থিমের ঘনঘটা দেখা যায় দুর্গাপুজোয়। সেই চল রয়েছে কালীপুজোতেও। কিন্তু সরস্বতীর মণ্ডপে থিম, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তা তেমন দেখা যেত না। এ বার অবশ্য আসানসোল-দুর্গাপুরে অধিকাংশ মণ্ডপেই নানা থিমের রমরমা। কোনও মণ্ডপে কার্টুনের নানা চরিত্র, কোথাও বর্ণ পরিচয়, কোথাও আবার দেবী হাজির ফেসবুক প্রোফাইলে।
দুর্গাপুরের তেঁতুলতলা কলোনি কিশোর সঙ্ঘ প্রতি বারই নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে। ৩১ বছরে পা দেওয়া এই পুজো কমিটি এ বার কোনও মণ্ডপ না বানিয়ে একটি পুকুরকে ঘিরে পুজোর আয়োজন করেছেন। পুকুরের মাঝে স্বর্ণমন্দিরের আদলে তৈরি মন্দিরে অধিষ্ঠান দেবীর। পুকুরপাড়ে বিভিন্ন কুঁড়েঘর বানিয়ে রাখা হয়েছে নানা কার্টুন চরিত্রের মডেল। মিকি মাউস থেকে ডোরেমন, রয়েছে সবাই। গত বছর পুকুরে সমুদ্রমন্থনের দৃশ্য ফুটিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিল এই ক্লাব। উদ্যোক্তাদের পক্ষে ভাস্কর বৈদ্য, শ্যামসুন্দর মণ্ডলেরা বলেন, “আশা করি কচিকাঁচাদের সঙ্গে বড়দেরও ভাল লাগবে এই থিম।”
নডিহা-আনন্দপুর প্রগতি সঙ্ঘের প্রতিমা ও মণ্ডপে প্রতি বারই অভিনবত্ব আনার চেষ্টা থাকে। গত বছর বিভিন্ন মিষ্টি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে তাক লাগিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। ক্লাবের সদস্য তথা শিল্পী কার্তিক বাদ্যকর জানান, এ বার ছ’ফুট উচ্চতার প্রতিমার মাটির কাঠামোর উপর বিভিন্ন সব্জি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। লাউ, কুমড়ো, লঙ্কা, আদা, পিঁয়াজ, গাজর, পেঁপে নানা ভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। কুমড়োর আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ।
দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া সুভাষপল্লি যুগের প্রতীক ক্লাবের বাণিবন্দনায় এ বারের থিম বর্ণপরিচয়। পুজো প্রাঙ্গণে চারদিকে বর্ণের সাথে বিভিন্ন মডেল তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তা সুশান্ত ভৌমিক, বুদ্ধদেব খাঁড়ারা জানান, ক্লাবের সদস্যেরাই দিন রাত পরিশ্রম করে এ সব তৈরি করেছেন। এর সঙ্গে সাউন্ডবক্সে বাজানো হচ্ছে বর্ণপরিচয়ের ধ্বনি।
জামুরিয়ার বীরকুলটি গ্রামের নবারুণ সঙ্ঘের মণ্ডপ এ বার বাঁশ ও পাথর দিয়ে নির্মিত শিব মন্দির। ক্লাবের সদস্যেরাই তা গড়েছেন। বাইরে পাথরের খাঁজে হর-গৌরীর মূর্তি। ভিতরে দেবীর অধিষ্ঠান। বীজপুরে তরুণ সঙ্ঘের মণ্ডপ হয়েছে আস্ত হাঁসের আদলে। তার পেটে দেবীমূর্তি। রানিগঞ্জের পূর্ব কলেজ পাড়ায় জয় মাতাদি ক্লাবের মণ্ডপ প্রাঙ্গণে কৃষ্ণের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানা সময়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে মাটির মডেলে। ওই পাড়াতেই বোরাপট্টি সর্বজনীন সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে কর্তব্যরত সীমান্তরক্ষীদের নানা মডেল সাজানো হয়েছে। ইয়ংস্টার ক্লাব প্রাঙ্গণে সাধুর স্বপ্নে ভরসা করে মাটি খুঁড়ে সোনা খুঁজে বের করার দৃশ্য, সুপারস্টার ক্লাবের মণ্ডপে সারদা-কাণ্ড, পূর্ব কলেজপাড়া সরস্বতী পুজো প্রাঙ্গণে উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে মাটির মডেলে।
পুরাতন এগরায় শিবশক্তি ক্লাবে আকর্ষণ জীবন্ত সরস্বতী। রানিগঞ্জ মহাবীর কোলিয়ারির মণ্ডপের সামনে নানা রাজনৈতির নেতার ছবি। উদ্যোক্তাদের দাবি, সর্বদল ঐক্য তুলে ধরতেই এই প্রয়াস। অন্ডালের উখড়ায় নবভারতী সঙ্ঘ মণ্ডপের সামনে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বিবিরবাধ পাড়ায় জাগৃতি সঙ্ঘের মণ্ডপ ফেসবুকের আদলে। উখড়া শুকোপাড়া জীবন সঙ্ঘ অন্ডালের বিমাননগরীর অনুকরণে মণ্ডপ প্রাঙ্গণ সাজিয়েছে। জামুরিয়ার বোগড়াচটি গ্রাম মোড়ে নবীন সঙ্ঘের পুজোয় ‘ছোটা ভীম’-এর পরিজনদের মাঝে দেবী সরস্বতী।
সদ্য প্রয়াত সুচিত্রা সেনের স্মরণে মণ্ডপ গড়েছে নিয়ামতপুরের বান্ধব সম্মিলনি ক্লাব। বার্নপুরের সবুজ সঙ্ঘের মণ্ডপে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। কুলটির অমর সঙ্ঘেও এ দিন সারা দিন জমজমাট উৎসব হয়েছে।
বুদবুদের রণডিহা যুব গোষ্ঠীর এ বার থিম একশো দিনের কাজ। বিভিন্ন মডেল তৈরি করে একশো দিনের কাজের নানা দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাবের পক্ষে মনো বাগদি জানান, সদস্যেরাই এই থিম বানিয়েছেন। গ্রামে একশো দিনের কাজ নিয়ে প্রচার চালানোর জন্যই এই উদ্যোগ। প্রতিমা রাখা হয়েছে অশোক স্তম্ভের নীচে। বাগদেবীর আরাধনায় গ্রাম বাংলার দৃশ্য তুলে ধরেছে সোঁয়াই কবিবাজ পাড়া।
শহর থেকে গ্রামীণ এলাকা, থিমের পুজোয় মেতেছে সবাই। |
(সহ-প্রতিবেদন: সুশান্ত বণিক) |