বোর্ড গঠনের পাঁচ মাসের মধ্যেই পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ইস্তফা দিলেন শাসক দলের দুই বিজয়ী সদস্য। দু’জনের অন্যতম কৌশিক প্রামাণিক সংশ্লিষ্ট আমোদপুর পঞ্চায়েতের গত তিন বারের তৃণমূল সদস্য। সম্প্রতি তিনি বিডিও-র কাছে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কৌশিকবাবুর পদত্যাগ করার ঠিক দু’ দিনের মাথায় সিউড়ি (সদর) মহকুমাশাসকের কাছে ইস্তফা দিয়েছেন সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা কল্যাণী মণ্ডলও। আর দু’জনের ওই পদত্যাগকে ঘিরেই নানা জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অভিযোগ, দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর চাপের মুখেই তাঁরা পদত্যাগ করলেন। দু’জনে মুখে অবশ্য তা মানছেন না।
তৃণমূল সূত্রে খবর, আমোদপুর ১২ নম্বর সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য কৌশিকবাবু গত ২৯ জানুয়ারি সাঁইথিয়ার বিডিও-র কাছে ইস্তফা দিয়েছেন। জন্মলগ্ন থেকেই তিনি তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন। ২০০৩-’০৮ পর্যন্ত আমোদপুর পঞ্চায়েতের বিরোধী নেতাও ছিলেন। পরের নির্বাচনেই তৃণমূল ওই পঞ্চায়েত দখল করে। যার নেপথ্যে তাঁরই ভূমিকা ছিল বলে তৃণমূলের অনেক নেতাই মনে করেন। যদিও তখন প্রধান পদটি সংরক্ষিত হওয়ায় তাঁকে উপপ্রধান হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এ বারের ভোটে ২০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৬টিই ছিনিয়ে নিয়ে বোর্ড দখল করে। কিন্তু প্রধান করা হয় কৃষ্ণা ভট্টাচার্যকে। ওই পঞ্চায়েতে এই মুহূর্তে বিরোধীদের আসন সংখ্যা ৪টি। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আশঙ্কা ছিল প্রধান না করায় কৌশিকবাবু কৃষ্ণাদেবীর বিরুদ্ধে দলের জয়ী সদস্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে একই আশঙ্কা ছিল দলে কৌশিকবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কল্যাণীদেবীকে নিয়েও। ফলে ওই দু’জনের উপরে প্রথম থেকেই একটা চাপ ছিল বলে দাবি। সম্প্রতি দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর দিক থেকে সেই চাপ আরও বেড়ে যাওয়াতেই তাঁরা দু’জনে পদত্যাগ করলেন বলে তৃণমূলের ওই সূত্রের খবর। পদত্যাগের ফলে ওই পঞ্চায়েত নিয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আশঙ্কা অনেকটাই কাটল।
জেলার রাজনীতিতে কৃষ্ণাদেবী জেলা সভাপতি গোষ্ঠীর বলেই পরিচিত। তাঁর উপরে যাতে কোনও দিনই কোনও অনাস্থা আনার সুযোগ না থাকে, তাই কৌশিকবাবুদের উপরে একটা চাপ রাখা হচ্ছিল বলে খবর। তার জেরেই দু’জনে ইস্তফা দিয়েছেন বলে তৃণমূলেরই কেউ কেউ দাবি করছেন। কৌশিকবাবু এবং কল্যাণীদেবী দু’জনেই অবশ্য সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, “নিতান্তই ব্যক্তিগত কারণে ইস্তফা দিয়েছি।” এ দিকে, কৃষ্ণাদেবী বলেন, “কৌশিকবাবু ঠিক কী কারণে ইস্তফা দিলেন, তা জানি না।” অন্য দিকে তৃণমূলের সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি সাবের আলি খানের দাবি, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তাই মন্তব্য করব না।” |