নিদো-বিক্ষোভে কেজরিওয়ালও
লোকসভা নির্বাচনের আগে জনদরদি হওয়ার লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকতে চান না কোনও নেতাই। অরুণাচলের ছাত্র নিদো টানিয়ামের মৃত্যু নিয়ে তাই সরব হচ্ছেন অনেকেই।
গত কালই পাশে থাকার বার্তা দিয়ে উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। আর আজ সেই মঞ্চে হাজিরা দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দোষীদের ফাঁসিও চাইলেন। ঘটনার পাঁচ দিন পরে টানিয়ামের মৃত্যু দুঃখজনক এবং দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে বলে আজ বিবৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এখানেই শেষ নয়। আগামিকাল কলকাতা থেকে গুজরাত ফেরার পথে দিল্লিতে অরুণাচলের এক প্রতিনিধিদের দলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীরও। রাহুলের পাল্টা হিসেবেই মোদীর ওই বৈঠক বলে মনে করছে কংগ্রেস শিবির। টানিয়ামকে নিয়ে এই দড়ি টানাটানির মধ্যেই আজ উত্তর-পূর্বের ছাত্র-ছাত্রীরাই যন্তর-মন্তর থেকে প্রশ্ন তুলেছেন, রাজনৈতিক নেতারা সহমর্মিতা দেখালেই কি দিল্লিবাসীর মনোভাব পাল্টে যাবে? নাকি নিগ্রহের এই পরম্পরা ভবিষ্যতেও চলবে?
বিক্ষোভ-মঞ্চে আজ বিকেলে হঠাৎ হাজির হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। উত্তর-পূর্বের মানুষের পাশে থাকার প্রতিযোগিতায় তিনি যে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন, তা মেনে নিয়ে অরবিন্দ বলেন, “আমার আরও আগেই আসা উচিত ছিল। কিন্তু আসতে পারিনি।” এর আগেই বিজেপির তরফে অভিযোগ ওঠে, নিদোর মতো উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীরা দিল্লির ভোটার নন। তাই কেজরিওয়াল নিদো-বিতর্কে ততটা সক্রিয় নন। সেই অভিযোগের জবাবে এ দিন কেজরিওয়াল বলেন, “বিষয়টি জানা মাত্রই আমি বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য উপরাজ্যপালকে অনুরোধ করেছি। দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবি করছি আমরা।” কেজরিয়ালের মতে, শুধু উত্তর-পূর্ব নয়, দক্ষিণ ভারতের মানুষও দিল্লিতে একই ধরনের বৈষম্যের শিকার। তাই দিল্লিবাসীর এ ধরনের মনোভাব পাল্টাতে পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের দাবি করেছে আপ নেতৃত্ব। দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া বলেন, “আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঠ্যক্রমে উত্তর-পূর্বের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত হবে। পাশাপাশি দিল্লিবাসী যাতে উত্তর-পূর্বের এবং দক্ষিণ ভারতের মানুষকে প্রাপ্য সম্মান দিয়ে চলেন, সে বিষয়ে একাধিক পরিকল্পনাও নিচ্ছে শিক্ষা দফতর।” প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতেও আজ শোনা গিয়েছে, উত্তর-পূর্বের ‘ভাইবোনদের’ সুরক্ষায় দিল্লিবাসীকেই এগিয়ে আসতে হবে। আজ তিনি বলেছেন, “নিদোর উপরে আক্রমণের ঘটনা নিন্দনীয়। দেশের অন্য সব প্রান্তের মানুষ যেমন দিল্লির অংশ, উত্তর-পূর্বের মানুষও একই ভাবে এই শহরের অংশ।” নিদোর মৃত্যুতে সুবিচার চেয়ে সওয়াল করেছেন রাষ্ট্রপতিও। দিল্লি সবারই শহর, মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনিও।
আজই আবার টানিয়ামের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ভিসেরা রিপোর্টে সব স্পষ্ট হবে বলে দাবি চিকিৎসকদের। এখনকার রিপোর্টে রয়েছে নিদোর মাথায়, মুখে, ঘাড়ে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ঘাড়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও হয়েছে। ফুলে গিয়েছে মস্তিষ্কও। এইমসের এক চিকিৎসক বলেছেন, “মস্তিষ্কে খুব জোরে ঝাঁকুনির ফলে ভিতরে ফুলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঘুষি এবং মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাতের জন্য সেটা হয়ে থাকতে পারে। তার থেকে আবার ফুসফুসে জলও জমতে পারে যার ফলে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু ঘটতে পারে।” তবে চিকিৎসকদের মত, এখনই এটা বলা সম্ভব নয় যে মারধরের ফলেই আঘাত থেকে নিদোর মৃত্যু হয়েছে।
অরুণাচলে নিদোর শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এলাকায় শোকের ছায়া কাটছে না। নিদোর মা মারিনার অভিযোগ, পুলিশ মিষ্টির দোকানের মালিকের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে সক্রিয়তা দেখালেও জখম নিদোর চিকিৎসার জন্য তেমন কিছুই করেনি। মারিনা বলেন, “থানা থেকেই ছেলে আমায় ফোন করেছিল। বলল, পুলিশ ১০ হাজার টাকা চাইছে।” ছেলের কাছে টাকা রয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিলেন মারিনা। ছেলে জানায়, “১২ হাজার টাকা রয়েছে। ১০ হাজার দিয়ে দিলে কলেজে দেওয়ার টাকা থাকবে না।” মারিনা ছেলেকে বলেন, “চিন্তা করো না। আপাতত ক্ষতিপূরণ দাও।” তিনি জানান, এর পরে থানার এক পুলিশ অফিসার তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, “সমস্যা মিটে গিয়েছে। আপনার ছেলে খুব ভাল। সে ভবিষ্যতে বড় মানুষ হবে।” কিন্তু তার পরেও ঘটনা অত দূর কী ভাবে গড়াল বুঝতে পারছেন না মারিনা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.