উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন ঘিরে কর্তৃপক্ষের নামে উদাসীনতার নালিশ উঠেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত হলেও তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষক, পড়ুয়ার অধিকাংশকেই জানানো হয়নি। সে কারণে অনেকে প্রকাশ্য ক্ষোভ জানান। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ফোন করে তাঁরা সে কথা জানিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভের জেরে অনুষ্ঠানের দিন পিছোনোর সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।
তবে কবে অনুষ্ঠান হবে তা নিয়ে এখনও কিছু না জানানোয় ৮ ফেব্রুয়ারি আদৌ অনুষ্ঠান হবে কি না, তা নিয়ে ধন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান নিখিলেশ রায় বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের দিন ঠিক করা হয়েছিল। তবে প্রাক্তন পড়ুয়া, শিক্ষকদের অনেকেই ফোন করে তা ভাল করে করার অনুরোধ করছেন। এত অল্প সময়ে আয়োজন করা সম্ভব হবে না। সে কারণে ওই দিনটি বাতিল করে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসেই তা করার কথা ভাবছি।” তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানতে পারায় সোমবার পর্যন্ত অনেক শিক্ষক বাংলা বিভাগে অপেক্ষা করেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমীর কুমার দাস বলেন, “এটা এক দিনের ব্যাপার নয়। বর্ষব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী পালন করার কথা ভাবা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের কর্মশালার আয়োজনের প্রস্তাব আছে। কিন্তু এ মূহূর্তে হাতে সে সব আয়োজন করার সময় নেই।” তবে তিনি জানান, প্রাক্তন পড়ুয়া এবং শিক্ষক, শিক্ষিকারা আসবেন। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের যথাযথ সম্মান জানাবে। কিন্তু আগে থেকে সেই প্রস্তুতি কেন নেওয়া হয়নি সেই প্রশ্ন উঠছে। উপাচার্য জানিয়েছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠান হবে কি না, বা পরে কবে হবে তা ওই বিভাগ ঠিক করবে।
১৯৬৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা বিভাগের পথ চলা শুরু। সে কারণে দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের একাংশের ক্ষোভ, প্রস্তুতির অভাবে ওই দিনটিতে যদি কোনও অনুষ্ঠান না করা হয় তা হলে তা ভাল নয়। আবার প্রাক্তনীদের অধিকাংশই জানান, এত বড় একটা ব্যাপারে তাঁরা সামিল থাকতে চান। অথচ আগাম না জানা থাকায় তাঁদের অনেকের পক্ষেই ওই দিন উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এক সময় অধ্যাপনা করেছেন পুলিন দাস। বাংলা বিভাগ যে সময় চালু হয় তার কয়েক মাস পরেই তিনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলা বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী হতে চলেছে এই খবর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁকে জানানো হয়নি বলে জানান তিনি। অশীতিপর পুলিনবাবু বলেন, “প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলকে জানানো দরকার ছিল। তাঁরা না এলে তো এই অনুষ্ঠানের সার্থকতাই থাকে না।” পুলিনবাবু জানান, শুরুতে জনা ১৬ ছাত্রছাত্রী নিয়ে বাংলা বিভাগ শুরু হয়েছিল। বিভাগের বহু কৃতী ছাত্রছাত্রী এখন বিভিন্ন উচ্চপদে কর্মরত রয়েছেন। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজে রয়েছেন বিকাশ রায়, সুস্মিতা সোম। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, বিকাশবাবু বলেন, “কাউকে কিছু না জানিয়ে এটা করলেই হল না। আমার মতো প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত। সকলে মিলে বড় আয়োজন করা দরকার। কর্তৃপক্ষ সবাইকেই জানিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেই ভাল হত।” একই বক্তব্য সুস্মিতাদেবীর। ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠান শুনে তিনিও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। |