মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস ‘বুক’ করার পরে গ্রাহককে তার প্রাপ্তি স্বীকার করে এসএমএস পাঠিয়েছে তেল সংস্থা। জানিয়েছে, শীঘ্রই মিলবে সিলিন্ডার। কিন্তু তার পর গ্রাহককে হতভম্ব করে ফের তেল সংস্থাই পাঠিয়েছে এসএমএস ওই বুকিং বাতিল হয়ে গিয়েছে!
কেন্দ্র সম্প্রতি ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও আধারের মাধ্যমে ভর্তুকি দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগ, তার পর থেকেই এ ভাবে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকেরা। এসএমএস-এর ‘বুকিং বাতিল’ বার্তা তারই ফলশ্রুতি।
এর আগে পরিবার পিছু বছরে ন’টি ভর্তুকির সিলিন্ডারের কোটা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। তেল সংস্থা সূত্রের খবর, যে সব গ্রাহক ইতিমধ্যেই সেই কোটা শেষ করে কেন্দ্রের সাম্প্রতিক ওই সিদ্ধান্তের পরে অতিরিক্ত সিলিন্ডার বুক করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই বুকিং বাতিলের ঘটনা ঘটছে। ধরা যাক, এক জন গ্রাহক দশম সিলিন্ডারটি সম্প্রতি বুক করেছেন এবং এখনও সেটি পাননি। আগের নিয়ম বলবৎ থাকলে সেটি ভর্তুকিহীন সিলিন্ডার বলে গণ্য হত ও তাঁকে বাজার দরেই (কলকাতায় যা ১১৬৯ টাকা) তা কিনতে হত। কিন্তু ৩১ জানুয়ারি কেন্দ্র জানায়, চলতি অর্থবর্ষে আরও দু’টি ভর্তুকির সিলিন্ডার পাবেন এক জন গ্রাহক। সে ক্ষেত্রে তাঁর ওই দশম সিলিন্ডারটি ভর্তুকির দামে (কলকাতায় যা এখন ৪১৬ টাকা) পাওয়ার কথা। তেল সংস্থাগুলির জানায়, নয়া সিদ্ধান্তের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ভর্তুকির গ্যাস পাওয়ার যোগ্য হিসেবে ধরতে হবে। কিন্তু গ্রাহক যখন গ্যাসটি বুক করেছেন তখন ন’টির হিসেবে তাঁকে ভর্তুকিহীন সিলিন্ডার পাওয়ার যোগ্য হিসেবে ধরা হয়েছিল। এখন তাঁকে ভর্তুকির সিলিন্ডার পাওয়ার যোগ্য হিসেবে গণ্য করতে ওই বুকিংটি বাতিল করা হচ্ছে।
কিন্তু বুকিং বাতিল এসএমএস পেয়ে গ্রাহক কী করবেন? তেল সংস্থা জানিয়েছে, পুরানো বুকিং বাতিল করে নতুন ভাবে ওই গ্রাহকের বুকিং করে দিতে ডিস্ট্রিবিউটরদেরই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অল ইন্ডিয়া ডিস্ট্রিবিউটর্স ফেডারেশনের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক বিজনবিহারী বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাঁরা সেই নির্দেশ মেনে চলছেন। তবে গ্রাহকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কোন গ্রাহকের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটছে, তা খুঁজে বের করতে কখনও সময় লাগছে।
কেন্দ্রের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের পরে আরও কিছু সংশয় রয়েছে। যেমন কেন্দ্র গত সপ্তাহে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুটি করে বাড়তি ভর্তুকির সিলিন্ডার পাবেন গ্রাহকেরা। তেল সংস্থাগুলি অবশ্য জানিয়েছে, মাসে একটি করে ভর্তুকির সিলিন্ডার মিলবে, এমন নির্দেশ তারা পায়নি। তাদের শুধু জানানো হয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মার্চের মধ্যে গ্রাহকেরা মোট দু’টি বাড়তি ভর্তুকির সিলিন্ডার পাবেন। গ্রাহক তাঁর ইচ্ছে মতো এর মধ্যে সেই দুটি কিনতে পারেন।
সংশয় রয়েছে আধার নিয়েও। কেন্দ্র জানিয়েছে, ভর্তুকির জন্য আধার নম্বর বা কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়। অতীতের মতোই গ্রাহকেরা ভর্তুকির-দামেই সিলিন্ডার পাবেন। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির টাকা যাবে না।
তেল সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটরেরা অবশ্য জানাচ্ছে, প্রাপ্য ভর্তুকির সিলিন্ডার অতীতের মতো ভর্তুকির-দামেই সব গ্রাহক পাবেন, এমন নির্দেশ তাঁরা পাননি। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলে তেল সংস্থা ও ব্যাঙ্কের কাছে গ্রাহকদের আধার নম্বর জমা দেওয়ার যে তিন মাসের সময়সীমা ছিল, তা আপাতত অনির্দিষ্ট কালের জন্য উঠে গেল। ফলে যাঁরা আধার নম্বর পাননি বা জমা দেননি, তাঁরাই শুধুমাত্র অতীতের মতো ভর্তুকি-দামে (এখন কলকাতায় যা ৪১৬ টাকা) সিলিন্ডার পাবেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই যাঁদের আধার নম্বর উভয়ের কাছেই নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে পুরানো নিয়মে ভর্তুকি-দামে সিলিন্ডার দেওয়ার কোনও স্পষ্ট নির্দেশ তেল সংস্থাকে পাঠায়নি কেন্দ্র। তাই তেল সংস্থাগুলির দাবি, ওই সব গ্রাহকদের ভর্তুকির সিলিন্ডারও বাজার দরেই কিনতে হবে। তার পর ভর্তুকির টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
তবে তেল সংস্থাগুলি মনে করছে, ভর্তুকির গ্যাসের কোটা বৃদ্ধি বা আধারের মাধ্যমে ভর্তুকি দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত সবেমাত্র নেওয়া হয়েছে। এখনও সব কিছু স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া কেন্দ্র গত সপ্তাহে ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময়েই জানিয়েছিলেন, গ্রাহকদের অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনার দিকগুলি খতিয়ে দেখবে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তারই ভিত্তিতে অদূর ভবিষ্যতে সব সংশয় দূর হবে বলে তাদের আশা। |