১৯৩ কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দিল উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এনবিএসটিসি)। রবিবার সংস্থার রিক্রিয়েশন হল ঘরে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই কর্মীদের হাতে স্বেচ্ছাবসরের পাওনার প্রথম কিস্তির এক তৃতীয়াংশ টাকার চেক বিলি করা হয়। আগামী ৪৫ দিনের মাথায় দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৯০ দিনের মাথায় তৃতীয় তথা শেষ কিস্তির টাকার চেক প্রাক্তন কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে নিগমের তরফে জানানো হয়েছে।
এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এই দিন বলেন, “কর্মীদের বকেয়া মেটাতে ২৮ কোটি টাকা খরচ হবে। তার মধ্যে এ দিন প্রথম দফায় সাড়ে নয় কোটি টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত বাকিরাও স্বেচ্ছাবসরের আওতায় আসবেন। এতে তৈরি হওয়া শূন্য-পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।” সংস্থার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জয়দেব ঠাকুর জানিয়েছেন, “৯০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে। রাজ্য প্রকল্পের তালিকাভুক্ত সকলের জন্য ৯৫ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার অনুমোদন দিয়েছে।” |
ইসলামপুরের গোপাল গুণের হাতে প্রকল্পের প্রথম চেক তুলে দিচ্ছেন
উত্তরবঙ্গ
উন্নয়ন মন্ত্রী। কোচবিহারে হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি। |
সংস্থার বেহাল অবস্থা ফেরানোর ভাবনা থেকেই ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে স্বেচ্ছাবসরের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। শুরুতে সাড়ে তিনশ কর্মী আবেদন জানান। পরে সময়সীমা বাড়ানো হলে আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৫৯২ জনের নাম অনুমোদন করে পরিবহণ দফতর। এর মধ্যে ৩ জন মারা গিয়েছেন। সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৫৮৯। তাঁদের মধ্যেই শারীরিক ভাবে অক্ষম, অশক্তদের মধ্য থেকে ১২৩ চালক, ২৮ জন কন্ডাক্টর-সহ ১৯৩ জনকে চেক দেওয়া হয়।
দুই বছর আগে দুর্ঘটনায় জখম হয়ে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করার ক্ষমতা হারান ইসলামপুরের গোপাল গুনের হাতে এ দিন প্রকল্পের প্রথম চেক দেওয়া হয়। শারীরিক সমস্যায় তিনি মঞ্চে উঠতে পারবেন না বুঝেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নিজেই এগিয়ে গিয়ে তাঁর হাতে চেক তুলে দেন। গোপালবাবু তখন বলেন, “পা দু’টি অকোজো হয়ে পড়ায় ঠিকঠাক কাজ করতে পারছিলাম না। প্রচুর ছুটি নিতে হচ্ছিল বলে পুরো বেতন পাচ্ছিলাম না। যা পেতাম তাও অনিয়মিত ছিল। সংসার চালাতে বিপাকে পড়েছিলাম। আজ একটু শান্তিতে ঘুমাব।” দিনহাটার মঙ্গল দে কিংবা শিলিগুড়ির বিক্রমজি রাই’রাও শারীরিক ভাবে অশক্ত। চেক পেয়ে হাসি ফোটে তাঁদেরও। নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময়েই স্বেচ্ছাবসরের ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তা বাস্তবায়িত হওয়ায় ভাল লাগছে।”
সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সংস্থার কর্মী সংগঠনগুলি। ইনটাকের এনবিএসটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক সুজিত সরকার বলেন, “খুব ভাল একটা ব্যাপার। তবে স্বাভাবিক ভাবে অবসর নেওয়া কর্মীরে পাওনা মেটাতেও এই ধরনের উদ্যোগ দেখতে চাই।” নিগমে ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে ভিআরএস প্রাপকদের এ দিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংগঠনের সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ধীরে ধীরে সংস্থা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আমাদের আশা।” এদিন সংস্থার সদর দফতরে পরিচালন বোর্ডের বৈঠক হয়। নিগমের বেহাল আর্থিক অবস্থার হাল ফেরাতে বন্ধ লাভজনক রুট চালু, বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৫০ করা, কোচবিহারের জন্য আরও নতুন দোতলা বাস কেনার মতো নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়। |