পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার জেরে মঙ্গলবার দিনের শেষে পতন বেশ কিছুটা কাটিয়ে প্রায় আগের দিনের জায়গাতেই ফিরল সূচক।
সোমবার প্রায় ৩০৫ পয়েন্ট পড়ে গত চার মাসে সবচেয়ে নীচে নেমে যায় সেনসেক্স। সেই প্রবণতা অব্যাহত ছিল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত। জানুয়ারিতে মার্কিন শিল্প বৃদ্ধির হার আশঙ্কার তুলনায় আরও বেশি হারে কমার প্রভাবে ওয়াল স্ট্রিটের সোমবারের পতনের রেশ মঙ্গলবার এসে পড়ে এশীয় ও ভারতীয় বাজারে। ফলে সেনসেক্স ২৪৬ পয়েন্ট পড়ে নেমে আসে ১৯ হাজারের ঘরে (১৯,৯৬৩ অঙ্কে)। এতে ইন্ধন জোগায় চিনের আর্থিক বৃদ্ধি তলানিতে নামার আশঙ্কা এবং বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির ভারতে ক্রমাগত শেয়ার বিক্রি।
তবে দুপুরের পর থেকেই পড়তি বাজারে শেয়ার কিনতে শুরু করেন লগ্নিকারীরা। ফলে স্থিতাবস্থা ফেরে। প্রায় ২৫০ পয়েন্ট বেড়ে ২০,২১১.৯৩ অঙ্কে পৌঁছে যায় সেনসেক্স, যা সোমবারের চেয়ে ২.৬৭ পয়েন্ট বেশি। তবে এটাকে শেয়ার বাজারের ঘুরে দাঁড়ানো বলে মানতে নারাজ বাজার বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এই উত্থান স্থায়ী হয় কি না, তা নিয়ে তাঁদের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এ দিন টাকাও সামান্য বেড়েছে। ৩ পয়সা বেড়ে প্রতি ডলার দাঁড়ায় ৬২.৫৩ টাকা।
গত ন’দিনের লেনদেনে নিট হিসাবে সেনসেক্স পড়েছে ৯২৩ পয়েন্ট। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, “এই মুহূর্তে শেয়ার বাজারের পক্ষে ভাল খবর কিছুই নেই। ঋণনীতিতে সুদের হার বৃদ্ধি, টাকার মূল্য হ্রাস, আমেরিকার বন্ড কেনা কমানো এবং সর্বোপরি ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের আগে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।”
শেয়ার বাজারের পক্ষে সব থেকে উদ্বেগের খবর, বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে টানা শেয়ার বিক্রি করে চলেছে। পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী গত শুক্রবার এবং সোমবারে ওই সব সংস্থা ভারতের বাজারে ১৩১৭ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে। এই ঘটনাই বিশেষজ্ঞদের চিন্তিত করে তুলছে।
ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, “ভারতের বাজার তেজী হয়ে উঠেছিল প্রধানত বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির সুবাদেই। এ বার তারা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেছে। টানা বিক্রি চলতে থাকলে শেয়ার বাজারে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমার মনে হয়, ভারতের বাজার থেকে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির পুরোপুরি হাত গুটিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থা এখনও সৃষ্টি হয়নি। ওই সব সংস্থা বাজার থেকে না-চলে গেলে সেনসেক্স ১৯ হাজারের নীচে নামবে না।
তবে পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার হিড়িকে সূচক কিছুটা ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। তা স্থায়ী হওয়ার আশা অবশ্য তাঁরা করছেন না। কমলবাবু বলেন, “এটা ঠিক, পড়তি বাজার শেয়ার কেনার সুযোগ সৃষ্টি করবে। কেউ যদি দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার ধরে রাখতে পারেন, তা হলে আখেরে মুনাফার মুখ দেখার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” |