প্রতিপক্ষ ভেবে দুর্ব্যবহার, অটো-রাজ জেলাতেও
রাঙা-চোখের ছোঁয়াচ লেগেছে মফস্সলেও!
চোখ পাকিয়ে কথা কিংবা খুচরো নিয়ে অভব্যতা--অটো চড়লে চালকের এমন অভিজ্ঞতা ফিরে পাওয়া প্রায় দস্তুর হয়ে গিয়েছে আম-যাত্রীদের।
গত কয়েক দিনে কলকাতায় অটো চালকদের ঔদ্ধত্য নিছক হুমকি-অসভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে মহিলা যাত্রীকে সজোরে থাপ্পর কিংবা লোহার রড দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। এমনকী কলকাতার দক্ষিণ শহরতলি গাঙ্গুলিবাগান এলাকায় মদ্যপ অটো চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর বলিও হয়েছেন এক প্রৌঢ়।
কিন্তু শহর কলকাতার এই ধারাবাহিক ঘটনার আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছে বিভিন্ন মফস্সলের অটো-কাণ্ড। তাতে অবশ্য হেলদোল নেই জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের।
মালদহ থেকে আসানসোল, রাজ্যের উত্তর-দক্ষিণে বেশ কয়েকটি ঘটনায় অটো চালকের হাতে যাত্রী-হেনস্থার পরে অভিযোগ উঠেছে পুলিশি নিস্পৃহতা নিয়ে। থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে কোথাও যাত্রীদের শুনতে হয়েছে ডিউটি অফিসারের পরামর্শ, ‘সামান্য ব্যাপার তো, মিটিয়ে নিন না।’ অধিকাংশ জেলা প্রশাসনের কাছে হিসেবও নেই পারমিট ও লাইসেন্স নিয়ে চলছে কতগুলি অটো কিংবা অটো-দৌরাত্ম্যে ওই সব শহেরে কী হারে বাড়ছে দূষণের মাত্রা।
জেলা পরিবহণ দফতর এবং প্রশাসনের নির্বিকার মনোভাবের সুযোগ নিয়ে ওই শহরগুলিতে যথেচ্ছ ট্রাফিক নিয়ম ভেঙে, খুশি মতো রুট বদল করে, ভাড়া নিয়ে নিরন্তর জুলুম চালিয়ে এবং অবশ্যই যাত্রীদের কোথায় শাসিয়ে কোথাও বা চোখ রাঙিয়ে তাদের দাপট অব্যাহত রেখেছে অটো চালকদের একাংশ।
কোথায় কত

বৈধ অবৈধ
শিলিগুড়ি ১৪০০ ১৫০
মালদহ ৭০০
খড়্গপুর ৫০০ ৩০০
আসানসোল ১০০০ ১০০০
দূর্গাপুর ১০০০
শিলিগুড়ির সেবক রোডে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা তারই একটি। কিছু দিন আগের ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরে গ্রেফতারও করা হয় অটো চালককে। পুলিশ জানায়, বছর ষোলোর ওই কিশোরী প্রাইভেট টিউশনি নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। সেবক রোডের একটি শপিং মলের সামনে অটো থামিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানি করে ওই চালক। পুলিশ জানায়, মেয়েটির অভিযোগ ছিল, শ্লীলতাহানির পরে চালকের হুমকি, ‘যা পারিস করে নিস!’
পুজোর আগে বেপরোয়া এক অটোর ধাক্কায় মারা যায় এক স্কুল ছাত্রী। গত মাসেই ফাঁসিদেওয়ায় একটি পিক-আপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গিয়েছিলেন চালক-সহ তিন যাত্রী। অটো-যাত্রী বচসাও প্রায় রোজকার ব্যাপার। তা কখনও ভাড়া নিয়ে কখনও বা দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করে। ছবিটা একই রকম মালদহে। সেখানে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একটা অংশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অটো চালকদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাদানুবাদ নিত্য ব্যাপার। পুলিশ ও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।
দক্ষিণবঙ্গেও ছবিটার বদল ঘটেনি। দিন কয়েক আগে দুর্গাপুরের কবিগুরু মোড়ে বেপরোয়া এক অটোর ধাক্কায় গুরুতর জখম হন এক বাইক আরোহী। প্রতিবাদ করায় তাঁকে পাল্টা মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। শিল্প শহর আসানসোলে বৈধ কোনও অটোই নেই। তা সত্ত্বেও শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় অন্তত হাজার খানেক অটো। পারমিট বলতে পুরুলিয়া বা ঝাড়খণ্ডের জনপদে চালানোর অনুমতি। তা হলে এই শহরে কেন? কমিশনারেটের কাছে কোনও উত্তর মেলেনি। দিন কয়েক আগে তারই শিকার হলেন এক যুবক। পায়ের উপর দিয়ে অটো চলে যাওয়ার প্রায় পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন তিনি। মদ্যপ ওই অটো-চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কিন্তু সেটা পুলিশের এক ব্যতিক্রমী তৎপরতা বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পেশায় কলেজ শিক্ষক ফাল্গুনি মিত্রের প্রশ্ন, “সব জেনেও কমিশনারেট এলাকায় অটো চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা করেনি কেন পুলিশ?” দুর্গাপুরেও প্রায় হাজার খানেক অটো চলে। তবে সেখানে পরিবহণ দফতরের দাবি, সবগুলিরই বৈধ। এবং তারা চলে সিএনজি গ্যাসে। যদিও বাম ও ডান অটো-চালকদের ইউনিয়নের নেতারা জানান, সব অটোর পারমিট নেই। বেকার ছেলেদের রুজির উপায় বলে এ ব্যাপারে তারা বাধাও দিতে পারেন না।
তা বলে অভব্যতা? এর কোনও স্পষ্ট উত্তর অবশ্য নেতাদের কাছে মেলেনি। তবে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদ গার্গী বসু মল্লিক, “অটো চালকদের অধিকাংশই হাইপার টেনশনে ভোগেন। দূষণ-দীর্ণ রাস্তা, ত্রি-চক্রযান থেকে অবিরাম নির্গত তেলের গন্ধ, রুজির দৌড়--সব মিলিয়ে তাঁদের মধ্যে একটা হাইপার টেনশন কাজ করে। ভাল-ভদ্র ব্যবহার যে তাদের বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে সেটাই ভুলে যায় তারা।”
সমাজতত্ত্ববিদ রনবীর বসু বলেন, “অটো চালকদের একটা বড় অংশ আসেন নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। স্কুল-কলেজ ছুট সেই সব তরুণদের কাছে পরিশীলিত ভাষা আশা করা যায় না। তবে ব্যবহারে যে ঔদ্ধত্য লক্ষ করা যায় তার একটা বড় কারণ সহনশীলতার অভাব। রুজির দৌড়ে এরা পুলিশ থেকে সহ-অটো চালক সবাইকেই প্রতিপক্ষ ভাবে। অনেক সময়ে যাত্রীদেরও সে চোখেই দেখে তারা। দুর্ব্যবহার করে সে কারণেই।” তবে পুলিশ এবং ইউনিয়নগুলি উদ্যোগী হলে অটো চালকদের ব্যবহারে অনেকটাই বদল আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। অতঃপর, সেই বদলের মুখ চেয়েই অনন্ত অপেক্ষা?

সহপ্রতিবেদন: কৌশিক চৌধুরী, সুশান্ত বণিক, পীযূষ সাহা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.