যন্ত্র নিয়ে ধারণার অভাব ঝুঁকির, শিখলেন শ্রমিকেরা
শিল্পাঞ্চলের কল-কারখানায় প্রায়শয়ই লেগে থাকে দুর্ঘটনা। শ্রমিক-কর্মীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে কখনও-সখনও। কর্তাদের অনেকের মতে, বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ধারণা না থাকায় নানা সময়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যান শ্রমিকেরা। এই সমস্যা দূর করতে দুর্গাপুরের শ্রমিক মেলায় বড় পর্দায় ছবির মাধ্যমে হাতে-কলমে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলেন বিশেষজ্ঞেরা।
জানুয়ারিতে পক্ষকালব্যাপী সামাজিক সুরক্ষা সচেতনতা শিবির হত আগে। পরে তা বেড়ে হয় এক মাসের। এ বার দুর্গাপুরে গাঁধী মোড় ময়দানে রাজ্যের প্রথম শ্রমিক মেলায় সুরক্ষা বিষয়ক নানা ধ্যান-ধারণা পেয়ে উপকৃত হলেন শ্রমিকেরা। ১-৪ ফেব্রুয়ারি এই মেলায় বর্ধমান ছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বহু শ্রমিক। সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কেও তাঁদের জানানো হয় মেলায়। বাড়ি ফিরে অন্য শ্রমিকদের এ সবের কথা জানাবেন, জানিয়েছেন মেলা ফেরত লোকজন।
শ্রমিক মেলায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
মেলায় ৩২টি স্টলের মধ্যে শ্রম দফতর ছাড়াও ছিল কৃষি, ক্রেতা সুরক্ষা-সহ নানা সরকারি দফতরের স্টল। কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রচারে বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য চালু বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ব্যাপারে বিশদে তথ্য দেওয়া হয়। দুর্গাপুরের ডেপুটি লেবার কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী জানান, কারখানায় শিল্পবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শ্রমিকেরা যাতে কোনও ভাবে বঞ্চিত না হন, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, “কারখানায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতির টেকনিক্যাল ব্যবহার সম্পর্কে ঠিক মতো ধারণা না থাকায় শ্রমিকেরা অহেতুক ঝুঁকির মুখে পড়েন।” ন্যাশনাল সেফটি কাউন্সিলের এ রাজের্য ভাইস চেয়ারম্যান তথা আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় যোগ করেন, “যেমন, বয়লার ফেটে মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার শিকার হন শ্রমিকেরা। মেলায় সে ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।”
মেলায় ছিলেন ইএসআই এবং দ্য মিশন হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। ইএসআইয়ের মাধ্যমে শ্রমিকরা কী সুবিধা পেতে পারেন, তা জানানোর সঙ্গে শ্রমিকদের চিকিৎসাও করা হয়। চার জেলা থেকে আসা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির হাতে গড়া জিনিসপত্রের প্রদর্শনী ছিল মেলায়। ছিল ছৌ, বাউল, রবীন্দ্র গীতিনাট্য ও আধুনিক বাংলা গানের আসরও। কত জন মেলায় এসেছিলেন, তার হিসেব না রাখা হলেও স্বেচ্ছায় নাম নথিভুক্ত করে রাখার ব্যবস্থা ছিল। সেই হিসেব অনুযায়ী, শেষ দিন পর্যন্ত উপভোক্তা দফতরের স্টলে এসেছিলেন প্রায় ছ’শো, শ্রম দফতরের কর্ম সংস্থান অধিকার স্টলে চারশো, কর্মচারী রাজ্য বিমা নিগমের স্টলে শ’তিনেক, অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য ভবিষ্যনিধি প্রকল্পের স্টলে অন্তত পাঁচশো জন হাজির হয়েছিলেন।
কর্মচারী রাজ্য বিমা নিগমের স্টলে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী চন্দন চট্টোপাধ্যায়, ডিপিএলের ঠিকাকর্মী স্বপনকুমার সাহা, ডিএসপি-র ঠিকা শ্রমিক মিলন ভট্টাচার্যেরা। তাঁরা জানান, সবিস্তার জানা না থাকায় এত দিন এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেননি তাঁরা। মেলায় এসে ফর্ম নিয়ে গেলেন। ফিরে সহকর্মীদেরও জানাবেন। অন্ডাল থেকে আসা মিলন সাউ মেলায় বসে হাতে-কলমে বানিয়ে দিচ্ছিলেন ক্রিস্টাল, রাজকোটের পুঁতি, গুজরাতি স্টোনের সামগ্রী। তিনি বলেন, “অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত ভবিষ্যনিধি প্রকল্পের আওতায় যে আমিও পড়ি, তা এখানে এসে জেনেছি।”
সিটি সেন্টারে পরিচারিকার কাজ করেন রায়ডাঙার শীলা বসু। সোমবার লোকমুখে মেলার কথা শুনে এসেছিলেন তিনি। জানালেন, এখানে না এলে জানতেই পারতেন না, রাজ্য সরকারের ভবিষ্যনিধি প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন তিনি। এমনকী, অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য সরকারি অনুদানও পেতে পারেন। সরকারি কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন, এই সব সুবিধা পেতে কী কী করতে হবে। মেলা থেকে বেরোনোর মুখে শীলাদেবী বললেন, “আমার মতো কত মহিলা পরিচারিকার কাজ করেন। এ সব জানলে সকলেরই কত দুশ্চিন্তা কমবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.