সব জল্পনায় দাঁড়ি। প্রত্যাশা মাফিকই মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফট মঙ্গলবার জানিয়ে দিল, স্টিভ বামারের পর, সংস্থার চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসারের (সিইও) কুর্শিতে বসলেন ভারতের হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণ করা সত্য নাদেল্লা। ৪৬ বছরের নাদেল্লা ৭৮০০ কোটি ডলারের এই সংস্থার তৃতীয় সিইও।
|
সত্য নাদেল্লা |
তবে চমক শুধুমাত্র এই একটাই নয়। এ দিন একই সঙ্গে চেয়ারম্যান পদ থেকে সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিল গেট্স-এর বিদায়ের কথাও ঘোষণা করেছে মাইক্রোসফট। তাঁর জায়গায় আসছেন পরিচালন পর্ষদের প্রধান স্বাধীন ডিরেক্টর জন থম্পসন। সংস্থা জানিয়েছে, মাইক্রোসফটে গেট্স-কে এ বার পাওয়া যাবে প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে। থাকবেন পর্ষদের সদস্যও।
ক্রিকেট পাগল আর অবকাশে কবিতায় মজে থাকা আইএএস অফিসারের ছেলে নাদেল্লার পড়াশোনা বেগমপেট-এর হায়দরাবাদ পাবলিক স্কুলে। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন মাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে। তার পরই পাড়ি মার্কিন মুলুকে। সেখানেই কম্পিউটার সায়েন্স ও ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি অর্জন। সান মাইক্রোসিস্টেমস-এ কিছু দিন কাজের পর ১৯৯২ সালে পা তথ্যপ্রযুক্তির পীঠস্থান মাইক্রোসফটে। কিন্তু এত কিছুর পরেও, তাঁর ছোটবেলা থেকে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলার অভ্যেসটাই কেরিয়ারের যাবতীয় সাফল্যের মূলে বলে মনে করেন নাদেল্লা। যে কারণে এ দিনও তিনি জানান, ক্রিকেটই তাঁকে নেতৃত্ব দিতে শিখিয়েছে। দেখিয়েছে দল হিসেবে কী করে এগিয়ে যেতে হয় সাফল্যের চূড়ায়। যার ফল তিনি পেয়েছেন মাইক্রোসফটে তাঁর ২২ বছর কাজের অভিজ্ঞতার প্রতিটি ধাপে।
এমনিতে বিল গেট্স ও পল অ্যালেনের তৈরি মাইক্রোসফট তার ৩৯ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র দু’জন সিইও-কেই পেয়েছে। প্রথমে গেট্স এবং তার পর স্টিভ বামার। বামার তাঁর অবসর নেওয়ার ইচ্ছের কথা জানানোর পর, ওয়াশিংটন (রেডমন্ড) ভিত্তিক সংস্থাটি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু করে দিয়েছিল উত্তরসূরির খোঁজ। তখনই জোরালো ভাবে উঠে আসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাদেল্লার নাম। যিনি ছিলেন সংস্থার ক্লাউড ও এন্টারপ্রাইজ গ্রুপের এগ্জিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট।
নাদেল্লা এমন সময়ে সিইও পদে এলেন, যখন কম্পিউটারের সফটওয়্যার উইন্ডো ও অফিস-এর বৃত্তের বাইরে আরও এক ধাপ এগিয়ে মোবাইল ফোন তৈরির দুনিয়ায় একই রকম আধিপত্য কায়েমের স্বপ্ন দেখছে মাইক্রোসফট। যে কারণে সম্প্রতি তারা হাতে নিয়েছে ফিনিশ হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক নোকিয়াকে। আর ব্যবসার এই নতুন অধ্যায়ে দূরদর্শী, যোগ্য নেতা ও দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নাদেল্লার থেকে ভাল আর কেউ ছিলেন না বলেই এ দিন মন্তব্য করেন গেট্স এবং বামার। যার যোগ্য মর্যাদা দিয়ে সংস্থার কর্মীদের পাঠানো প্রথম ই-মেলে নতুন সিইও-র বার্তা, “আমাদের অসম্ভবকে বিশ্বাস করতে হবে এবং যা বিশ্বাস করা শক্ত, তাকে বাদ দিয়ে দিতে হবে” অস্কার ওয়াইল্ডের সেই বিখ্যাত উক্তি, যা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেই এই স্বপ্নের উত্থান সত্যি করেছেন নাদেল্লা। |