তিন ইঞ্চি লম্বা ও আধ ইঞ্চি চওড়া একটুকরো পাতার মতো একটি স্টিকার। নাম রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন স্টিকার (আরএফআইডি)।
কলকাতা ও হাওড়া শহরের ট্যাক্সির উইন্ডস্ত্রিনে এ বার লাগানো হবে এমনই স্টিকার। উদ্যোক্তা, হাওড়া সিটি পুলিশ। উদ্দেশ্য, হাওড়া স্টেশন এলাকায় ট্যাক্সিচালকদের যাত্রী-প্রত্যাখ্যান ও হেনস্থার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা। ঠিক হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার ট্যাক্সিতে এই স্টিকার বসবে। পরে বাড়ানো হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই স্টিকারের বৈদ্যুতিন সার্কিটে থাকবে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সি ও চালকের যাবতীয় তথ্য। যা ধরা থাকবে আরএফআইডি যন্ত্রে। যন্ত্র থেকে সার্ভারের মাধ্যমে তথ্য যাবে কম্পিউটারে। পুলিশের দাবি, ওই তথ্য থেকেই প্রয়োজনে ট্যাক্সি বা চালকের খোঁজ মিলবে সহজে। কোন যাত্রী কোন ট্যাক্সিতে উঠলেন, জানা যাবে তা-ও।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডের দাবি, রাজ্যে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০ হাজার স্টিকার ও আরএফআইডি যন্ত্রগুলি এসে গিয়েছে। সেগুলি হাওড়া স্টেশনে প্রি-পেড বুথের সামনে লাগানো হচ্ছে।” তিনি জানান, স্থানীয় এক সংস্থার পাশাপাশি মূল প্রযুক্তিগত সহায়তা করছে দিল্লির একটি সংস্থা। |
যাত্রী প্রত্যাখ্যান রুখতে ট্যাক্সিতে আধুনিক প্রযুক্তি। |
হাওড়া স্টেশনে ট্যাক্সিচালকদের যাত্রী প্রত্যাখ্যান এবং হেনস্থা করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বছর কয়েক আগে হাওড়া স্টেশনে ট্রাফিক পরিচালনার দায়িত্ব রেল পুলিশের থেকে হাওড়া সিটি পুলিশকে দেয় রাজ্য। প্রি-পেড বুথ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় তৃণমূল সমর্থিত ট্যাক্সি সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি ইউনিয়ন। এর পরেই সিটি পুলিশের হাওড়া স্টেশনের ট্রাফিক গার্ড স্টেশন চত্বরে ট্যাক্সি-দালাল ও চালকদের ‘দাদাগিরি’ বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা নেয়। পুলিশের দাবি, এতে অনেকটা কাজ হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশি ভাড়া নিয়ে যাত্রী হেনস্থা বন্ধ হয়নি। শেষমেশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় হাওড়া সিটি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, যে সব ট্যাক্সিচালক স্টিকার লাগাতে আগ্রহী হবেন, তাঁদের একটি ফর্ম দেওয়া হবে। তাতে লিখতে হবে ট্যাক্সির নম্বর, মালিকের নাম, চালকের মোবাইল নম্বর-সহ অন্যান্য তথ্য। যা নথিভুক্ত হবে একটি যন্ত্রে। সেই যন্ত্র থেকে নির্দিষ্ট স্টিকারে তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ট্যাক্সি প্রি-পেড বুথের সামনে ঢুকলেই কাউন্টারে থাকা কম্পিউটারে দেখা যাবে তথ্য।
হাওড়া স্টেশন ট্রাফিক গার্ডের ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইন্দ্রনীল সান্যাল বলেন, “যে সব চালকেরা স্টিকার নেবেন না, তাঁদের জন্য প্রি-পেড বুথে আলাদা লেন হচ্ছে। তাঁরা ওই লেন দিয়ে ঢুকবেন। তবে মনে হয় না, মাত্র ১০ টাকার জন্য চালকেরা ওই স্টিকার কিনতে অস্বীকার করবেন।”
যাত্রী হয়রানি ও প্রত্যাখ্যান রুখতে পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক প্রবীর দাস মহাপাত্র বলেন, “আমাদের সব সদস্য স্টিকার লাগাতে রাজি হয়েছেন।” |