প্রথমে শূন্য পদের ঘোষণা। তার পরে প্রথা মেনে আবেদনকারীদের দরখাস্ত। এ বার তার মধ্যে থেকে ঝাড়াই-বাছাই করে এবং ইন্টারভিউ মারফত যোগ্য প্রার্থী বেছে নেওয়ার পর্ব। লোকসভা ভোটের আগে পুরোদস্তুর পেশাদারি কায়দায় নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে নেমে পড়ল তৃণমূল।
বস্তুত, এই প্রক্রিয়ার সূত্রপাত তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটের সময়। এ বারও তৃণমূলের আবেদনে সাড়া দিয়ে লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের শাসক দলের কমিউনিকেশন সেলে পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ করতে চেয়েছেন ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়ারা। তবে এ বারের উৎসাহ আগের চেয়ে বেশি। ইন্টার্ন হিসাবে নতুন প্রজন্মের এই প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে কাদের কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, ঠিক করতে শীঘ্রই বৈঠকে বসছে তৃণমূলের একটি কোর কমিটি।
আবেদনকারীরা সকলে কলকাতার আইআইএম-এর ম্যানেজমেন্ট শিক্ষার্থী। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের সেতু দলের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন। কিছু দিন আগেই জোকায় আইআইএম ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মুখোমুখি আসরে গিয়ে ডেরেক জানিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর কাজ করার জন্য শিক্ষানবিশ মুখ খুঁজছেন তাঁরা। সুযোগ দেওয়া হবে দু’জনকে। ঠিক যে ভাবে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের কন্ট্রোল রুমে কাজ করেছিলেন দুই ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া। তৃণমূল সূত্রের খবর, ডেরেকের ওই ঘোষণা শুনেই ৩১ জন পড়ুয়া আবেদন করেছিলেন। কিন্তু নীতিগত ভাবে পড়াশোনার ক্ষতির কথা ভেবে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের ওই কাজে ব্যবহার করতে চায় না তৃণমূল। তাই প্রথম বর্ষের ১৭ জনকে বাদ দিয়ে বাকি ১৪ জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যাঁদের সঙ্গে গ্রুপ ডিসকাশনে বসবে তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের একটি কোর কমিটি। নেওয়া হবে এক এক জনের ইন্টারভিউও। সেই প্রক্রিয়া থেকেই দু’জনকে বেছে নেওয়া হবে তৃণমূলে দু’মাসের শিক্ষানবিশির জন্য।
আইআইএম থেকে এমন সাড়া পেয়ে স্বভাবতই অভিভূত তৃণমূল নেতৃত্ব। ডেরেকের কথায়, “সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের সঙ্গে কী ভাবে আরও নিখুঁত যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়, তার কৌশল দল ঠিক করেছে। এঁদের কাজ হবে সেই কৌশল বাস্তবে রূপায়ণ করা। আমরা চাই শুধু ম্যানেজমেন্ট নয়, অন্যান্য শাখার ছাত্র-ছাত্রীরাও এই উদ্যোগে সামিল হতে এগিয়ে আসুন।”
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে-শহরে নবীন প্রজন্মের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে আগ্রহের প্রমাণ সাম্প্রতিক কালে তৃণমূল নেতৃত্ব বারেবারেই পেয়েছেন নানা ভোটের ফলে। এ বারের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, আবেদনকারীদের মধ্যে সিংহ ভাগই অ-বাংলাভাষী এবং ভিন্ রাজ্যের। তাঁদের মধ্যে তৃণমূল সম্পর্কে উৎসাহ দেখে বাড়তি উৎসাহিত শাসক দলের নেতৃত্ব। যেমন, দিল্লির বাসিন্দা সম্প্রতি মোতঘারে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিকেই লক্ষ্য হিসাবে বেছে নিতে চান। সম্প্রতির কথায়, “যদি এখন ব্যবসা বা কর্পোরেট ব্যাঙ্কিংয়েও কাজ করি, তার আগে নীতি নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে হাতে-কলমে জেনে নিতে চাই। আগামী কয়েক মাস ভোটের আবহে রাজনৈতিক দলে কমিউনিকেশন শাখার কাজ করতে পারলে সেই শিক্ষা কাজে লাগবে।”
মধ্যপ্রদেশের কৌশলেন্দ্র সিংহের পরিবার আছে রাজনীতিতেই। শিবরাজ সিংহ চৌহানের রাজ্যে তাঁরা যুক্ত বিজেপি-র সঙ্গে। কৌশলেন্দ্রের বক্তব্য, “পারিবারিক ধারার বাইরেও শিক্ষা এবং রাজনীতি মিলে যে একটা সুন্দর রসায়ন তৈরি হতে পারে, সেটাই দেখাতে চাই সকলকে। রাজনীতির ঘটনাগুলো যেখানে ঘটছে, ঠিক সেই গ্রাউন্ড জিরো-য় কাজ শেখার সুযোগ তাই কাজে লাগাতে চাই।” অন্ধ্রপ্রদেশের সন্দীপ দেবরাপল্লির লক্ষ্য সিভিল সার্ভিসে যাওয়া। তার আগে রাজনৈতিক দলের অন্দরে বসে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বুঝে নিতে চান। এ রাজ্যেরই রোহিত গাত্তানি আবার বলছেন, “রাজনৈতিক পরিসরেই ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই। তার আগে যদি সুযোগ পাই, দেখে নিতে পারি প্রশাসক, নীতি নির্ধারক বা সাংসদেরা কী ভাবে কাজ করেন।” |