অনেকে জানতই না আমরা স্বামী-স্ত্রী

স্বামী-স্ত্রী এক পেশায় থাকার জন্যই কি শিবাজী চট্টোপাধ্যায় আর অরুন্ধতী হোমচৌধুরী একক শিল্পী হিসেবে তেমন করে জনপ্রিয়তা পেলেন না?

অরুন্ধতী: ‘আলো’ ছবিতে একসঙ্গে সঙ্গীত পরিচালনা করার পর থেকেই সব জায়গায় অরুন্ধতী-শিবাজী নাম দুটো একসঙ্গে উচ্চারিত হতে থাকে। আমি শিবাজীর অনেক আগে থেকেই গান করছি। আজও একক ভাবেই অনুষ্ঠান করি আমরা। শিবাজীকে প্রথমেই বলেছিলাম, আমরা ‘উৎপলা-সতীনাথ’ হব না। আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়াটা খুব ভাল বলে এক পেশায় থেকেও কোনও অসুবিধা তো হয়ইনি, বরং সুবিধাই হয়েছে। আমরা প্রয়োজনে একে অপরের সমালোচনাও করতে পারি। এটা আমাদের গানের ক্ষেত্রে জরুরি।
শিবাজী: আজও অনেকেই জানে না আমরা স্বামী-স্ত্রী! প্রথম দিকে বিদেশে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এক ঘরে থাকছি শুনে লোকে খারাপ চোখে দেখত!

সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গায়িকা অরুন্ধতী হোমচৌধুরী কি আপনার চেয়ে এগিয়ে?
শিবাজী: আমার চেয়ে গায়িকা হিসেবে ও অনেক এগিয়ে।
অরুন্ধতী: আমি গান করতে শুরু করি অনেক আগে। ১৯৬৯-য়ে আমার প্রথম রেকর্ড। শিবাজী তখন ছিল না।

শিবাজী চট্টোপাধ্যায় এলেন কী ভাবে? শুনেছি আপনারা লিভ-ইন করতেন?
অরুন্ধতী: কখনওই না। শিবাজীর সঙ্গে আলাপ দীনেন্দ্র চৌধুরীর ‘গ্রামীণ শিল্পী সংস্থা’-য় গান গাইতে গিয়ে।

শান্তনু বসুও তো আপনাদের বন্ধু ছিলেন, তাই না?
অরুন্ধতী: শান্তনু আমাদের সঙ্গে এখনও কাজ করে। আমার প্রথম গানের রেকর্ডেও অ্যারেঞ্জ করেছিল।

১৯৮৫-তে ‘ভালবাসা ভালবাসা’, তার পরে ‘আলো’। আজ শিবাজী-অরুন্ধতী কোথায়?
শিবাজী: অরুন্ধতী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হল ছাড়া অনুষ্ঠান করবে না। আমি যেমন পাড়ায় পাড়ায় অলিগলিতেও গান গাইতে চলে যাই, ও যেত না। ফলে
ওর অনুষ্ঠান কমে আসে। লোকে ভাবতে থাকে, অরুন্ধতী গান করে না। আমাদের বহু গান হারিয়ে গিয়েছে। এফ. এম.-এর এই সময়টা তো আমরা পাইনি। কারণ তখন ক্যাসেট কোথাও বাজত না। সব গান কি আর মানুষ কিনে শোনে?
অরুন্ধতী: এটা করেছিলাম বলেই ছেলেকে প্রচুর সময় দিতে পেরেছিলাম। আমাদের সব গান তো আর জনপ্রিয় ছিল না! সেগুলো বাজল না।

কেন? প্যান্ডেলে তো গান বাজত...
অরুন্ধতী: সেগুলো জনপ্রিয় সিনেমার গান ছিল। আমি সলিল চৌধুরীর সুরে যে পনেরোটা গান গেয়েছি, সেগুলো অনেকে আজও জানে না।
কেন? আপনাদের পি.আর খুব খারাপ ছিল তা হলে?
অরুন্ধতী: নাহ্, তা নয়। সলিলদার সুরে আমার গান যখন বাজারে এল, ঠিক তখনই লতাজির গান এল। লোকে নিশ্চয়ই আমার চেয়ে লতাজির গানই বেশি শুনবে। এটাই স্বাভাবিক।

তা হলে মুম্বইয়ের শিল্পীরা কি আপনাদের খ্যাতি কেড়ে নিলেন?
শিবাজী: সত্যিই তাই। এক দিকে মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমারের মতো গায়ক। অন্য দিকে রাহুল দেব বর্মন, বাপি লাহিড়ির
মতো সুরকার। আমরা তখন কাজ পেলেও লো বাজেটের বাংলা ছবির কাজ পাচ্ছি।
ছবি: কৌশিক সরকার
আপনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে অনুকরণ করতেন কেন, শিবাজী?
শিবাজী: হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নকল করলে আজ আমার সাক্ষাৎকার নেওয়া হত না। আমি কপি সিঙ্গার হিসেবে হারিয়ে যেতাম। গায়কির ক্ষেত্রে আমি নিশ্চয়ই ওঁকে অনুসরণ করি। উনি বলতেন আমায় “তুই আমার ছেলে হলে সবচেয়ে ভাল হত।” শ্রোতারা আজ আমার গানও শোনেন, আবার আমার গলায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানও শুনতে চান।

