উল্টোডাঙার চারটি কলোনির এক হাজার পরিবারকে পাকা বাড়ি করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কেআইটি-র জমিতে কয়েক দশক আগে তৈরি হয়েছিল এই চার কলোনি। প্রায় নিখরচায় এক হাজার পরিবারের প্রত্যেকে পাবে দুই কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। এর অর্ধেক দেবে কেন্দ্র, অর্ধেক রাজ্য। গোটা প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০১৫ সালে।
প্রকল্পের মূল পরিকল্পনা হয়েছিল অবশ্য চার বছর আগে। সে সময়ে শহরের গরিবদের ন্যূনতম পরিষেবা (বিএসইউপি) প্রকল্পের জন্য ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। এর অর্ধেক, অর্থাৎ ১৪ কোটি টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। ২০১০-এর প্রথমার্ধে ঘটা করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় সেখানে। কেন্দ্র প্রথম কিস্তি হিসেবে সাড়ে তিন কোটি টাকা মঞ্জুর করে। ওই টাকায় নির্মাণকাজ হয় দু’টি ব্লকে। কিন্তু কিছুকাল বাদে কাজের পাওনা নিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে কেআইটি-র আইনি বিবাদ শুরু হয়। কাজ আটকে যায়।
নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিষয়টি ফের খতিয়ে দেখে আবেদন করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়ার পরে ফের প্রায় সাড়ে তিন বছর বাদে শুরু হয়েছে নির্মাণকাজ। এই টাকার অর্ধেক দেবে কেন্দ্র। বাকি অর্ধেক দেবে রাজ্য। এর মধ্যে কিছু টাকা সুবিধাভোগী অর্থাৎ যাঁরা ফ্ল্যাট পাচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে বলে নগরোন্নয়ন দফতরের এক পদস্থ অফিসার জানান।
জট কাটিয়ে কাজ শুরু করায় ‘নতুনপল্লি’, ‘নেতাজি সুভাষ পল্লি’, ‘আত্মরক্ষা কলোনি’ এবং ‘প্রমোদ দাশগুপ্ত কলোনি’-র বাসিন্দারা খুশি। তাঁদের বক্তব্য, আগ্নিকাণ্ড-ঝড়বৃষ্টিতে কখন, কার পরিবার সর্বস্বান্ত হয়, তা নিয়ে আর আতঙ্কে কাটাতে হবে না। কেএমডিএ সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে তৈরি হবে ২২০টি ফ্ল্যাট। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে সাড়ে ৯ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিটি তলে থাকবে নিট ২৫ বর্গমিটার অর্থাৎ ২৭০ বর্গফুট মাপের চারটি করে ফ্ল্যাট। প্রতিটি বাড়িতে ২০টি ফ্ল্যাট। থাকবে পরিকল্পিত রাস্তা, কমিউনিটি হল।
আপাতত অকুস্থলের ১৭০টি পরিবারকে সাময়িক ভাবে সরানো হয়েছে কাছের একটি পার্কে। নির্মাণকাজের স্বার্থে আরও কিছু পরিবারকে অস্থায়ী ভাবে সরানো দরকার। স্থানীয় বিধায়ক সাধন পাণ্ডে জানান, “এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পরিবর্ত জায়গা চিহ্নিত করা হচ্ছে।” জায়গার অভাবে নির্মাণকাজ ব্যাহত হবে না বলে মন্তব্য করেন সাধনবাবু।
অদূরেই দখল করা জমিতে তৈরি বাসন্তী কলোনির ৪৫০টি বাড়ি ২০১০-এর ১৩ জানুয়ারি অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়। কেআইটি এবং আংশিক রেলের জমিতে তৈরি হয়েছিল ওই কলোনি। সেটির পুনর্গঠন নিয়ে সে সময়ে শুরু হয় রাজ্য এবং বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধ। সেই কলোনির বাসিন্দাদের জন্যও তৈরি হবে ফ্ল্যাটবাড়ি। নগরোন্নয়ন দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “কেন্দ্র বিএসইউপি প্রকল্প তুলে ‘রাজীব আবাস যোজনা’ চালু করেছে। ঠিক হয়েছে এই নয়া প্রকল্পে সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করবে কলকাতা পুরসভা।” |