খেজুরিতে সিপিএম অফিসে স্টার বাজার, তদন্ত দলেই
ছিল পার্টি অফিস, হয়ে গেল বাজার। রাজনৈতিক পালা পরিবর্তনের সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খেজুরিতে সিপিএমের লাক্ষী লোকাল কমিটির কার্যালয় জমি সমেত গোপনে বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
জেলা নেতৃত্বকে কিছু না জানিয়েই বছর দু’য়েক আগে লাক্ষী লোকাল কমিটির সম্পাদক মনোতোষ সামন্ত (পদাধিকার বলে তিনি পারেন) স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে ৮ লক্ষ টাকায় ওই কার্যালয় বিক্রি করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। দিঘা-কলকাতা সড়কের ধারে হেঁড়িয়ায় ৫ ডেসিমেল জায়গায় নির্মীয়মাণ ওই কার্যালয়ের উপরে আরও দু’টি তলা উঠেছে তারপর। নাম হয়েছে ‘স্টার বাজার’। দোকান, রেস্তোরাঁ খুলেছে ভিতরে। সম্প্রতি এই খবর জেলা নেতৃত্বের কানে পৌঁছয়। দলীয় কার্যালয় বিক্রির টাকা ‘পার্টি ফান্ডে’ কেন পড়ল না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। গুরুতর এই অভিযোগ পেয়ে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কানু সাহু গোপন তদন্তের নির্দেশ দেন। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রশান্ত পাত্রের নেতৃত্বে জেলা কমিটির দুই সদস্য জোবেদ মল্লিক ও বিজন রায় ওই তদন্ত করছেন। জেলা সম্পাদক কানু সাহু এই নিয়ে মন্তব্য না করতে চাইলেও মেনে নিয়েছেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত হচ্ছে।”
এখানেই ছিল পার্টি অফিস। ছবি: সোহম গুহ।
দলীয় সূত্রে খবর, খেজুরির একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা হিমাংশু দাসকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তদন্তে। খেজুরি-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস অবশ্য বলেন, “খেজুরি জোনাল কমিটির সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার সময়ে ও পরে দলের কোনও নেতাকেই কোনও পার্টি অফিস বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলিনি। খেজুরিতে দলের কার্যালয় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এবং তা নিয়ে দলের কেউ কেউ তদন্ত চালাচ্ছেন বলে বাইরে থেকে কানাঘুষো শুনলেও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এই নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।”
বিষয়টি নিয়ে যে জেলা স্তরে আলোচনা হয়নি, তা বলছেন সম্পাদকমণ্ডলীর আরও দুই সদস্য। তবে, একদা ‘লালদুর্গ’ খেজুরিতে এমন ঘটনায় খুব একটা বিস্মিত নন দলীয় নেতাদেরই একাংশ। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর থেকেই খেজুরিতে ক্রমশ হীনবল হয়ে পড়ছিল সিপিএম। তৃণমূলের লোকেরা একের পর এক সিপিএম কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় সেই সময়। এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন হিমাংশু দাস-সহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সিপিএমের জোনাল, লোকাল ও শাখা কমিটির কার্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যের সঙ্গে জেলায় তৃণমূলের একাধিপত্য কায়েম হয়। এরপরেই নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় তমলুকের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়াদের সঙ্গে খেজুরির নেতা হিমাংশু দাস, রবিউল হোসেন, বিজন রায়দের নাম জড়ায়। সিআইডি লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাহু, অশোক গুড়িয়াদের গ্রেফতার করে। পরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান হিমাংশু দাস, বিজন রায়রা। ঘরছাড়াদের বাইরে রাখা ও মামলার পিছনে এখন প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে সিপিএমের। ফলে দলীয় কার্যালয় বিক্রির ঘটনা খুব একটা অস্বাভাবিক নয় হয়তো। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের অগোচরে বিক্রি হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে দলে।
গণ্ডগোলের সময়ই খেজুরি ছেড়ে তমলুকে চলে এসেছিলেন সিপিএমের লাক্ষী লোকাল কমিটির সম্পাদক মনোতোষ সামন্ত। অভিযোগ, ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে খেজুরির বাইরে থেকেই লোকাল কমিটির নির্মীয়মান অফিসটি স্থানীয় ব্যবসায়ী দেবদত্ত কামিল্যা ও তাঁর দুই ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেন তিনি। মনোতোষবাবু এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, দেবদত্ত কামিল্যা বলেন, “জায়গাটির দলিল লাক্ষী লোকাল কমিটির সম্পাদক মনোতোষ সামন্তর নামে ছিল। পার্টির নির্দেশেই তিনি জায়গাটি বিক্রি করতে চান বলে আমাকে জানিয়েছিলেন। ৫ ডেসিমেল জমির উপর এক তলার ছাদ ঢালাই দেওয়া অফিসঘরটি বিক্রি করার জন্য ৮ লক্ষ টাকা নিয়েছেন মনোতোষবাবু। তমলুকে রেজিস্ট্রি অফিসে আমি ও আমার আইনজীবীর উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি হয়েছে।”
মনোতোষবাবু মুখ খুলছেন না। তাই ৮ লক্ষ টাকা কোথায় গেল জানা যায়নি। তবে দলীয় তহবিলে পড়লে তদন্ত হত না, এটা নিশ্চিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.