা থেকে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থানে থাকা এক হাজার জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব স্লিপ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত সেই সমীক্ষা বলছে, সাক্ষাৎকার নেওয়া ১২ হাজার মানুষের মধ্যে চার শতাংশ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছেন। ৪৫-৫৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগের হার বেশি।
চিকিৎসকদের মতে, পরিবর্তিত জীবনধারায় ঘুম ব্যাহত হওয়ায় কর্মক্ষমতা, যৌনক্ষমতা কমে যায়। প্রদীপবাবুর কথায়, “ঘুম কমের জন্য আত্মহত্যার প্রবণতাও যে বাড়ে, সেটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। এই গবেষণাগারটি চালু হলে ঘুমের সমস্যা কমিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও কমাতে পারব বলে আশাবাদী আমরা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.