পরিষেবা এবং পরিকাঠামোয় খামতি থাকায় রাজ্য সরকারের পক্ষে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ডুয়ার্সের দিকে টেনে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বীকার করে নিলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী। এর জন্য অবশ্য আগের বাম সরকারকেই দায়ী করেছেন তিনি। গত শনিবার ডুয়ার্স উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য আলিপুরদুয়ার আসেন মন্ত্রী। রাতে মাদারিহাট ট্যুরিস্ট লজে ছিলেন তিনি।
কৃষ্ণেন্দুবাবুর কথায়, “প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ডুয়ার্সে পর্যটকদের আতিথেয়তা ও বিশেষ করে খাওয়া দাওয়ার মান এখনও যথাযথ নয়। গত এক বছরে আমরা ডুয়ার্সকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে বেশ কিছু কাজ করেছি। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই খামতিগুলি দূর করার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।” এই প্রসঙ্গে পূর্বতন বাম সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে মন্ত্রীর অভিযোগ, “বামেরা পর্যটনে সম্ভাবনাময় ডুয়ার্সকে ব্রাত্য করে রেখিছিল। এর মাসুল এখন দিতে হচ্ছে আমাদেরও। তবে উত্তরে বিভিন্ন হোটেল, রিসর্ট কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আমরা খুব শিগগিরি পরিস্থিতির উন্নতি করব। জমি মানচিত্রের কাজ চলছে।”
পর্যটন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়, নদী ও জঙ্গল লাগোয়া ডুয়ার্সের বহু এলাকার জমির চরিত্র কী অবস্থায় রয়েছে তা চিহ্নিত করার কাজ হয়নি। সম্প্রতি পর্যটন দফতর ওই জায়গাগুলি চিহ্নিত করার জন্য জেলার ভূমি রাজস্ব দফতরকে জমি মানচিত্র তৈরি করার অনুরোধ জানিয়েছে। গত কয়েক দশকে ডুয়ার্সের কাঠ ও চা শিল্পের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে থাকে। সেখানে উঠে আসে পর্যটন। পর্যটন শিল্পকে হাতিয়ার করতে শুরু স্থানীয় বাসিন্দারা দেড় দশক ধরে নিজেদের উদ্যোগে ডুয়ার্সে নানা রিসর্ট, অতিথি নিবাস গড়লেও সরকারি উদ্যোগে খুব একটা কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। ডুয়ার্সের রাস্তায় সরকারি উদ্যোগে ক্যাফেটেরিয়া, শৌচালয়, রেস্তোরাঁর মতে পরিকাঠানো কার্যত নেই বললেও চলে। ভরসা বলতে হাতে গোনা পর্যটন দফতরের কয়েকটি এলাকা। আর বন দফতরের বাংলো। সমস্যা রয়েছে প্রশিক্ষিত কর্মীদেরও।
পর্যটন মন্ত্রীর কথায়, “৩৪ বছরে বাম সরকার ডুয়ার্সের পর্যটন নিয়ে কোনও রকম চিন্তা-ভাবনা করেনি। আমরা ডুয়ার্সকে নতুন করে সাজার ব্যাপারে কাজ শুরু করেছি। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম (অ্যাক্ট) পরিষেবামূলক খামতি কমাতে পর্যটন দফতরের সঙ্গে যৌথভাবে রির্সট এবং হোটেল কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে। সংগঠনের আহ্বায়ক রাজ বসু জানান, যে সমস্ত কর্মীরা রিসর্ট বা লজে কাজ করেন, তারা গ্রামে বড় হয়েছেন। শহুরে মানুষ বা বিদেশিদের সঙ্গে কী ভাবে কথাবার্তা বলা উচিত, খাবার পরিবেশন করা দরকার, ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার, সেই সব বিষয়ে অনেকের খামতি রয়েছে। তা ঠিক করতে প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছে।
বাম আমলের পর্যটন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় বলেন, “অক্ষমতা ঢাকতে কৃষ্ণেন্দুবাবুরা এ কথাবার্তা বলছেন।” |