ব্লুস্টারে সাহায্যের কথা মেনে নিল ব্রিটেন
গুজরাত দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ভূমিকা বনাম শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই নতুন সংযোজন। লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের অস্বস্তি এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দিয়ে ১৯৮৪ সালে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানে ভারতকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করার কথা মেনে নিল ব্রিটিশ সরকার। ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্কের কথা ভেবেই ইন্দিরা গাঁধী সরকারকে ওই অভিযানে সাহায্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মার্গারেট থ্যাচারের সরকার।
সম্প্রতি ব্রিটেনের জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রকাশিত দু’টি নথির কথা উল্লেখ করে সরব হয়েছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দুই সদস্য। তাঁরা জানান, ‘অপারেশন ব্লুস্টারে’র আগে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্য চেয়েছিল ইন্দিরা-সরকার। সাহায্যে রাজিও হন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে পরামর্শ দিতে বিশেষ কম্যান্ডো বাহিনী ‘স্যাস’-এর এক অফিসার ভারতেও যান। প্রকাশিত ওই সরকারি নথিতে তার প্রমাণ রয়েছে।
দুই ব্রিটিশ এমপি-র এই দাবি নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন শুরু হয় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। ভারতে হেলিকপ্টার বিক্রির জন্যই থ্যাচার-সরকার ইন্দিরাকে সাহায্য করেছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। চাপে পড়ে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। আজ সেই তদন্তের রিপোর্টই পার্লামেন্টে পেশ করেছেন বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ।
ব্লুস্টার নিয়ে ভারত-ব্রিটেনের এই কথা চালাচালির ইতিহাস অবশ্য এই মুহূর্তে দু’দেশের কোনও সরকারের পক্ষেই স্বস্তির নয়। ব্রিটেন দাবি করছে, তারা শুধুই পরামর্শ দিয়েছিল এবং ভারত আদৌ ব্রিটেনের কথা মতো কাজ করেনি। বিষয়টি নিয়ে এখনও সরকারি ভাবে মুখ খোলেনি কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
শিখদের ধর্মস্থান স্বর্ণমন্দিরে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা খলিস্তানি জঙ্গি নেতা জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালে ও তাঁর সশস্ত্র সঙ্গীদের হটাতে ১৯৮৪ সালের ৩ থেকে ৮ জুন অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। সেই অভিযানই ‘অপারেশন ব্লুস্টার’ নামে পরিচিত। সেই সংঘর্ষে ভিন্দ্রানওয়ালে-সহ জঙ্গিদের খতম করা গেলেও সেনার গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্বর্ণমন্দির। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় শিখদের মধ্যে। এই সেনা অভিযানের কয়েক মাসের মধ্যেই ৩১ অক্টোবর, নিজের দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা। ইন্দিরা-হত্যার পরে রাজধানী দিল্লি এবং লাগোয়া এলাকায় প্রবল শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় মৃত্যু হয় কয়েক হাজার মানুষের। এই দাঙ্গায় একাধিক কংগ্রেস নেতার জড়িত থাকার অভিযোগও ওঠে।
স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযান এবং পরবর্তী সময়ে শিখ-বিরোধী দাঙ্গার ঘটনা আজও কংগ্রেসের কাছে প্রবল অস্বস্তির। সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহ আগেই প্রকাশ্যে এ নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। তবু বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। টেলিভিশনে প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারেও রাহুল গাঁধীকে এই প্রশ্নের সামনে যথেষ্ট বিব্রত দেখিয়েছে।
এই আবহেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে হেগ জানালেন, ব্রিটেন যে ‘অপারেশন ব্লুস্টার’ নিয়ে ভারতকে পরামর্শ দিয়েছিল, তা ঠিক। ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্কের কথা ভেবেই ইন্দিরা গাঁধীর সরকারকে ওই ঘটনার সময় সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেয় থ্যাচার-সরকার। তার ভিত্তিতেই ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক ব্রিটিশ সামরিক পরামর্শদাতা ভারতে যান। সরকারি স্তরে আলোচনায় তিনি জানিয়েছিলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা একেবারে ব্যর্থ হলে তবেই সামরিক অভিযানের কথা ভাবা যেতে পারে। একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ ছিল, জঙ্গিদের হতচকিত করে হঠাৎ হামলা চালাতে হবে। হেলিকপ্টারে বাহিনী পাঠানোও প্রয়োজন। হেগ জানিয়েছেন, ওই অফিসার ব্রিটেনে ফিরে যাওয়ার পরে জঙ্গিদের হটাতে সেনা অভিযানের পরিকল্পনা ও তা কার্যকর করার পুরো ভার হাতে তুলে নেয় ভারতীয় সেনা। ব্রিটিশ পরামর্শ খুব সীমিত প্রভাব ফেলেছিল। কারণ, ভারতীয় সেনা আচমকা হানা দেয়নি। হেলিকপ্টারে বাহিনীও পাঠানো হয়নি।
স্বর্ণমন্দির থেকে জঙ্গি নেতা জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালেকে
হটাতে সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত ইন্দিরা গাঁধীর। দায়িত্ব কে এস ব্রার-কে।
অপারেশন ব্লুস্টার ১৯৮৪
৩ জুন পঞ্জাব জুড়ে কার্ফু। স্বর্ণমন্দিরে ঢোকা-বেরোনোর
সব পথ আটকে দিল সেনা।
৪ জুন সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াই শুরু।
৫ জুন স্বর্ণমন্দির চত্বরে ঢুকতে গিয়ে জঙ্গিদের প্রতিরোধে
থমকাল সেনা। কৌশলে বদল। রাতভর যুদ্ধ।
৬ জুন ভিতরে ঢুকল সেনা। ভিন্দ্রানওয়ালের দেহ উদ্ধার।
গোলায় বিধ্বস্ত অকাল তখ্ত।
৮ জুন অভিযান শেষ।
হেগ এ-ও জানিয়েছেন যে, ব্রিটিশ হেলিকপ্টার বা অস্ত্র ভারতকে বিক্রির সঙ্গে এই পরামর্শ দেওয়ার যোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভারতীয় সেনাকে স্বর্ণমন্দির অভিযানের জন্য কোনও প্রশিক্ষণ দেয়নি ব্রিটেন। কোনও উপকরণও সরবরাহ করা হয়নি।
কিন্তু বিতর্কিত ‘অপারেশন ব্লুস্টারে’ ব্রিটিশ-যোগ প্রকাশ্যে আসার পরে ফের এক দফা ঝড়ের জন্যই তৈরি হচ্ছে নয়াদিল্লি ও লন্ডন। ইতিমধ্যেই টেলিভিশনে ১৯৮৪-র দাঙ্গায় কিছু কংগ্রেস নেতা-কর্মী জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথা মেনে নিয়ে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন রাহুল।
গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার স্মৃতি নিয়ে বিব্রত মোদী তথা বিজেপি যাকে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। এ কাজে এখনও তারা মূলত ব্যবহার করেছে এনডিএ-র শরিক অকালি দলকে। শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় রাজীব গাঁধীর ভূমিকা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে পঞ্জাবের বর্তমান শাসক অকালি দল। অকালি-সহ কংগ্রেস-বিরোধী দলগুলির আক্রমণ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিজেপি মুখপাত্র নির্মলা সীতারামনের কথায় তারই ইঙ্গিত, “ইন্দিরার সরকার দাবি করেছিল, আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালিয়েছিল সেনা। কিন্তু ব্রিটেনের সঙ্গে আগে পরামর্শের কথা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, আলোচনায় আদৌ আগ্রহী ছিল না সরকার।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.