নিউ এজ বাংলা ছবিতে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে যে ধরনের এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে, সেটা কি ভাল লাগে?
অরুন্ধতী: রচয়িতার ওপর ছুরি চালাব না আমি। স্বরলিপি থেকেও সরে আসব না। ছবির স্বার্থে মিউজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট বদলাতে পারি।

মানে রবীন্দ্রনাথের গানে জ্যাজ বাজলে আপনার অসুবিধা নেই তো?
অরুন্ধতী: অবশ্যই আছে। আগে দাঁত চিপে বা নাকি সুরে একটা টিপিক্যাল গায়কির সঙ্গে এস্রাজ নিয়েই কেবল রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া হত। সেটা ইদানীং বদলেছে, তা আমি সমর্থন করি। কিন্তু তার বাইরের বদলে আমার মত নেই। যেমন ‘আলো’ ছবিতে ‘শ্রাবণের ধারার মত’ গানটার চলনটা ছবির ভাব অনুযায়ী খানিক বদলেছিলাম। কিন্তু সুর-তালে কোনও বদল হয়নি।
শিবাজী: কিন্তু অঞ্জন দত্ত ছবিতে যে ভাবে ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ ব্যবহার করেছেন, সেটা তো লোকের ভাল লেগেছে মেনে নিতেই হবে। তবে আমি ওই ভাবে গান ব্যবহার করতে পারব না। আমি মনে করি, যাঁরা রবীন্দ্রনাথের গান সঠিক ভাবে বোঝেন, তাঁরা অন্যায় ভাবে গানগুলো নষ্ট করবেন না। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে গিমিক করা যায় না।

অরিজিৎ সিংহ? রূপম ইসলাম?
শিবাজী: অরিজিৎ সিংহ-র গলা ভাল, তবে ওকে আরও প্রমাণ করতে হবে। রূপমও হার্ড রক গায়ক হিসেবে ভাল, তবে এখন ‘ও চাঁদ সামলে রেখো জোছনাকে’ আর পাই না।
অরুন্ধতী: ঠিক তাই। এখনকার শিল্পীরা তৈরি হলেও মেলোডির বড় অভাব।

তা হলে কণ্ঠ নয়, গানের মেলোডি নিয়ে আপনাদের আপত্তি?
শিবাজী: আমাদের গানের ধারাটা আজকের বাংলা গানের রচয়িতারা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেটা হবে না। কারণ সবার শেষে রবীন্দ্রনাথ আছেন। এখনকার বাংলা গানের ফরম্যাট আমি বুঝতে পারি না। নচিকেতাকে বলেছিলাম এ বিষয়ে। ও আমায় আধুনিক কবিতা পড়তে বলল।
অরুন্ধতী: আধুনিক কবিতার কী মানে আমি জানি না। মনে দাগ কাটার মতো গানের রচয়িতা দেখতে পাচ্ছি না।

মনে রাখার মতো কোনও গানই নেই?
শিবাজী: ধুর! এখন কোনও গানের পুরো লাইনও মনে থাকছে না! একটা সিনেমার গানেই তো শুনলাম, কী সব ছায়া, সায়া, কার্নিশ নিয়ে তৈরি! শিলাজিৎ-এর ‘ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা’-র পরের লাইন কেউ জানে? খুব খারাপ লাগছে এটা।

ব্যান্ডের গান তো এখন খুব জনপ্রিয়। সেগুলোও বোঝেন না?
শিবাজী: নচিকেতার গান তো আমি বুঝতে পারি। তবে? ‘বেণীমাধব’ তো বুঝি। ভূমি, দোহার, চন্দ্রবিন্দুর কিছু গানও খুব মর্মস্পর্শী।

আর কবীর সুমন?
শিবাজী: সুমনের অনেক গান আমি বুঝি না। তরুণ মজুমদারের ‘অভিমানে অনুরাগে’ ছবিতে ওঁর একটা গান আমি সামনে দাঁড়িয়ে রেকর্ড করিয়েছিলাম। তার পর সুমন বাংলা গানে ঝড় তুললেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ, সলিল চৌধুরীর পরে কবীর সুমন, এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এই তো সবে গান গাইতে এলেন, থাকুন একটু। কাদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করছেন উনি? আমরা তো তারও আগে থেকে শুরু করে এখনও গাইছি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.