বুধবার নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টার রেসকোর্সে নামবে কি না, সেই প্রশ্নে মঙ্গলবার প্রায় সারা দিন টানাপোড়েন চলল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং বিজেপির মধ্যে। রাতে অবশ্য নিয়মরক্ষা করেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রেসকোর্সে কপ্টার নামানোর অনুমতি দিয়েছে।
এ দিন সকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছিল, মোদীর কপ্টার ময়দানে নামানো যাবে না। কারণ গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় আসছেন দলীয় কর্মসূচিতে, সরকারি কোনও অনুষ্ঠানে নয়। অন্তত সেই মর্মেই বিজেপির দলীয় প্যাডে সেনাবাহিনীর কাছে রেসকোর্সে কপ্টার নামানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রক দাবি করে। প্রতিবাদে বিজেপি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে যোগাযোগ করা হয়। দলের বক্তব্য ছিল, কেন্দ্রের অধীনস্থ ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর পরামর্শেই সড়কপথ এড়িয়ে আকাশপথে মোদীকে সভাস্থলের কাছে আনার পরিকল্পনা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এর পরেই কেন্দ্র আঁচ করে, রেসকোর্সে মোদীর হেলিকপ্টার নামার অনুমতি না-দিলে ব্যাপারটা নিয়ে জাতীয় স্তরে জলঘোলা হতে পারে। তাই আজ রেসকোর্সে যাতে মোদীর কপ্টার নামতে পারে, এ দিন রাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেই অনুমতি দিয়ে দেয়। তবে এ বিষয়ে গুজরাত সরকারের কাছ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্র মন্ত্রক চেয়ে নিয়েছে। যদিও তাকে নিছক ‘নিয়মরক্ষা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রশাসনেরই একাংশ। |
বস্তুত কপ্টার-তর্কে এ ভাবে দাঁড়ি না-পড়লে বিষয়টিকে যে জাতীয় স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিলক্ষণ সম্ভাবনা ছিল, বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের কথায় তার ইঙ্গিত স্পষ্ট। “মোদীর হেলিকপ্টার রেসকোর্সে নামতে দেওয়া হবে না, এ খবর প্রচারিত হওয়ার পরে দেশ জুড়ে প্রতিক্রিয়া হয়। চাপে পড়ে শেষমেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইস্টার্ন কমান্ডের ওই নির্দেশ বাতিল করে। হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”এ দিন বলেন বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। পাশাপাশি মোদীর কপ্টার ঘিরে ফৌজ—বিজেপি টানাপোড়েনের অবসানে হাঁফ ছেড়েছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারাও। লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন সকাল থেকে বিজেপি ও সেনা-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অফিসারেরা দফায় দফায় কথা বলেন। কোনও ভিআইপি কপ্টারে গেলেও সাধারণত তাঁর যাতায়াতের জন্য একটি বিকল্প সড়ক-রুট নির্দিষ্ট করা থাকে। কিন্তু পটনা বিস্ফোরণের পরে মোদীর ক্ষেত্রে তা যে নিরাপত্তাজনিত কারণে যথেষ্ট ঝুঁকির, পুলিশের তরফে সেনা অফিসারদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পটনা-কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে মোদীর সভায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়েছে। ব্রিগেডের সভা সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে এখনও নির্দিষ্ট সতর্কবার্তা না-থাকলেও নিরাপত্তা-কর্তারা বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে নারাজ। এ দিন ব্রিগেডে তেমনই তৎপরতা নজরে এসেছে। সভাস্থলে সুরক্ষার খুঁটিনাটি দিনভর খতিয়ে দেখেছেন এনএসজি, গুজরাত পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের তাবড় কর্তারা। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বক্তৃতা মঞ্চ ও স্বয়ং মোদীর নিরাপত্তায় বহাল থাকবে এনএসজি ও গুজরাত পুলিশ। মাঠ ও ট্র্যাফিকের দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের। |
বদল এসেছে সভামঞ্চেও। ব্রিগেডে সাধারণত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে পিছনে রেখে সভামঞ্চ করাই দস্তুর। গত বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও তা-ই হয়েছিল। কিন্তু মোদীর সভায় মঞ্চ হয়েছে মাঠের পশ্চিমে, অর্থাৎ রেসকোর্সের দিকে। সামনে টাটা সেন্টার। বিজেপি-সূত্রের খবর: নিরাপত্তা-অফিসারদের পরামর্শেই ব্রিগেডের মঞ্চসজ্জা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, নিরাপত্তার খাতিরে আজ সংবাদমাধ্যমকেও মঞ্চের ধারে-কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না। এমনকী, বিজেপি’র দলীয় যে চিত্রগ্রাহকের আজ সভামঞ্চে উঠে ছবি তোলার কথা, তাঁর ক্যামেরাও এ দিন রাতে হেফাজতে নিয়ে নিয়েছে এনএসজি।
গোয়েন্দা-সূত্রে জানা গিয়েছে, মোদীর বক্তৃতামঞ্চের সামনে ৬০ ফুট ব্যারিকেড করে ফাঁকা রাখা হবে। এর পরে তিনটি স্তরে ব্যারিকেড করা রাখা হবে চেয়ার। বিজেপি নেতারা জানান, দূর থেকে মোদীকে ভাল ভাবে দেখার জন্য থাকছে বিরাট মাপের ১২টি এলইডি টিভি। কলকাতা পুলিশ, গুজরাত পুলিশ ছাড়াও ১ হাজার ৭০ জন দলীয় স্বেচ্ছাসেবক থাকছেন। এঁদের ৫২ জনের হাতে থাকবে ওয়াকিটকি। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকাল থেকেই শহরে বিগ্রেডমুখী মিছিল শুরু হবে। হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশন, শ্যামবাজার থেকে মিছিল আসবে। ফলে এজেসি বসু রোড, এসএন ব্যানার্জি রোড, কলেজ স্ট্রিট, ওয়েলিংটন, স্ট্র্যান্ড রোডে কিছুটা যানজট হতে পারে।
|