রাহুলের কাছে দাবি, সংরক্ষণে আর জাত নয়
রজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে আজ হঠাৎই জাত-ভিত্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে নয়া বিতর্ক উস্কে দিলেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়ান নেতা জনার্দন দ্বিবেদী। তাঁর দাবি, জাতের পরিবর্তে আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিয়ে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারেই বলিষ্ঠ বার্তা দিন রাহুল গাঁধী।
এমনিতে দলীয় প্রয়োজন ছাড়া সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন না জনার্দন। কিন্তু তিনিই আজ সংবাদসংস্থাকে ডেকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বর্তমান সংরক্ষণ ব্যবস্থা এ বার সাঙ্গ হওয়া উচিত। যাঁদের জন্য এই সংরক্ষণ, তাঁরা কি এতে উপকৃত হচ্ছেন? নাকি বিভিন্ন জাতির স্বচ্ছল অংশই লাভের গুড় নিয়ে চলে যাচ্ছে!” তাঁর কথায়, “রাহুল গাঁধী দলের ইস্তাহার রচনার জন্য সকলের মত নিচ্ছেন। তাই তাঁকে এই দাবি জানাচ্ছি। রাহুল ভবিষ্যতের নেতা। প্রকৃত পক্ষে তিনিই ভবিষ্যতের নেতা হয়ে উঠতে পারবেন যিনি আজ জাত ও সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে সাম্যের কথা বলার সাহস দেখাতে পারবেন।” জনার্দনের খেদ, সামাজিক বিচারের নামে এখন জাতপাতের রাজনীতিতেই ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে। এমনকী দীর্ঘমেয়াদে তা ক্ষতিকর জেনেও অনেকেই এর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করছেন না। কিন্তু সেই বলিষ্ঠতা এখন দেখানো উচিত রাহুলের। কারণ, জাতের বদলে আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করলে তবেই সমাজে সেই সাম্য কায়েম করা সম্ভব।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, কদিন আগেও জাঠেদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির আওতায় সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনমোহন সিংহ সরকার। তাছাড়া গোটা দেশে ১১৫টি জাতিকে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির আওতায় সংরক্ষণের কথাও ঘোষণা করেছে সরকার। সে দিক থেকে সরকার তথা কংগ্রেসের অবস্থানের সঙ্গেই জনার্দনের বক্তব্যের ফারাক দেখা যাচ্ছে। আপাত দৃষ্টিতে এটা জনার্দনের ব্যক্তিগত মত। কিন্তু কংগ্রেসের ঘরোয়া রাজনীতিতে যাঁরা জনার্দনকে চেনেন তাঁরা মোটেই মানতে রাজি নন যে, এটা এই ব্রাহ্মণ নেতার ব্যক্তিগত মত। দশ নম্বর জনপথের বরাবরই ঘনিষ্ঠ জনার্দন। এক সময় সনিয়া গাঁধীর হিন্দি শিক্ষক ছিলেন তিনি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল জেগেছে, এটা কি রাহুল গাঁধীর কোনও কৌশল! হয়তো জনার্দনকে দিয়ে এই প্রস্তাব তুলিয়ে জল মেপে দেখছেন রাহুল!
অনেকে এর মধ্যে লোকসভা ভোটের মুখে ব্রাহ্মণ তথা উচ্চ বর্ণকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টাও দেখছেন। কারণ, লোকসভা ভোটে উচ্চ বর্ণের হিন্দু ভোটের মেরুকরণ যখন নিজেদের অনুকূলে সুনিশ্চিত করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী, তখন সেই খেলা ভেস্তে দিতে চাইছে কংগ্রেস। কেননা উচ্চ বর্ণের বৃহত্তর অংশ বরাবরই সংরক্ষণের বিরোধী। তা ছাড়া আর্থিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা কায়েম হলে উচ্চ বর্ণের মানুষও সেই সুবিধা পাবেন। শুধু তাই নয়, জনার্দনের এই বার্তা মুসলিম সমাজকেও কংগ্রেসের দিকে টানতে পারে। কারণ, ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের সংরক্ষণ সাংবিধানিক ভাবে অসম্ভব। কিন্তু আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা কায়েম করলে মুসলিমদের একটা বড় অংশ তার সুবিধা পেতে পারেন।
তবে জনার্দনের বক্তব্যের পর ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের বেশ কিছু নেতা আজ বলেন, এটা যদি সত্যিই রাহুলের কৌশল হয়, তা হলে বড় ঝুঁকি নিতে চাইছেন তিনি। কারণ, এতে দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়ে যাবে। এমনকী, লোকসভার ভোট বিতর্কের অন্যতমও বিষয় হয়ে উঠতে পারে এটি। কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, এটা ঠিকই জাতের পরিবর্তে আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সংরক্ষণের কথা বললে সমাজের একটা অংশের বিপুল সাড়া পাওয়া যাবে। তা ছাড়া সামগ্রিক ভাবে শিক্ষিত যুব সম্প্রদায় এতে ইতিবাচক সাড়া দিতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে হিন্দি বলয়ে এবং দক্ষিণ ভারতে এর রাজনৈতিক প্রভাব নেতিবাচকও হতে পারে। আশা করা হচ্ছে, জনার্দনের মন্তব্যের পর সেই লিটমাস পরীক্ষা করেই এই অবস্থান ইস্তাহারে রাখার ঝুঁকি নেবেন রাহুল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.