১৯৮৪ সালে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে শিখ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে ব্রিটিশ সাহায্যের দাবি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিল ডেভিড ক্যামেরন সরকার। সদ্য প্রকাশিত গোপন নথিতে এই সাহায্যের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দুই সদস্য। বিতর্কিত ‘অপারেশন ব্লু স্টারে’ ব্রিটিশ সাহায্যের এই দাবি নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে ভারত ও ব্রিটেনের রাজনৈতিক-কূটনৈতিক শিবিরে। তবে পুরো বিষয়টিই ভুয়ো বলে মনে করেন ওই অভিযানের নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট-জেনারেল কে এস ব্রার।
১৯৮৪ সালের ৩ থেকে ৮ জুন খলিস্তান আন্দোলনের নেতা জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালে ও তার সঙ্গীদের স্বর্ণমন্দির থেকে উৎখাত করতে অভিযান চালায় সেনা। ‘অপারেশন ব্লু স্টারে’ প্রাণহানি হয় প্রচুর। অনেকের মতে, এই ঘটনা পঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদের স্রোত আরও বাড়িয়ে দেয়। ১৯৮৪ সালেই নিজের শিখ দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। সেই ঘটনাকে স্বর্ণমন্দির অভিযানের ফলশ্রুতি বলেই মনে করেন অনেকে। ব্রিটেনে তখন মার্গারেট থ্যাচারের সরকার।
৩০ বছর বাদে গোপন নথিপত্র প্রকাশের নিয়ম আছে ব্রিটেনে। ২০১৪ সালের গোড়ায় প্রকাশিত কিছু নথিপত্রে ‘ব্লু স্টারের’ সঙ্গে ব্রিটিশ যোগের প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি হাউস অব লর্ডসের সদস্য ইন্দ্রজিৎ সিংহ ও হাউস অব কমন্সের সদস্য টম ওয়াটসনের। তাঁরা জানান, লন্ডনের জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রকাশিত নথি থেকে জানা গিয়েছে, ১৯৮৪-তে স্বর্ণমন্দির অভিযান নিয়ে ব্রিটেনের সাহায্য চেয়েছিল ইন্দিরা গাঁধী সরকার। সাড়া দেন মার্গারেট থ্যাচার ও তাঁর সহযোগীরা। ব্রিটিশ কম্যান্ডো বাহিনী স্যাসের এক অফিসারকে ভারতে পাঠানো হয়। তিনি অভিযানের ছক কষতে ভারতকে সাহায্য করেন।
ইন্দ্রজিৎ ও টমের দাবি, ১৯৮৪ সালের একটি গোপন চিঠিতে বলা হয়েছে, “অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির থেকে শিখ জঙ্গিদের উৎখাত করা নিয়ে ব্রিটেনের পরামর্শ চেয়েছে ভারত। বিদেশসচিব সেই অনুরোধে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর (মার্গারেট থ্যাচার) সম্মতি নিয়ে বিশেষ বাহিনীর এক অফিসারকে ভারতে পাঠানো হয়েছে। তিনি অভিযানের ছক কষেছেন। সেই ছকে সম্মতি দিয়েছেন ইন্দিরা গাঁধীও। বিদেশসচিবের মতে, ভারতীয়রা শীঘ্রই ওই ছক মেনে অভিযান চালাবে।”
ব্রিটেনে শিখ সংগঠনের নেতা ও হাউস অব লর্ডসের সদস্য ইন্দ্রজিৎ সিংহের মতে, ভারত সরকার বরাবরই দাবি করে এসেছে জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে ‘ব্লু স্টারের’ পরিকল্পনা করা হয়। এই চিঠিই প্রমাণ করে দিচ্ছে সে কথা ঠিক নয়। কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। শিখদের অনেক দিন ধরে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলে ব্রিটিশ সরকারের কৈফিয়ত চাইবেন বলে জানিয়েছেন ইন্দ্রজিৎ ও টম।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সরকার জানিয়েছে, তারা বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। দাবির সত্যতা বিচার ও এই ধরনের নথি প্রকাশের যৌক্তিকতা নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্যাবিনেট সচিব জেরেমি হেউডকে। সরকারি মুখপাত্রের কথায়,“ওই ঘটনায় বহু প্রাণহানি হয়েছিল। তাই এই নথি নিয়ে যে উদ্বেগ দেখা দেবে তা আমরা জানি।”
প্রত্যাশিত ভাবেই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক ভাবে চলতে চাইছে ভারতও। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, “এই বিষয়ে ব্রিটেনের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। সরকারি ভাবে আমাদের এখনও কিছু জানানো হয়নি।”
তবে পুরো বিষয়টিই ভুয়ো বলে মনে করেন প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট-জেনারেল কে এস ব্রার। স্বর্ণমন্দির অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। তাঁর দাবি, পুরো অভিযান ভারতীয় সেনাবাহিনী করেছিল। কোনও ব্রিটিশ তাদের পরামর্শ দেয়নি। কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে বিষয়টি রটানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ইউপিএ সরকারের জবাবদিহি করা উচিত বলে দাবি অকালি দল ও বিজেপি-র। অকালি দলের মতে, শিখদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। |