এক হাতে বীণা, আর এক হাতে বই। সঙ্গে বাহন হংস। সাধারণত এটাই সরস্বতীর পরিচিত রূপ। আর এই রূপেই কোথাও নতুন বেদী করে, কোথাও ছোট চৌকির উপরে বসানো হয় দেবী সরস্বতীকে। কিন্তু মাড়গ্রাম থানার গয়তা গ্রামের রায় পরিবারের তিনশো বছরের প্রাচীন সরস্বতী পুজো সে দিক থেকে আলাদা। এখানে সরস্বতী প্রতিমার পাশে থাকেন লক্ষ্মীও। শ্বেতবরণা সরস্বতীর সঙ্গে এখানে লক্ষ্মী যেমন দেবী কমলা রূপে পূজিত হন। তেমনই লক্ষ্মী এখানে অধিষ্ঠিত জাম্ববতী রূপে। সঙ্গে রয়েছেন জয়া, বিজয়াও। মোট ৫টি দেবী মূর্তির পুজো (স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচ পুতলা’) এখানে হয়। শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে শুরু হয়ে পুজো চলে সপ্তমী তিথি পর্যন্ত। তিন দিন পুজোর পরে চার দিনের মাথায় বিসর্জন হয়। |
পুজোয় মেতেছেন মহিলারা।—নিজস্ব চিত্র। |
এমনিতে গ্রামের মধ্যিখানটা রায় পরিবারের এই পুজোর জন্যই এলাকায় সরস্বতী তলা নামে পরিচিত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ পুরুষ আগে পরিবারের পূর্বপুরুষ নীলমণি রায় এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। বর্তমান বংশধর রাজকুমার রায় বললেন, “বছর পাঁচেক আগে অবধি এগারো শতক জায়গার মধ্যে দু’শতক জায়গা নিয়ে মাটির দু’চালা সরস্বতী মন্দির ছিল। এখন সেখানে মাটি দিয়ে ইটের গাঁথনির দেওয়ালের উপর টিনের ছাউনি দিয়ে মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে।” তবে আগেকার মতো এখনও রায় পরিবারের সরস্বতী পুজোয় গ্রামের অবাল বৃদ্ধবনিতা উত্সবের আনন্দে মেতে ওঠেন। এখনও মাড়গ্রাম থানার গাঙ্গেড্ডা গ্রাম থেকে ঢাকিরা হাজির হন। তবে আগের মতো ময়ূরেশ্বরের ডাবুক গ্রাম থেকে এখন আর প্রতিমার কারিগর আসেন না। গ্রাম সংলগ্ন দুনিগ্রাম থেকে সনত্ সূত্রধর প্রতিমা তৈরি করেন। প্রতিমার চালিতে এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে পটশিল্পের কাজ করা হয়।
তবে সরস্বতী পুজো ঘিরে আগে গ্রামের লোকেদের নিয়ে যে যাত্রার আসর বসত, তার চলন কয়েক বছর আগেই উঠে গিয়েছে। রায় পরিবারের আর এক বংশধর পার্থপ্রতিম রায় জানান, পুজো ঘিরে এখনও পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়েরা এখনও দূর-দূরান্ত থেকে গ্রামে আসেন। গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত কর্মকার, সুনীল মণ্ডলরা বলেন, “রায় পরিবারের সরস্বতী পুজো মানে শুধু গয়তা গ্রাম নয়, গ্রাম সংলগ্ন বোনতা, বেলুন, সদাশিবপুর এই তিন গ্রামের সবাই-ই আনন্দ উন্মাদনার সঙ্গে ওই পুজোয় যোগ দেন।” গয়তার রায় পরিবারের ‘পাঁচ পুতলা’র তিন দিনের এই সরস্বতী পুজো প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রেখে আজও নতুনের স্বাদ দেয়। |