অস্ত্রোপচারে মেলে তারিখ, শিবিরই ভরসা মেডিক্যালে
টানা চার মাস ভুগছিল বছর চোদ্দোর আসরাফুল গায়েন। গড়বেতা ব্লকের রুপারশোল গ্রাম থেকে দীর্ঘপথ উজিয়ে সানোয়ার বারবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এসেছেন ছেলেকে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের তারিখ মেলেনি। অবশেষে গত শুক্রবার হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার হল।
মেদিনীপুর শহর ঘেঁষা গোপগড়ের কিঙ্কর মাজিরও একই অবস্থা। বছর উনিশের এই যুবক প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে ঘুরেছেন। তারপর ২২ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার হবে বলে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। তার পরেও তা হয়নি। শুক্রবার হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার হয়েছে কিঙ্করেরও।
দীর্ঘ দিন যে সব রোগীর অস্ত্রোপচার করা যায়নি, শুক্রবার মেদিনীপুর মেডিক্যালের শল্য বিভাগের উদ্যোগে একটি শিবির করে তাঁদের অস্ত্রোপচার করা হয়। মূলত হার্নিয়ার অস্ত্রোপচারই হয়েছে ওই শিবিরে। মোট ২০ জনের অস্ত্রোপচার করা হয়। শিবিরে অস্ত্রোপচার হওয়া শালবনির মণ্ডলকুপির বাসিন্দা দীনেশ মণ্ডল বলেন, “তিন মাস ধরে হন্যে হয়ে ঘুরে বেরিয়েছি। অস্ত্রোপচার আর হচ্ছিল না। কি ভাগ্য শিবির হল।” শল্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অমিত রায়ের কথায়, “আমরা অস্ত্রোপচারের জন্য সপ্তাহে একদিন একটি টেবিল পাই। তাতে বড় জোর ৩-৪ জনের অস্ত্রোপচার সম্ভব। ফলে, শিবির ছাড়া গতি নেই।” প্রতি ৩ মাস অন্তর যাতে একবার শিবির করা যায় সেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচারের পর রোগীদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকেরা।—নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে অস্ত্রোপচার সত্যিই সমস্যা। আউটডোরে দেখানোর ৪-৫ মাস পর হাসপাতালে ভর্তির দিন ঠিক হয়। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির পরে কবে অস্ত্রোপচার হবে তার কোনও স্থিরতা নেই। ভাগ্য ভাল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্রোপচার হতে পারে। কোনও ক্ষেত্রে লাগতে পারে এক মাস।
কেন এই সঙ্কট? বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতি বিভাগ বাদে অস্ত্রোপচারের টেবিল রয়েছে ৫টি। এর একটি সাধারণ শল্য বিভাগের জন্য, একটি নাক-কান-গলার, ২টি অস্থি বিভাগের ও একটি চক্ষু বিভাগের জন্য। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ২টি করে ইউনিট রয়েছে। ফলে, অস্ত্রোপচারের জন্য একটি ইউনিট সপ্তাহে এক দিন একটি টেবিল পায়। অথচ একটি ইউনিটে গড়ে দিনে চা রজন রোগী আসেন যাঁদের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। অর্থাৎ সপ্তাহে গড়ে ২৮ জনের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। সেখানে একটি ইউনিট সপ্তাহে বড় জোর ৪ জনের অস্ত্রোপচার করতে পারে। আর জটিল অস্ত্রোপচার হলে দু’টির বেশি হয় না। ধরা যাক সপ্তাহে ৪ জনেরই অস্ত্রোপচার হল, তা-ও ২৪ জনের জন্য শুধু তারিখ মিলবে! এই হিসেব থেকে পরিষ্কার ৬ মাসের আগে কারও অস্ত্রোপচার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোথাও সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনা সে দিন পূর্ব নির্দিষ্ট অস্ত্রোপচারও বাতিল হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা ব্যস্ত থাকেন। তখন অস্ত্রোপচারের জন্য ফের একটি তারিখ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট রোগীকে।
সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষেরও অজানা নয়। তাই হাসপাতালের নতুন ভবনে চারটি অপারেশন থিয়েটার করা হয়েছে। তবে বছর গড়ালেও তা চালু করা যায়নি। হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “নতুন অপারেশন থিয়েটার চালু করতে যে সংখ্যক কর্মী প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো উন্নয়ন দফতর এখনও ওই ঘরগুলি পূর্ত দফতরকে হস্তান্তর করেনি। তার আগে আমরা কাজ শুরু করলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জোগাতে পারব না।” এই পরিস্থিতিতে প্রতি বিভাগে ৪০০-৫০০ জন রোগী তারিখ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অস্ত্রোপচার আর হচ্ছে না। যাঁদের সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে করিয়ে নিচ্ছেন। আর যাঁরা নিরুপায়, তাঁদের তারিখ নিয়ে ঘুরে বেরানো ছাড়া উপায় নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.