গত বছর কলকাতায় এসে বণিকসভার অনুষ্ঠান এবং দলের কর্মী সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ভাল কথাই বলে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তার পর উত্তরপ্রদেশে গিয়েও মমতার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু ব্রিগেড সভায় তৃণমূল নেত্রী ‘কেন্দ্রে দাঙ্গার মুখ চাই না’ বলে পরোক্ষে মোদীকে কটাক্ষ করার ৬ দিনের মাথায় সেই ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী পাল্টা জবাব দেন কিনা, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় গোটা রাজ্য। বস্তুত, আজ বুধবার বঙ্গ ময়দানে নেমে মোদী কী বলবেন, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করবে ভোট মরসুমের রাজনৈতিক সমীকরণ।
রাজ্য বিজেপি অবশ্য চাইছে, মমতাকে কড়া আক্রমণ করুন মোদী। তার একটা কারণ যদি হয় এই অঙ্ক যে, সংখ্যালঘু ভোটের কথা ভেবে লোকসভা ভোটের আগে মমতার বিজেপি-র সঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। দ্বিতীয় কারণ তা হলে রাজ্যে সংগঠন চাঙ্গা করার তাগিদ। সে জন্য চার পাতার ‘টকিং পয়েন্ট্স’ পাঠানো হয়েছে মোদীর কাছে। যাতে রয়েছে মমতার সভার সারবস্তুও। বিজেপি সূত্রের খবর, শুধু লিখিত নোট পেয়েই সন্তুষ্ট হননি মোদী। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সংগঠন সম্পাদকের দফতর এবং আলাদা ভাবে মোদীর দফতর বাড়তি তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে। |
মঙ্গলকোটের বনকাপাসি বাসস্ট্যান্ডে মঙ্গলবার বিজেপির পক্ষ থেকে
বিনামূল্যে চা খাইয়ে ব্রিগেডে মোদীর সভার প্রচার করা হল। |
চাওয়া হয়েছে কিছু ব্যাখ্যাও। যেমন, রাজ্য বিজেপি চায় পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলুন মোদী। কিন্তু মোদী এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানতে চেয়েছেন, মহিলারা এখন বেশি করে অভিযোগ জানাতে থানায় যাচ্ছেন। তাই অভিযোগ বেশি করে প্রকাশ্যে আসছে। রাজ্য সরকার যে এই ব্যাখ্যা দিচ্ছে, তা কি ফেলে দেওয়ার মতো? রাজ্য বিজেপি থেকে আবার পাল্টা পরিসংখ্যান-সহ নোট গিয়েছে, অভিযোগ জানানোর পরেও প্রশাসনিক স্তরে তেমন পদক্ষেপ হচ্ছে না! কলকাতা ও হাওড়া শহর এবং আশেপাশের এলাকার ঘটনার তথ্যই উদাহরণ হিসাবে পাঠিয়েছে রাজ্য শাখা। ব্রিগেডে মাইক ধরার আগে সেই সব তথ্য হাতে নিয়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বারেবারে ঝালিয়ে নিচ্ছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানা নিয়ে কী এবং কতটা বলা উচিত।
বিজেপি-র এক সূত্রের কথায়, “মোদী কুশলী রাজনীতিক। সনিয়া গাঁধী যখন ওঁকে ‘মৌত কা সওদাগর’ বলেছিলেন, সেই আক্রমণকে কৌশলে নিজের পক্ষে ব্যবহার করে তিনি গুজরাতে আসন বাড়িয়ে নিলেন! কলকাতাতেও তিনি এমন বার্তাই দেবেন, যাতে এ রাজ্যে দলের উপকার হয়।” মোদীর সভার জন্য মঙ্গলবারই শহরে এসে গিয়েছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তাঁরও বক্তব্য, “মোদী দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তিনি একেবারে স্থানীয় বিষয় নিয়ে বিশেষ কিছু বলবেন না। কিন্তু এ রাজ্যের বিজেপি সমর্থকদের একেবারে নিরাশও করবেন না!” বাম এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করার পাশাপাশি মমতা-জমানায় পশ্চিমবঙ্গ পিছিয়ে পড়ছে কেন, সেই প্রশ্নও মোদী তুলতে পারেন বলে সিদ্ধার্থনাথের ইঙ্গিত। আর এক বক্তা বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহও রাজ্যের হাল-হকিকত সম্পর্কে সবিস্তার খোঁজ নিয়েছেন রাহুলবাবুর কাছে। |
বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন...
|
তবে এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, মোদীর সভায় সম্ভাব্য চার বক্তা সিদ্ধার্থনাথ, আরও এক কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বরুণ গাঁধী, সাংসদ শাহনওয়াজ হোসেন এবং রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মনোভাবের কথা ভেবে তুলনামূলক ভাবে বেশি আক্রমণাত্মক হবেন তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।
মোদীর সমাবেশের নামকরণ হয়েছে ‘জনচেতনা সভা’। ব্রিগেডে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির খোঁজ নিতে নিতে এ দিন রাহুলবাবু বলেছেন, “আমাদের আগে একটা ব্রিগেড হয়েছে সাংগঠনিক শক্তি জাহির করতে। আমাদের পরে আরও একটা ব্রিগেড হবে অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে! একমাত্র আমাদের ব্রিগেডই দেশ গড়ার জন্য!” দেশে বিজেপি-র সরকার গড়তে পশ্চিমবঙ্গকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানোর মধ্যেই মোদী রাজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বার্তা দিয়ে যাবেন বলে রাহুলবাবুর আশা।
মোদীর সম্মানে মাঠ ভরাতে চেষ্টার কসুর করছে না রাজ্য বিজেপি। দূরবর্তী জেলা থেকে বেশ কিছু মানুষ যেমন এ দিনই এসে পৌঁছেছেন, তেমনই প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্টদের কাছে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে আসা হয়েছে। জেলা থেকে বিজেপি-র সভায় না যাওয়ার জন্য বাস মালিক বা সাধারণ বাসিন্দাদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আসতে শুরু করেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাহুলবাবুর দাবি, “মোদী-ভীতি এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে! কিন্তু সে সব চক্রান্ত সত্ত্বেও লক্ষাধিক মানুষ মোদীকে দেখতে আসবেন।”
বস্তুত দেশ জুড়ে মোদী-নামের আবহে কত লোক মোদীকে ‘দেখতে’ আসবেন, তা-ই নিয়েই এখন চর্চা চলছে রাজনৈতিক শিবিরে। কিন্তু মোদী-বিরোধীরা উদাহরণ টেনে বলছেন, অতীতে রাহুল গাঁধীকে দেখার জন্যও ভিড় উপচে পড়েছিল কলকাতায়। কিন্তু ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন হয়নি। ফলে মোদীতে রাজ্য মজল কিনা, সে উত্তর আজ নয়, মিলবে কয়েক মাস পরে। |